গাংনীতে সারের কৃত্রিম সংকট, সরকারী ডিলারদের বিরুদ্ধে কালো বাজারে বেশি দামে সার বিক্রয়ের অভিযোগ

মেহেরপুর প্রতিনিধি:
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কালো বাজারে বেশি
দামে সার বিক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে সরকারী বিসিআইসি ডিলারদের বিরুদ্ধে।
সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে আওয়ামীলীগ পন্থী ডিলাররা সারের কৃত্রিম সংকট
দেখিয়ে মোটা অংকের মুনাফা হাসিল করছেন।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, দীর্ঘ ১৬ বছর এক টানা  আওয়ামীলীগ  ক্ষমতায়  থাকার কারনে
তাদের অনুগত বিসিআইসি ডিলাররা সারের কৃত্রিম সংকট তৈরী করে কালো বাজারে বেশি দামে
সার বিক্রয় করছেন।
প্রকৃত কৃষকদের সার না  দিয়ে চুরি করে বাহিরে বিক্রয় করছেন। অবিলম্বে আওয়ামীলীগ পন্থী
ডিলারদের  বাতিল করে নিরপেক্ষ ডিলার নিয়োগের দাবী করেছেন  কৃষকরা।
স্বৈরাচার সরকার পতনের পর থেকে আওয়ামীলীগের  অনুগত  ডিলারগণ  সারের কৃত্রিম
সংকট আছে বলে কৃষকদের  হয়রানি করছেন।অতি তাড়াতাড়ি ডিলার  সংস্কার না করলে
বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
সরকারিভাবে গাংনী উপজেলায় কোন সার  সংকট না থাকলেও চাষিদের  সাথে প্রতারণা শুরু
করেছেন এখানকার ডিলারগণ।
স্থানীয়রা জানান, গাংনী শহরের সার ব্যবসায়ী  সরকারী ডিলার আওয়ামীলীগ নেতা তরিকুল
ইসলামের দোকানে সার ক্রয় করতে গেলে তিনি বলেন,সার সংকট আছে চাষীদের সার না দিয়ে
গোপনে রাতের বেলায় ১ হাজার  ৫০ টাকার সার তিনি ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রয় করছেন।
জানা গেছে গাংনী উপজেলার বিভিন্ন  গ্রাম অঞ্চলের খুচরা ব্যবসায়ীদের মাঝে  গোপনে বেশি
দামে সার  বিক্রয় করছেন এই তরিকুল ইসলাম। অতি শীঘ্রই এই স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ  দলের
সদস্য ডিলার তরিকুল ইসলামের ডিলার  বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
এছাড়াও জেলা কৃষকলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলামসাহ তার নিজের নামে ৪ টি
ডিলারনিয়োগ নিয়ে গাংনী উপজেলার চাষীদের মাঝে সার বিক্রয় না করে বেশি দামে
অন্যজেলার  ব্যবসায়ীদের  সাথে চুক্তি করে বেশি দামে সার বিক্রয় করে আসছেন। অতি শীঘ্রই
এই দালালের ডিলারের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।

