ইনসানে কামেল

ব্যাংক, বীমা, এনজিও এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সুদ ও জুয়ার কার্যক্রম

– ডাঃ মৌলভী কাজী আবদুর রহমান

বিভিন্ন নামে বিভিন্ন উপলক্ষ্যে নতুন নতুন পন্থায় জুয়া খেলা বা সুদ ব্যবসা বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। ব্যাংক, জীবন বীমা ও এনজিওদের দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা প্রকারে মুসলমানদের মধ্যে ঈমান নষ্টকারী সুদ ও জুয়ার ব্যবসা করে যাচেছ। এটা স¤পূর্ণ শরীয়ত বিরোধী, এটা স¤পূর্ণ হারাম। এই ব্যবসায় লাভ দেখে এবং টাকার নিরাপত্তার বিধান আছে মনে করে অনেক মানুষ আজ ভীষণ ভাবে এই হারাম কাজে ঝুঁকে পড়ছে। আল্লাহর প্রচন্ড শা¯িতর কথা ভুলে গিয়ে দুনিয়ার লাভ দেখে সামান্য টাকার লোভে ঈমান রূপ অমূল্য রতœ হারিয়ে পথভ্রষ্ট মানুষ জাহান্নাম খরিদ করছে।
বাজি রাখা, কার্ড খেলা, তাস খেলা, দাবা খেলা, পাশা খেলা, গুটি খেলা ইত্যাদি সকল খেলাতেও জুয়ার নেশা বিদ্যমান। ঘর-বাড়ী, জমি-জমা, টাকা-পয়সা ইত্যাদি বাজিতে রেখে অত্যন্ত কৌশলে জুয়ারীগণ এই জুয়া খেলা পরিচালনা করছে। কত শত লোক যে ঐ জুয়ার শিকার হয়ে সর্বস্ব খুইয়ে পথে পথে ঘুরছে, কে তার খবর রাখে। শরীয়ত বিরোধী এ সব কাজকে অবশ্যই আমাদের প্রতিহত করা দরকার।
গ্রামীন ব্যাংক নামে বর্তমানে আরও একটি নতুন জুয়া বাংলাদেশের অস্থিমজ্জায় আক্রমণ করেছে। নতুন ফন্দিতে গ্রামীন ব্যাংক নামে এর আÍপ্রকাশ। এই ব্যাংক পর্দার বাইরের মা বোনদেরকে তো জয় করে নিয়েছেই পর্দার ভিতরে বিদুুুষিনী সরলা মা বোনদেরকেও নতুন ফন্দিতে আক্রমণ করে ফেলেছে। এইবার মা বোনদের ঈমান ও ইজ্জত হরণের পালা। অতি সু-কৌশলে জুয়ারীগণ টাকার বিনিময়ে খরিদ করে নিচেছ তাদের মন। পর্দার বাইরে কিছু সংখ্যক ধর্ম জ্ঞানহীন মেয়েলোককে তাদের দলে টেনে জুয়ার নেশায় পর্দার ভেতরে একটা আলোড়ন সৃষ্টি করে সংসারের অভাব অনটনের চিত্র তুলে ধরে, সন্তান সন্তুতি নিয়ে অনটন বিহীন সুখী জীবন পরিচালনার পথ দেখিয়ে তাদের কমজুরী ঈমানের উপর বদ্বীনি আবরণ দিয়ে ডেকে ফেলছে।
আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচেছ তারা। জয়ী হচেছ জুয়ারীর দল। দ্বীনি জ্ঞান হীন লোকেরা প্রলোভনে পরে লাভ দেখে আখেরাতের কথা ভুলে যাচেছ। শুধু তাই নয়, ভদ্র পরিবারে ও স্বামী-স্ত্রীর সুখের বন্ধনে ফাটল সৃষ্টি করে দিয়েছে এই হারাম ব্যবসায়ী জুয়ারীর দল। পর্দানশীন ভালো ঘরের মেয়েরাও তাদের প্ররোচনায় জুয়ার নেশা পান করে পর্দা ছেড়ে আল্লাহর অসন্তুষ্টির ভয় না করে, জাহান্নামের কঠিন শাস্তিকে উপেক্ষা করে, নিজেদের অবগুন্ঠন খুলে শয়তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ঘর হতে বের হয়ে তাদের জুয়া খেলার মেম্বার হচেছ। নারী পুরুষ একত্রে বসছে খোলামেলা আলাপ আলোচনায় করছে।
অধিকার আদায় এবং ভাগ্য উন্নয়নের নামে তারা আজ যা করছে নিঃসন্দেহে এ সমাজ ও ইসলামী আকিদাকে ধ্বংস করার পথে এগিয়ে যাচেছ। এ হাতিয়ারের বিরুদ্ধে আমাদের জ্বেহাদ করা দরকার। কেননা, শুধুমাত্র নিজে ঈমানদার হয়ে বেঁচে থাকলেই চলবে না অন্যকেও ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকার পথ দেখাতে হবে। আর এটাই একজন ঈমানদারের ঈমানী দায়িত্ব।

