ইনসানে কামেল

হাদিয়া
– ডাঃ মৌলভী কাজী আবদুর রহমান

হাদিয়া ও ঘুষ এক নয়, এই দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য বিরাট। হাদিয়া দেয়ার নিয়ত্যের মধ্যে পার¯পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ ভালবাসা ছাড়া পার্থিব কোন স্বার্থ হাসিল বা কোনরূপ সাহায্য পাওয়ার আশা থাকে না। অপর দিকে ঘুষ দেয়ার উদ্দেশ্যে হচেছ কোন স্বার্থ হাসিল করা বা সাহায্য পাওয়া। সাধারণতঃ কর্তব্যরত কোন ব্যক্তির নিকট থেকে কাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিছু দেয়াকেই ঘুষের পর্যায়ে পরে। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে আছে- নবী করিম (সাঃ) আয়দ গোত্রের এক ব্যক্তিকে সাদাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে কাজে নিয়োজিত করেন। তার নাম ছিলো ইবন লুতবিয়্যা। তিনি ফিরে এসে বললেন- এগুলো আপনাদের এবং এগুলো আমাকে হাদিয়া স্বরূপ দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনে নবী করিম (সাঃ) ভাষণ দিতে গিয়ে আল্লাহর মহাÍ্য ও প্রশংসা বর্ণনা করে বললেন-
“আল্লাহ তায়ালা আমার উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন তা পালন করার জন্য আমি তোমাদের মধ্য থেকে কোন কোন লোককে নিয়োজিত করি। তাদের মধ্যে থেকে কেউ এসে বলে-“এগুলো আপনাদের এবং এগুলো আমাকে হাদিয়া স্বরূপ দেয়া হয়েছে। সে তার পিতা বা মাতার ঘরে বসে থাকেনি কেন, তখন দেখতে পেত, তাকে হাদিয়া দেয়া হয় কিনা? সে সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, এ ক্ষেত্রে কেউ যদি কিছু গ্রহণ করে, তবে সে তা তার ঘাড়ে বহন করে কেয়ামতের ময়দানে উপস্থিত হবে।”
ঘুষকে হাদিয়া বা অন্য কোন নামে আখ্যায়িত করলেও তা ঘুষ বলেই গণ্য হবে। হাদিয়া আদান প্রদানের মাধ্যমে আন্তরিকতা ও ভালবাসা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং পর¯পরের মধ্যে হাদিয়া আদান প্রদান করা একটি উত্তম রীতি। তবে এর মাধ্যমে দুনিয়ার কোন স্বার্থ লাভের আশা করা যাবে না। কেবল মাত্র পার¯পরিক স¤পর্ক উন্নয়নের জন্য হাদিয়া আদান প্রদান করা উচিত।
ভালবাসা ও আন্তরিকতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে আÍীয়- স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও অন্যান্যদের যে উপহার ও উপটৌকন আদান-প্রদান করা হয়- তাকে হাদিয়া বলা হয়। নবী করিম (সাঃ) বলেন ঃ-
“একে অন্যকে হাদিয়া দেবে, হাদিয়া অন্তরের কলুষ-কালিমা দূর করে। এক পড়শি অপর পড়শিকে হাদিয়া দিতে যেন অবহেলা না করে এবং কেউ যেন সামান্য মনে না করে যদিও তা এক টুকরু বকরীর ক্ষুরও হয়।”
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর সাহাবীদেরকে হাদিয়া দিতেন এবং সাহাবীগণও রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে হাদিয়া দিতেন।
কেউ হাদিয়া দিলে তার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। এতে পার¯পরিক স¤পর্ক মধুর হয়। হযরত জাবির (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “যাকে দান করা হয়েছে তার সামার্থ্য থাকলে সে যেন প্রতিদান দেয়, আর যারা তা গোপন করে সে তার প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।”
হাদিয়ার প্রতিদানে সমপরিমাণের জিনিস হতে হবে এমন কোন কথা নেই বরং নিজ ক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিদান দিতে চেষ্টা করা উচিত। স্বামী-স্ত্রী পর¯পরের মধ্যে হাদিয়া আদান প্রদান করা উত্তম কাজ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর সহধর্মিনীগণকে হাদিয়া দিতেন। প্রকৃতপক্ষে হাদিয়া দা¤পত্য জীবনে আন্তরিকতা বৃদ্ধির এক মূল্যবান উপাদান। এতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের স¤পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হয় এবং এতে মনের গ্লানি দূর হয়ে যায়।
কেউ হাদিয়া দিলে তা প্রত্যাখ্যান করা ঠিক নয়, কেননা তাতে হাদিয়া দাতার মনে কষ্ট হয় এবং পার¯পরিক স¤পর্ক তিক্ত হয়। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন- রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-
“যাকে সুগন্ধি দান করা হয়, সে যেন তা ফিরিয়ে না দেয়। কেননা এটি হালকা জিনিস অথচ সুগন্ধযুক্ত।”
হাদিয়া সামান্য হলেও তা ফিরিয়ে না দিয়ে সন্তুষ্ট চিত্তে গ্রহন করা উচিত। অনুরূপভাবে হাদিয়া ফিরিয়ে দেয়া শোভনীয় নয়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন- রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-
“যে দান করে তা প্রত্যাহার করে নেয় তার দৃষ্টান্ত এমন কুকুরের মত যে বমি করে পুনরায় তা গলধঃকরণ করে নেয়।”
নবী করিম (সাঃ)- এর জীবন থেকে হাদিয়ার ব্যাপারে যে দিক নির্দেশ পাওয়া যায় তা হলো-
১। হাদিয়া নিজ সমর্থ অনুযায়ী দেয়া উচিত। (এখানে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো দাতার আন্তরিকতা ও ভালবাসা, প্রদত্ত বস্তুর মূল্য নয়)
২। হাদিয়া যাই হোক না কেন তা কৃতজ্ঞতার সাথে গ্রহন করা উচিত।
৩। হাদিয়ার পরিবর্তে হাদিয়া দেয়ার চেষ্টা করা উচিত।
৪। হাদিয়া দেয়ার পর তা ফিরিয়ে নেয়া অশোভন।

(চলবে………..)

Related posts

Leave a Comment