এই সকল কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছেন গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন।
তিনি ডিলারদের নিকট থেকে মোটা অংকের উৎকোষ গ্রহণ করে চাষীদের সাথে  প্রতারণা শুরু
করেছেন।
স্থানীরা জানান, গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে রাসায়নিক সার,
পারিবারিক পুষ্টি বাগানের অর্থ, কৃষি খামার যন্ত্রপাতি (মেশিনারীজ) বিক্রয়, বিভিন্ন কৃষি
প্রনোদনাসহ প্রদর্শনী প্লটের কেলেংকারী ও নানা অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার
বিরুদ্ধে  কৃষি কর্মকর্তার দূর্নীতি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী  জানিয়েছেন সাধারন কৃষক
সহ সচেতন মহল।
গাংনী উপজেলা  কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন ২০২৩ সালের শুরুতে গাংনীতে যোগদানের পর
থেকে অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জিম্মি করে দূর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড়
গড়েছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জেলা কৃষি কর্মকর্তা  বিজয় কৃষ্ণ
হালদারকে ম্যানেজ করে অনিয়ম  দূর্নীতি করছেন।
সার নীতিমালা ২০০৯ লঙ্ঘন করে লাইসেন্স ও কর্তৃত্বপত্র বিহীন যত্রতত্র খোলা বাজারে
নিম্নমানের সার ও কিটনাশক বিক্রিতে সহায়তা করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ২০২৩/২৪ অর্থ বছরের
ধানখোলা, গাংনী পৌরসভা, কাজিপুর রাইপুরসহ অন্যন্য প্রনোদনার বিভিন্ন সার বীজ না দিয়ে
ভুয়া তালিকা তৈরি কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
চাষীরা জানান,প্রায় প্রতিটা ডিলার নামমাত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে ছোট একটি গোডাউন ভাড়ায়
দেখালেও ব্যবসা পরিচালনা করেন গাংনী কিংবা বামন্দী বাজারে।
ছামিদুল ইসলাম নামের একব্যক্তি বলেন, ষোলটাকা ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার গাংনী
হাসপাতাল বাজারে ব্যবসা করে থাকে ইউনিয়নে তার কোন সারের ব্যবসা নেই।
এক কেজি বাংলাদেশ টিএসপিতে সরকার ভর্তূকি দেয় কমপক্ষে ১০০ টাকা যা বাংলাদেশের
জনগনের দেওয়া ট্যাক্সের টাকায়।
সেখানে একজন  দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার জন্য গাংনী উপজেলাতে বরাদ্দকৃত বাংলাদেশ টি এস
পির ৯০ শতাংশ জেলার বাইরে বিক্রয় করতে সক্ষম হয় সংশ্লিষ্ট ডিলার গন।
বাকি ১০ শতাংশ গাংনীতে আসলেও তা বিক্রয় করা হয় ১৯০০ থেকে ২০০০ টাকা করে যার
কোন ভাউচার দেওয়া হয়না।
বানিয়াপুকুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আকবর জানান, ইউনিয়নে কোন সার ডিলার না
থাকায় ১০ কেজি সারের প্রয়োজন হলেও বাজারে সার কিনতে যেতে হয়।

