স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম

শুভদিন অনলাইন ডেস্ক:

স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। বুধবার বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেছেন।

সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, স্বাধীনতাবিরোধদের তালিকা মুক্তযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। তিনি বা তাঁর সচিব মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার পর এ রকম কোনো তালিকা পাননি। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর এ রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা করা অসম্ভব।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস-২০২৪ এবং মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের অগ্রগতির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করতে গিয়েই মন্ত্রণালয় হিমশিম খাচ্ছে যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক’।

উপদেষ্টা বলেন, বহু অভিযোগ আছে যে, মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও অনেকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তালিকাভুক্ত হয়েছেন, গেজেটভুক্ত হয়েছেন এবং সুবিধা গ্রহণ করছেন। আমার দৃষ্টিতে এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা। এটা ছোটখাটো অপরাধ নয়, অনেক বড় অপরাধ। যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন তারা যদি স্বেচ্ছায় এসে তা স্বীকার করেন, তাহলে তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে। নয়তো প্রতারণার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, রাজাকারের কোনো তালিকা মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। আর চাইলেও রাজাকারের তালিকা করা যাবে না। এই তালিকা করা অত্যন্ত কঠিন বিষয়। বাস্তবকে অস্বীকার করে তো আমরা কিছুই করতে পারবো না। ৫০ বছর আগের একটি ঘটনা, কোথায় কে আছে না আছে, কার কাছে কি তথ্য আছে কোনো কিছুই জানা নেই। এটা করা আসলেই অনেক কঠিন কাজ।

মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করার মূল উদ্দেশ্যটা কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ আছে যে অনেকে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান না হয়েও সরকারি চাকরি নিয়েছেন এবং নানা রকমের সুবিধা নিচ্ছেন। তো আমরা এটাকে যখন পাবলিক ডোমেনে নিয়ে যাচ্ছি তখন এখানে আমরা একটা ফরম দিচ্ছি। এই ফরমের মাধ্যমে যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে এবং সেটা যদি প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল এ দেশের রাজাকার, শান্তি কমিটি, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা পাকিস্তানি বাহিনীকে পথঘাট চেনাতে ও মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে। এসব বাহিনীর সদস্যরা সাধারণ বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে; চালিয়েছে নৃশংস গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো ১০ হাজার ৭৮৯ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ওই তালিকায় জাতীয় বা স্থানীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে পরিচিত অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং সংগঠকের নামও পাওয়া যায়, যাদের অনেকে আবার নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেয়ে আসছেন। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশিত তালিকা নিয়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। এমন প্রেক্ষাপটে ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে রাজাকারের তালিকা সরিয়ে ফেলা হয়।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তখন বলা হয়েছিল, ২০২০ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে এ তালিকা প্রকাশের প্রচেষ্টা থাকবে। কিন্তু এরপর ২৭ মাস পার হলেও তালিকা প্রণয়নের কাজই শুরু করতে পারেনি মন্ত্রণালয়।

Related posts

Leave a Comment