মেহেরপুর প্রতিনিধি:
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সীমান্তবর্তী কাজীপুর মাথাভাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ‘শিক্ষায় জাতির মেরুদন্ড ’ নারী শিক্ষাকে পিছিয়ে রেখে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব নয় ’এই মূল মন্ত্রে এলাকায় নারী শিক্ষার আলো জ্বালানোর লক্ষ্যে ২০০০ ইং সালে মনোরম পরিবেশে মাথাভাঙ্গা নদীর নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত করা হয়। দক্ষ শিক্ষক শিক্ষিকার অক্লান্ত পরিশ্রমে গ্রামীণ জনপদে নারী শিক্ষায় বিদ্যালয়টি অগ্রনী ভূমিকা পালন করে আসছে।
কাজীপুর মাথাভাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩ শতাধিক ছাত্রী শিক্ষালাভ করছে। বিদালয়টি ২০১০ সালৈ নিম্ম মাধ্যমিক ও ২০২২ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্তি লাভ করে। অধিক সংখ্যক শ্ক্ষিার্থীদের শ্রেনি কক্ষে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় ইতোমধ্যেই স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকমন্ডলীদের আন্তরিকতায় নিজেদের অর্থায়নে আধাপাকা টিনসেড নির্মাণ করে কোনরকমে পাঠদান করানো হচ্ছে। টিনের ছাউনি দেয়া ছোট ছোট কক্ষে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে ঠাসাঠাসি করে বসিয়ে পাঠদান করানো খুবই কষ্টকর হচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় বিদ্যালয়টির শিক্ষার গুনগত মানোন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেনসহ শিক্ষকমন্ডলী। নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে শিক্ষা বান্ধব এই অন্তবর্তীকালীন সরকার নানা উন্নয়নমূখী কাজ করে যাচ্ছেন। ২২ বছর পর বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হলেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন অদ্যাবধি হয়নি।
প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেনসহ শিক্ষকমন্ডলীর আন্তরিককতায় নিজস্ব অর্থায়নে ভাঙ্গা চোরা আধাপাকা টিনসেডের একটি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করে কোন রকমে পাঠদান করানো হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষ ছাড়াও রয়েছে বেঞ্চ ও চেয়ার টেবিলের সমস্যা। বিদ্যালয়ের টিনসেডের কক্ষে জানালা না থাকায় পর্যাপ্ত আলো-বাতাস ঢুকতে পারে না।ফলে প্রচন্ড গরমে শিক্ষার্থীরা স্বাচ্ছন্দে ক্লাস করতে পারে না। বেশীরভাগ কক্ষে ছাউনির টিন জরাজীর্ণ ছিদ্র হয়ে গেছে। বর্ষাকালে একটু বৃষ্টি হলেই ক্লাস নেয়া সম্ভব হয় না।অনেক সময় আকাশে মেঘ দেখলেই স্কুল ছুটি দেয়া হয়। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য তেমন প্রশস্ত কমনরুম নেই। বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা জানায়, আমাদের জন্য তেমন বিশ্রামাগার নেই। ইনডোর গেম খেলার জন্য ক্যারাম বোর্ড, লুডু, দাবা বোর্ড তেমন উপকরন বা স্পেস নাই। এমনকি মেয়েদের জন্য সুন্দর ওয়াশ রুম নেই।
বিদ্যালয়ে সুদক্ষ, সুযোগ্য ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রধান শিক্ষকের আদর্শে অনুপ্রাণিত ১৬ জন শিক্ষকমনডলী ও কর্মচারীদের বসার তেমন কোন অফিস কক্ষ নেই। তবুও একঝাঁক সুদক্ষ শিক্ষকদের দায়িত্ববোধ ও আন্তরিকতায় বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী ও স্থানীয় অভিভাবকদের মন কেড়েছে। শিক্ষার পরিবেশ ও পরীক্ষার ফলাফলে সন্তুষ্ট হয়ে আশে পাশের গ্রাম গুলো থেকে শিক্ষার্থীরা কাজীপুর মাথাভাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ভর্র্তি হচ্ছে। শিক্ষা ছাড়াও খেলাধুলা , বিভিন্ন কালচারাল প্রতিযোগিতা যেমন রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাংকন, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতাতেও সাফল্য অর্জন করেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকল জাতীয় দিবসগুলো যথাযথঃ মর্যাদায় পালন করা হয়। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে কাজীপুর মাথাভাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়টি ঈর্ষান্বিত সাফল্য অর্জন করেছে। যেন ভাঙ্গা ঘরে চাঁদের আল্ োছড়িয়ে পড়েছে। উক্ত বিদ্যালয় থেকে অধ্যয়ন করে বিভিন্ন বিশ্ব বিদ্যালয়ে অনেকেই উচ্চ শিক্ষা লাভ করছে।অনেকেই ভাল ভাল জায়গায় অধিষ্ঠিত হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে বিদ্যালয়ের নানা সমস্যা চোখে পড়েছে। অসংখ্য ছাত্রীদের শিক্ষাক্ষেত্রে শ্রেনি কক্ষ সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন, ফাতিমা জান্নাত, সুবর্ণা, জুলি, কামিনী, ফারহানা, সুমাইয়া জানিয়েছে , আমরা ক্লাসে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ঠাসাঠাসিভাবে বসে ক্লাস করে থাকি। এক বেঞ্চে ৫/৬ জন করে বসতে হয়। গরমে কষ্ট হয়। শিক্ষক স্বাচ্ছন্দে পাঠদান করাতে পারেন না। আমরা একটি সুন্দর একাডেমিক ৪তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং চাই। এমনটাই দাবি সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের।
কথা বলে জানা গেল স্কুলের সমস্যা সম্ভাবনার কথা। বিদ্যালয়ে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম। দক্ষ শিক্ষক মন্ডলী দ্বারা প্রজেকক্টরের সাহায্যে সহজবোধ্য হাতে কলমে শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে। অনেক বাঁধা বিপত্তি কাটিয়ে আজ কাজীপুর মাথাভাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়টি একটি প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাঙ্গন হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। শিক্ষা বান্ধব সরকারের সদিচ্ছায় স্কুলটি এমপিও ভুক্ত হয়েছে। স্কুল পরিচালনা কমিটিসহ গ্রামের গণমান্য ব্যক্তিদের দিক নির্দেশনা ও সহযোগিতায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা মহোদয়ের মহানূভবতা আমাদের অনুপ্রাণিত করবে। আমরা সেই প্রত্যাশা করি। একটি বহুতল বিশ্ষিট একাডেমিক ভবন নির্মাণকল্পে ইতোমধ্যে উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন নিবেদন করা হয়েছে।
এব্যাপারে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ গড়তে এবং শ্রেণি সংকট সমস্যা সমাধানকল্পে অবিলম্বে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার,উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, শিক্ষা প্রকৌশলী , জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তথা আমাদের আপনজন অন্তর্বতীকলীন সরকারের মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টার মহোদয়ের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেনসহ শিক্ষকমন্ডলী ও স্থানীয় সচেতনমহল এবং ছাত্রীবৃন্দ।