নেশাপান এবং এ সম্পর্কে মাসআলা

মহান আল্লাহ মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। আর তার জন্য দিয়েছেন সুন্দর জীবন যাপনের জন্য যাবতীয় উপায় উপকরণ এবং নির্দেশনা। মানুষের জন্য যা কল্যাণকর, পবিত্র, উত্তম ও উপাদেয় তা তিনি হালাল করে দিয়েছেন। আর যা অপবিত্র অনুপাদেয় এবং অকল্যাণকর তা হারাম বা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।
গ্রহণ ও বর্জন সম্বন্ধে আল্লাহ ও রাসুলে পাকের সুনির্দিষ্ট বিধি নিষেধ থাকা সত্ত্বেও কিছু লোক সর্বনাশা বর্জনীয় জিনিসের ফাঁদে পা দিয়ে নিজের পরিবার ও সমাজের সর্বনাশ করে যাচেছ। মারাÍক বদভ্যাস গড়ে তুলেছে। ধুমপান ও মাদকাসক্তি এক ধরণের বদভ্যাস- যা হারাম। মহানবী (সাঃ) মদের সাথে স¤পর্ক রাখে এমন দশ ব্যক্তির ওপর লা’নত করেছেন-
১। যে নির্যাস বের করে ২। প্রস্তুতকারী ৩। পানকারী (ব্যবহার কারী) ৪। যে পান করায় ৫। আমদানীকারক ৬। যার জন্য আমদানী করা হয় ৭। বিক্রেতা ৮। ক্রেতা ৯। সরবরাহকারী ১০। লভ্যাংশ ভোগকারী । (তিরমিযি)

আল্লাহ পাক মোমেনগণের প্রতি নির্দেশ দিয়ে বলেছেন-
“অবশ্যই মদ, জুয়া, মূর্তিপূজা, লটারী অপবিত্র ও শয়তানের কাজ। নিশ্চয়ই তা হতে তোমারা দূরে থাকবে। তা হলে তোমরা মুক্তি লাভ করবে।” (সুরা আল-মায়ীদাহ , ৯০)

মহানবী (সাঃ) এর ভাষায়-
“কুল্লু মোসকেরিন খামরু ওয়া কুল্লু খামরিন হারামুন- নেশা সৃষ্টিকারী যে কোন দ্রব্যই মদ। যাবতীয় নেশার বস্তু হারাম।” (মুসলিম)
যা মানুষকে অপ্রকৃতিস্থ করে বা স্বাভাবিক বিবেক বুদ্ধি লোপ করে দেয় সেটাই নেশা। নেশা মানুষকে কখনই সত্যিকার সুখ দিতে পারে না। বরং ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়। মাদকদ্রব্য কি তার পরিচয় দিতে গিয়ে মহানবী (সাঃ)বলেন-
-“মাদক দ্রব্য তা-ই, যা জ্ঞান বুদ্ধি লোপ করে দেয়।”

যে কোন দ্রব্য যা নেশা সৃষ্টি করে সুস্থ মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটায় এবং জ্ঞান ও স্মৃতি শক্তি লোপ করে দেয় ।
এই নেশা মানুষকে আল্লাহর রাস্তা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশাধিকার পাবে না। মহানবী (সাঃ) বলেন-
– “মাদকাসক্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” এ ব্যাপারে আরও কিছু মাসআলা নিুে দেয়া হলো-

