সংলাপে গুরুত্ব পাবে সংস্কার, পোশাকশিল্প ও আইনশৃঙ্খলা

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স দুই মাস হতে চলেছে। এর মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই দফায় সংলাপ করেছে সরকার। আজ তৃতীয়বারের মতো দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সংলাপে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পোশাকশিল্পে অস্থিরতা এবং সংস্কার কমিশনের কার্যক্রমের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে আমন্ত্রিত দলগুলো সূত্রে জানা গেছে।
আজ বেলা আড়াইটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে তৃতীয় ধাপের সংলাপ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। সংলাপে বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ইসলামী আন্দোলনসহ আরও বেশ কয়েকটি দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
বিএনপিসহ সংলাপে অংশ নিতে যাওয়া দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, এবারের সংলাপ হবে খুবই সংক্ষিপ্ত। কী বিষয়ে আলোচনা হবে, সে বিষয়ে লিখিত কিছু জানানো না হলেও মৌখিকভাবে আলোচনার বিষয়বস্তু জানানো হয়েছে। এগুলো হচ্ছে—আসন্ন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পোশাকশিল্পে অস্থিরতা এবং সংস্কার কমিশন। এসব বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি লিখিত  আকারেও সংক্ষিপ্ত পরামর্শ দিতে বলা হয়েছে দলগুলোকে।
যদিও সংক্ষিপ্ত সময়ে এর বাইরে সরকারের সঙ্গে আরও কিছু বিষয়ে কাজের কথা সারতে চায় রাজনৈতিক দলগুলো; যার মধ্যে মোটাদাগে থাকবে নির্বাচন এবং এ নিয়ে সরকারের চিন্তা। একই সঙ্গে দুই মাস বয়সী সরকারের কর্মকাণ্ডের বিষয়েও নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরার কথাও বলেছেন কোনো কোনো দলের নেতারা।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দুই দফায় বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই দুই বৈঠকে নির্বাচন, সংস্কারসহ নানা বিষয়ে মতবিনিময় করেছে দলটি। জরুরি সংস্কার যা আছে, সেটা সম্পন্ন করে সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে, এমনটাই চাওয়া দলটির। এই চাওয়া পূরণের পথে সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড ইতিমধ্যে খানিকটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলেছে বিএনপির নেতাদের। এই অবস্থায় এবারের সংলাপে সংস্কার ও নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে সরকারকে বলতে চান তাঁরা। এসব বিষয়ে সরকারের মনোভাবটাও তাঁরা জানতে চান।
আলাপকালে নির্বাচনের বিষয়টিই বিএনপির কাছে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠাই ছিল ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনগণ তাদের পছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। সরকারের সঙ্গে আলাপকালে আমাদের দিক থেকে এ বিষয়টিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।’
সরকারের মনোভাব বুঝতে চাওয়ার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপির সমমনারাও। ছয়টি দল নিয়ে গঠিত গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে যাত্রা শুরু করেছে, সেই যাত্রা কোথায় গিয়ে শেষ হবে, সেটা আমরা বুঝতে চাই। নির্বাচন নিয়ে আসলে সরকার কী ভাবছে, সেটা আমরা জানতে চাই। এর বাইরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ারও পরামর্শ থাকবে আমাদের পক্ষ থেকে।’
মঞ্চের আরেক নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাও বলেন, ‘তারা (সরকার) কী করতে চায়, তা আমরা জানতে চাইব।’ তিনি বলেন, ‘সংস্কার অনেক লম্বা বিষয়। এ বিষয়ে আলোচনা যাতে অব্যাহত থাকে, সেই বিষয়ে বলব।’
সংলাপে অংশ নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবের পাশাপাশি সরকারের বিষয়েও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরার কথা বলেছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।জানতে চাইলে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চলমান সংস্কার নিয়ে আমাদের নিজস্ব কিছু প্রস্তাব আছে। সেই প্রস্তাবগুলো আমরা তুলে ধরব। একই সঙ্গে গত দুই মাসে সরকারকে নিয়ে আমরা যা পর্যবেক্ষণ করেছি, সেই পর্যবেক্ষণগুলো নিয়ে কথা বলব। এ ছাড়া তাদের কথা শোনার পাশাপাশি সরকারকে আমরা আমাদের তরফ থেকে পরামর্শ দেব।’
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য, শ্রমিক হত্যা, জাতীয় মজুরি, দখলদারত্ব, জনজীবনে শান্তি, নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কারের আলোচনা শুরু করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা নিয়ে আমরা কথা বলব।’
ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতন হলেও এখনো দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। তা বন্ধ করতে সরকারকে গুরুত্ব দিতে বলব। আমরা সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনপদ্ধতির প্রস্তাব দেব, যাতে সবাইকে নিয়ে দেশ চালাতে পারি, এক দল যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে। বিগত দিনে আমরা দেখেছি, এক দল ক্ষমতায় থাকলে স্বৈরাচার হয়ে যায়। আর প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনসহ প্রয়োজনীয় সবগুলো সংস্কারের পরে আমরা নির্বাচনে প্রস্তাব দেব।’
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম আরও বাড়ানোর কথা বলব। কারণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উন্নতিতে তারা তেমন পদক্ষেপ নিতে পারেনি, পুলিশ-প্রশাসনকে সক্রিয় করতে পারেনি। সে উদ্যোগটা কীভাবে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে কথা বলব। আর এগুলো করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করার দরকার। তাদের মতামত ও পরামর্শ নেওয়া দরকার। এটা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা দরকার। একই সঙ্গে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হবে।’
এর আগে সবশেষ গত ৩১ আগস্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা। আগের দুই বৈঠকের মতো এবারও আওয়ামী লীগসহ তাদের জোটের কোনো দল সংলাপের আমন্ত্রণ পায়নি বলে জানা গেছে।

Related posts

Leave a Comment