দিনের কাজ বন্ধ করে ভাড়া দিয়ে বাজারে সরকারী ডিলার  শহিদুল ইসলামের দোকানে সার
ক্রয় করতে গেলে দেখা যায়  দিনের বেশিরভাগ  সময়  দোকান বন্ধ থাকে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে আওয়ামীলীগ নেতা শহিদুল ইসলামের নিজের অধিনে ৪ টি সারের
লাইসেন্স বিদ্যমান থাকলেও সেই সকল লাইসেন্স এর নামে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (বিক্রয় কেন্দ্র)
নেই।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুসারে তিনি একটি লাইসেন্সে ২০২৩ সালে জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর মাস
পর্যন্ত মোট বরাদ্দ পেয়েছেন ইউরিয়া ১২৩৬ মেঃটঃ টিএসপি বাংলা (বিসিআইসি) bbvn মেঃটঃ,
তিউনেশিয়া ও মরক্কো টিএসপি পেয়েছেন  ১৩৫.০৫  মেঃটঃ, বাংলা ডিএপি  ৯০.২০  মেঃটঃ, চায়না
সহ অন্যন্য ডিএপি  ২৬৯.৩৫  মেঃটঃ এম ও পি  ৭১.৮৫  মেঃটঃ। এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারী
থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ইউরিয়া ৯৯০মেঃটঃ টিএসপি বাংলা (বিসিআইসি)  ৫৮.৯০  মেঃটঃ,
তিউনেশিয়া ও মরক্কো টিএসপি পেয়েছেন  ৯০.১৫  মেঃটঃ, বাংলা ডিএপি  ২৬.৩৫  মেঃটঃ, চায়না
সহ অন্যন্য ডিএপি  ৫৯.৪০  মেঃটঃ এম ও পি  ১০৪.৮০  মেঃটঃ।
এই সকল বরাদ্দ কৃত সার গাংনীতে না এনে বাহিরে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে ।
অন্যজেলায় গোপনে বেশি দামে সার বিক্রয় করতে সহযোগিতা করেছেন গাংনী উপজেলা কৃষি
অফিসার ইমরান হোসেন।
এঘটনায় জেলা কৃষি কর্মকর্তা  বিজয় কৃষ্ণ হালদারের কাছে একাধিক বার অভিযোগ করেও
কোন সুরাহা পায়নি চাষীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক  একজন বিসিআইসি সার ডিলার জানান, ডিডি বিজয় কৃষ্ণ হালদার
ডিলারদের কাছ থেকে মাসিক মাসুয়ারা নিয়ে থাকেন।
অনিয়মের ঘটনায় সাব ডিলাররা একাধিকবার সার না পাওয়ার অভিযোগ করলেও কোন
সুবিধা পাননি।
ভুক্তভূগি কৃষকেরা জানান, কৃত্রিম রাসায়নিক সার সংকটের মুখে বেশি দামে সার বিক্রয় করে
থাকেন। প্রতি বস্তা বাংলা টিএসপি ১৩৫০ এর পরিবর্তে ২০০০ টাকায় বিক্রয় করে থাকেন।
কৃষি খাতে সাফল্যের লক্ষ্যে  বাংলাদেশ সরকার গাংনী উপজেলাতে একাধিক কৃষি যন্ত্রপাতি
ভর্তূকি মূল্যে  বিতরন করেছেন।
তার মধ্যে অন্যতম হল কম্বাইন্ড হারভেস্টার। ইমরান হোসেনকে  ম্যানেজ করে কিছু অসাধু
ব্যবসায়ী সরকারী মূল্যে তুলে বাইরে বিক্রয় করে দিয়েছেন।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসে সরকারী বরাদ্দের  তালিকা চাইলে কোন তথ্য দেওয়া হয়না। তথ্য
চাইলে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে বলা হয়। সেখানে তথ্য অধিকার
আইন ২০০৯ এর নির্ধারিত ফরমে একাধিক বার আবেদন দিলেও কোন তথ্য মেলেনি।

তিনি উত্তর লেখেন প্রযোজ্য নয়  তাই নিরুপায় হয়ে ঐ সকল নাগরিক কৃষি সম্প্রসারন
অধিদপ্তরের (ডিডি) উপ-পরিচালকের কাছে আপীল আবেদন করেও কোন তথ্য পাওয়া যায় নি।
এব্যাপারে সরকারী ডিলার জেলা আওয়ামীলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম
জানান, আমাদের আগের চেয়ে কম পরিমান সার দেওয়া হচ্ছে যার কারনে আমরা চাষীদের
চাহিদা মত সার দিতে পারছিনা। সার বেশি বরাদ্দ পেলে চাষীদের চাহিদা পুরণ করতে পারবো।
এব্যাপারে গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন জানান,সারের কোন সংকট নেই।
যদি কোন ডিলার সার না দিয়ে বেশি দামে বিক্রয় করে থাকেন তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া
হবে। সরকারিভাবে সারের  কোন সংকট নেই।
এব্যাপারে গাংনী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু বলেন,
সরকারীভাবে সারের কোন সংকট নেই। কিছু ডিলার সার বেশি দামে বিক্রয় করার লক্ষে
সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করছেন। খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে যারা অনিয়মের সাথে জড়িত
তাদের লাইসেন্স বাতিল  করা হবে।
এব্যাপারে জানতে  গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহার সাথে মোবাইল ফোনে
যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

Related posts

Leave a Comment