মাসআলা:-
নেশা হারাম। সকল প্রকার মদ, শরাব, তাড়ি ইত্যাদি নাপাক এবং হারাম। এ সব ঔষধ রূপে ব্যবহার করাও জায়েজ নয়। এমনকি যে সব ঔষধের মধ্যে শারাব বা তাড়ি মিশ্রিত আছে তা খাওয়া, পান করা বা মালিশ করা হারাম। শারাব বা তাড়ি ব্যতীত যত প্রকার নেশাদার বস্তু আছে (যেমন- আফিম, জাফরাণ, ভাঙ্গ, তামাক ইত্যাদি) তা যদি ডাক্তারের দ্বারা ঔষধ হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর এত কম পরিমাণে ব্যবহার করা হয় যাতে, আদৌ নেশা না হয় তবে তা জায়েজ আছে এবং ঐরূপ নেশার জিনিসের তৈরী ঔষধের মালিশ লাগানও জায়েজ। তবে এগুলো নেশা পরিমাণ খাওয়া বা ব্যবহার করা হারাম। তাড়ি বা শারাবের অন্য কিছু মিশালে যদি সিরকা হয় তাও খাওয়া জায়েজ আছে। তবে শিশুদের কান্না থামাবার জন্য বা ঘুম পাড়িয়ে রাখার জন্য আফিম খায়ানো সস্পূর্ণ হারাম।
মাদকাসক্তি মানবদেহে মারাত্মক ক্ষতি করে । এতে হজম শক্তি নষ্ট হয়, দেহ অপুষ্টি রোগে আক্রান্ত হয়,। কফ, কাশি, যক্ষা সব মারাÍক রোগের সৃষ্টি করে। এর প্রতিক্রিয়া উত্তরাধিকার সূত্রে সন্তানের উপর পড়লে সন্তান দুর্বল ও নির্বোধ হয়। লিভার ও কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
প্রখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে সীনা বলেছেন- “পৃথিবীর যত ধুঁলি, ধোঁয়া ও গ্যাস যদি মানুষের ফুসফুসে না ঢুকত, তা হলে মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে সুস্থ অবস্থায় জীবিত থাকতো।”
বিশেষজ্ঞ মহলের মতে- “এক একটা জ্বলন্ত সিগারেট থেকে কম করে হলেও চার হাজার বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়।”
কাজেই একজন মানুষকে আশরাফূল মাখলুকাত হিসাবে বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই এই মারাÍক কু-অভ্যাস থেকে দূরে থাকতে হবে।
রাসুলে পাক (সাঃ) অন্য এক জায়গায় বলেছেন-
-“মাদক দ্রব্য সকল অপকর্ম ও অশ্লীলতার মূল।”

মাদক শক্তি নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টি করে। মানুষকে চিত্তবিভ্রম, অস্থির ও উচছৃঙখল করে তোলে। ব্যভিচার, নরহত্যা, রাহাজানি ও যান-বাহনের দুর্ঘটনা ইত্যাদির বেশীর ভাগই মাদক ব্যবহারের কারণে হচেছ বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
দেশের আশা ভরসা ও মূল্যবান স¤পদ যুবশক্তি ধ্বংস হওয়ার মোক্ষম হাতিয়ার এই মাদকাশক্তি।
দেশের বর্তমান এ অবস্থা দূর করে শৃঙখলা ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায় মুসলিম উম্মার এক হওয়া এবং আল্লাহর নির্দেশে এক রশিতে সকলকে মজবুত করে ধরা। দেশে কোরআন ও সুন্না মোতাবেক আইন কানুন প্রচলন করা। তা না হওয়া পর্যন্ত মানুষ কখনও এই অশান্তি থেকে মুক্তি পাবে না। তাই আমাদের বিশেষ করে উম্মতে মোহাম্মদীর কর্তব্য- ধর্ম বিরোধী শক্তি, মোনাফেক এবং এসব অপকর্মে উংসাহ দাতাদের বিরুদ্ধে জ্বেহাদে ঝাঁপিয়ে পড়া।

(চলেব………….)

Related posts

Leave a Comment