বাংলাদেশ পরিস্থিতি জানে জাতিসংঘ, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছেঃ ব্রিফিংয়ে ডুজাররিক

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

বাংলাদেশ পরিস্থিতি জানে জাতিসংঘ। বাংলাদেশে যা ঘটছে, যে গণগ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ড আমরা দেখেছি- সে সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত স্পষ্ট ছিলাম। বুধবার জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁর মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করবে এবং তাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারে গ্যারান্টি দেবে কর্তৃপক্ষ। এই অধিকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের চুক্তিতে (কোভেন্যান্টস) নিহিত আছে। স্টিফেন ডুজাররিকের কাছে ওই সাংবাদিক জানতে চান- শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পরিত্যক্ত একটি রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ- যাদের কোনো সমর্থনই নেই, তারা স্যাবোটাজে জড়িয়েছে…? এ প্রশ্নের জবাবে স্টিফেন ডুজাররিক বলেন, আমি সরাসরি প্রশ্ন শুনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমি কোনো বক্তব্যে সন্তুষ্ট নই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমি জানি। আপনার প্রশ্ন কি? আমি যার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। এ সময় ডুজাররিকের মধ্যে বিরক্তির ছাপ ফুটে ওঠে। তার পাল্টা জবাব শুনে ওই সাংবাদিক আবার প্রশ্ন করেন- সোমবার বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের গ্রুপ উপস্থাপন করেছেন…প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের মতবিনিময়কালে আবেগঘন তথ্য দিয়েছেন।
এর প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষ থেকে কি কোনো পর্যবেক্ষণ আছে? জবাবে ডুজাররিক বলেন, আমি প্রশ্নের প্রথম অংশ বুঝতে পারিনি। সঙ্গে সঙ্গে ওই সাংবাদিক বলেন- বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যবসায়ী নেতারা অবহিত করেছেন যে, ছাত্র আন্দোলনকে পুজি করে পরিত্যক্ত একটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করছে। তার এ প্রশ্নের জবাবে ডুজাররিক বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটছে, যে গণগ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ড আমরা দেখেছি- সে সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত স্পষ্ট ছিলাম।
তিনি আরও বলেন, সমস্ত সহিংস কর্মকাণ্ডের তদন্ত হওয়া উচিত স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্যভাবে। এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত, যা হবে সংলাপের উপযোগী। খোলামেলাভাবে যদি আমি পিছনে ফিরে তাকাই তাহলে বিভিন্ন দেশে, বিশ্বের বিভিন্ন অংশে সম্প্রতি প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখেছি। তরুণরা সেখানে বিশ্বের অবস্থা, তাদের ভবিষ্যত, প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি তাদের হতাশা প্রকাশ করেছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিক্রিয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। এর একটি অংশ হলো সরকারের শাসন (গভর্ন্যান্স) ইস্যু। আমি মনে করি এর একটি অংশ হলো আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা যেভাবে অন্যায় (আনজাস্ট) করে যাচ্ছে, তার প্রভাব। তারা পরিস্থিতিকে এমন উপায়ে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়নি, যাতে তরুণরা আহত না হন। বিশ্বজুড়ে সব জায়গায়ই এমন কিছু আমরা প্রত্যক্ষ করছি। কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- যেখানেই প্রতিবাদ বিক্ষোভ হোক, জনগণকে গ্রেপ্তারের আতঙ্ক, আহত হওয়ার আতঙ্ক অথবা তারচেয়েও খারাপ কোনো অবস্থার আতঙ্ক ছাড়াই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভ করতে দেয়া উচিত।
এ পর্যায়ে অন্য একজন সাংবাদিক জানতে চান, আপনি জানেন একটি বিশেষ বাহিনীসহ নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে শিক্ষার্থীরা নিহত হয়েছেন…। জাতিসংঘের মুখপাত্র তার কাছে জানতে চান আপনার প্রশ্ন কি? জবাবে ওই সাংবাদিক বলেন- বাংলাদেশ যেহেতু দ্বিতীয় বৃহৎ শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশ, তাই নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের যাদেরকে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তাতে কি বাংলাদেশের ভূমিকার ওপর কোনো প্রভাব পড়বে?
এ প্রশ্নের জবাবে ডুজাররিক বলেন, দেখুন, আমি আপনাকে যা বলতে পারি তাহলো, অবশ্যই, যেমনটা আমি সবেমাত্র বলেছি- নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সরাসরি গুলি ব্যবহার সহ বাংলাদেশে সম্প্রতি যেসব ঘটনা ঘটেছে তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই উদ্বেগের কথা এই মঞ্চ থেকে যেমন প্রকাশ্য বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, একইভাবে ঢাকায় ও এখানে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে সরাসরি জানিয়ে দেয়া হয়েছে। শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকাকে আমরা যেমন সম্মান করি, তেমনি আমি আপনাকে বলতে পারি যে- জাতিসংঘ মিশনে যেসব সদস্যকে পাঠানো হয় তাদের বিষয়ে মানবাধিকারের রেকর্ড যাচাই (স্ক্রিনিং) করার নীতির জন্য প্রথমত দায়ী সদস্য দেশ। তাদেরকে নিশ্চিত করতে হয় যে, যেসব সদস্যকে (শান্তিরক্ষী মিশনে) মোতায়েনের জন্য মনোনীত করা হয় তারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বা মানবাধিকার বিষয়ক আইন লঙ্ঘন করেননি অথবা জাতিসংঘ থেকে তাকে কখনো ফেরত পাঠানো হয়নি। এ ইস্যুতে আমরা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্পষ্টতই যুক্ত রয়েছি। আমরা এটা নিশ্চিত করতে চাই যে, আমাদের মানবাধিকার বিষয়ক নীতির সব চাহিদা (রিকোয়ারমেন্ট) সবটা মেনে চলা হয়েছে।

Related posts

Leave a Comment