সাবেক মন্ত্রীসহ ১৩ আসামি ট্রাইব্যুনাল থেকে কারাগারে

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন নির্মূলে জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ আসামাকি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজিরের পর ফের কারাগারে নেয়া হয়েছে।

আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলের সামনে আজ তাদের হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলের অপর দুই সদস্য হলেন-বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

জুলাই-আগষ্ট গনহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কারাগার থেকে আজ কড়া নিরাপত্তায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, ড. দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী, শাজাহান খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলমকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। আজ সাবেক মন্ত্রী, উপদেষ্টাসহ ১৪ জনকে হাজিরে গত ২৭ অক্টোবর আদেশ দেন  ট্রাইব্যুনাল।

এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক অন্য মামলায় রিমান্ডে থাকায় আজ তাকে হাজির করা সম্ভব হয়নি। তাদের সকলকে ট্রাইব্যুনালে আনা অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং পরবর্তী ধার্য তারিখে আসামিদের হাজিরের আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

আজ বেলা সাড়ে ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এজলাশ কক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের শুনানি শেষ হবার পর আসামি পক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু শুনানি করতে যান তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও ফারুক খানের পক্ষে। এ সময় শুনানি করার আগে বিচারকদের কাছে শুনানি করতে যে আবেদন দেয়া হয়, সেটা না থাকায় চিফ প্রসিকিউটর বিষয়টি  আদালতের নজরে আনেন।

তখন আবেদন না আনার বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী ক্ষমা চান। আদালত আইনজীবীকে বলেন, আবেদন ছাড়া কি শুনানি করা সম্ভব? জবাবে আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, আদালত চাইলে সম্ভব, যদি অনুমতি দেয়া হয়, আমি শুনানি করতে চাই। এ সময় আদালত তাকে শুনানি করতে নিষেধ করেন। যথাযত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আসতে আদেশ দেন।

সকালে ১১টায় আসামিদের এজলাশের মধ্যে কাচের দেয়ালে ঘেরা একটি অংশে বসতে দেয়া হয়। সেখানে ১২টি চেয়ার থাকায় ভেতরে ১২ জন বসেন। শুধু দীপু মনি একা একটি চেয়ারে বাইরে বসেন।

সকাল ১১টা ১০ মিনিটে প্রথমে শুনানি শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। ছাত্র-জনতাকে হত্যা, নির্বাচনের নামে প্রহসন, বিডিআর ট্রাজেডির কারণ, শাপলা চত্বরে হেফাজতে ওপর গণহত্যা, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও আয়না ঘর তৈরি, ১ হাজার ১১৯ জনকে বিচার বহির্ভূত হত্যা, আওয়ামী লীগের শাসনামলে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি, দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার, শেয়ার বাজার লুট, রাজাকার ট্যাগ দিয়ে দেশের মানুষকে পৃথক করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী দিয়ে ছাত্র জনতার ওপর হামলা, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে মারণাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে হত্যা করার নির্দেশ দেবার কারণে সুপিরিয়র হিসেবে শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রীদের বিচার করার কথা আদালতের সামনে তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

পাশাপাশি জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালীন ইন্টারনেট বন্ধ করায় বিষয়টি আদালতের সামনে উল্লেখ করেন তিনি। এ ছাড়াও টকশোতে সাবেক বিচারপতি মানিকের দেয়া বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর।

একই সঙ্গে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে কীভাবে পুলিশ সেগুলো ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল, সে বিষয়ও তিনি উল্লেখ করেন। এ সময় শহিদ নাফিসকে গুলি করে হত্যার পর পুলিশ রিকশাচালককে নাফিসের লাশ ম্যানহোলে ফেলে দেয়ার কথা বলেছে, সেটিও আদালতকে জানানো হয়। যাত্রাবাড়ীতে এক বন্ধুর সামনে আরেক বন্ধুকে পুলিশ গুলি করে, সেটাও উল্লেখ করা হয়।

বিচারকাজ পুরোপুরি শুরু করার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের কাছে সব প্রমাণ জমা দেয়ার জন্য দুই মাসের সময় চান। তাকে এক মাসের সময় দেয় ট্রাইব্যুনাল। এক মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত বাকি আসামিদের হাজিরের নির্দেশ দেন। শুনানি শেষে আগামী ১৭ ডিসেম্বর ‘সাবমিশন অব ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট’ দেয়ার আদেশ দেয়া হয়।

আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শেষ হলে আসামিপক্ষের আইনজীবী ও আত্মীয় স্বজনদের এজলাশ কক্ষে দেখা করার জন্য কিছু সময়ের অনুমতি দেয়া হয়। পরে বেলা দেড়টায় প্রিজন ভ্যানে করে আসামিদের আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

এর মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনের পতন হয়।  গত জুলাই-আগস্টে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামীলীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গনহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে। জাজ্বল্যমান এ অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে।বাসস

Related posts

Leave a Comment