জাতি গঠনে কর ও ভ্যাট দেওয়ার আহ্বান অর্থ উপদেষ্টার

শুভদিন অনলাইন ডেস্ক:

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ জাতি গঠনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে কর ও ভ্যাট প্রদানের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে দেশে ভ্যাট চালু হয় এবং এটি সারা বিশ্বে চালু রয়েছে। আমি মনে করি, প্রতিটি নাগরিকের সঠিকভাবে কর দেওয়া উচিত।’ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনে আয়োজিত ‘ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ ২০২৪’ উপলক্ষে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। এবারের ভ্যাট দিবসের স্লোগান ‘ভ্যাট দিব জনে জনে, অংশ নিব উন্নয়নে’।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এনবিআর সদস্য (ভ্যাট বাস্তবায়ন ও আইটি) ড. মো. আব্দুর রউফ এবং ভ্যাটের বিভিন্ন দিক নিয়ে পাওয়ার-পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন এনবিআর সদস্য (ভ্যাট নীতি) মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরী।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কর ও ভ্যাট প্রদানের মাধ্যমে করদাতারা সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সামাজিক সেবা এবং সামাজিক সুবিধার মতো অন্যান্য পরোক্ষ সুবিধা পাবেন, যদিও কিছু ক্ষেত্রে তা তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায় না। উত্তর ইউরোপীয় এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলির নাগরিকদের বিভিন্ন উন্নত পরিষেবা পেতে তুলনামূলকভাবে উচ্চ কর প্রদানের কথা উল্লেখ করে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো সচেতন হতে হবে এবং পরিষেবাগুলি আরো উন্নত করতে হবে। উপদেষ্টা বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিষয় হল কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা। কেউ কেউ স্বল্পমেয়াদে কর ও ভ্যাট ফাঁকি দিতে পারে, কিন্তু তাতে শেষ পর্যন্ত পরবর্তী প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমাদের কর দিতে হবে।’ সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি-বিধান প্রয়োগে এনবিআর কর্মকর্তাদের অরো সতর্ক হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

উপদেষ্টা  বলেন, এলডিসি উত্তোরনের বিবেচনা থেকে দেশকে বিভিন্ন খাতে কর রেয়াত এবং প্রণোদনার মতো বিভিন্ন সুরক্ষা প্রদানের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যথায়, আমরা প্রতিযোগিতামূলক হতে পারব না। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের অভিযোগের কথা বিবেচনায় এনে বলপ্রয়োগ করে কর আদায় না করার জন্য রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের কর ও ভ্যাট আদায়ে আরো বন্ধুত্বপূর্ণ ও যৌক্তিক হওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি।

অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘যদিও সরকারের মোট রাজস্বের প্রায় ৮৫ শতাংশ এনবিআর আদায় করে, কিন্তু কর থেকে জিডিপি অনুপাত এখনো কম। এনবিআরের ভ্যাট ও কাস্টমস শাখায় বর্ধিত জনবল কার্যকর হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে এবং বাজেট ঘাটতি আরো কমবে।’

রাজস্ব বোর্ড রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, আইন ও বিধি-বিধান কঠোরভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে ভ্যাট সংগ্রহ বাড়ানোর আরো অনেক সুযোগ রয়েছে। রহমান বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের ওপর করের বোঝা কমাতে ও পরবর্তী প্রজন্মকে একটি শালীন জীবন দিতে এবং এভাবে দেশের উন্নয়নের জন্য কর আদায় আরো বাড়াতে হবে।

এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান কর ও ভ্যাট প্রদানের জন্য একটি ‘ট্যাক্স সংস্কৃতি’, সচেতনতা এবং সঠিক মানসিকতা তৈরির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে বলেন, ভ্যাটের হার কমিয়ে ভ্যাট নেট আরো প্রসারিত করার পরামর্শ দেন যাতে মানুষ ভ্যাট দিতে আরো উৎসাহী হয়।

ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই’র সাবেক পরিচালক মো. আব্দুল হক ও এএসএম কামালউদ্দিন।

Related posts

Leave a Comment