শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
চলতি বছরে ৩,৮৭০টি অভিযানে আটক ২২,৪৮৬ জন
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের তারার পাহাড় খ্যাত বুকিত বিনতাংয়ের জালান ইম্বিতে গতকাল রাতে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। অভিযানে পালানোর চেষ্টাকালে দুই বিদেশি পুরুষ আহত এবং উঁচু হিলের জুতা পরা এক বিদেশি মহিলাও পালাতে ব্যর্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
দেশটির মালয় ভাষায় প্রকাশিত অনলাইন পত্রিকা বিহারিয়ান জানিয়েছে, অভিযান চলাকালীন এমন ‘নাটক’ দেখা যায়, এবং তিন জনকেই আটক করার পর মালয়েশিয়ার ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ ডিপার্টমেন্টের (জেবিপিএম) ইমার্জেন্সি মেডিকেল রেসপন্স সার্ভিস (ইএমআরএস) ইউনিট চিকিৎসা প্রদান করে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুরু হওয়া অভিযানে ৮৯৫ জনকে যাচাই বাছাই করা হয়, যার মধ্যে ৭৪৯ জন বিদেশি নাগরিক এবং ১৪৬ জন স্থানীয় নাগরিক ছিলেন। তাদের মধ্যে ৫০৬ জন বিদেশি নাগরিককে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক দাতুক জাকারিয়া শাবান গতকাল রাতে অভিযানের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মেদান ইম্বিকে অবৈধ অভিবাসীদের (পিএটিআই) কার্যকলাপের কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে অনেক দোকানের উপরের তলা ভাড়া দেওয়া কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং তারা সেখানে বসবাস করে।
তিনি বলেন, “এই এলাকায় এটাই প্রথম অভিযান নয়, সর্বশেষ অভিযানটি ফেব্রুয়ারি মাসে চালানো হয়েছিল। যতবার আমরা এমন অভিযান পরিচালনা করি, ততবারই আমরা তাদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হই যারা নিয়ম মেনে চলে না এবং বৈধ কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়” তিনি আরও জানান, যাদের পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৫০৬ জনকে অভিবাসন আইনের অধীনে অপরাধ সংঘটনের সন্দেহে বুকিত জলিল ডিটেনশন ডিপোতে পাঠানো হয়েছে, যাতে তাদের পরিচয়পত্র যাচাই করা যায়। আটককৃতদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের নাগরিক রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক হলো বাংলাদেশি (১৬৫ জন), তারপরে নেপালী (১৪২ জন) এবং ইন্দোনেশিয়ান (১০৯ জন)। কিছু ভারতীয় ও শ্রীলঙ্কান নাগরিকও আটক হয়েছেন। আটককৃতদের মধ্যে ৪৪৮ জন পুরুষ এবং বাকি ৫৮ জন মহিলা। আমরা বিশ্বাস করি তারা অন্য কোথাও কাজ করে এবং এখানে রুম ভাড়া করে থাকে।”
জাকারিয়া আরো বলেন, “শনাক্ত করা অপরাধগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিচয়পত্র না থাকা, অনুমোদিত সময়ের বেশি অবস্থান করা এবং ওয়ার্কিং ভিসার অপব্যবহার। এমনও ধরা পড়েছে যাদের জোহরে ইস্যু করা ভিসা আছে, কিন্তু কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই তারা রাজধানীতে অবস্থান করছে। এমনকি এমন লোকও আছে যাদের পাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও তারা এখানে বসবাস করছে। আমরা এমন বিদেশি নাগরিকদেরও শনাক্ত করেছি যারা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) কর্তৃক ইস্যুকৃত এমন কার্ড ধারণ করে যা এই দেশে স্বীকৃত নয়। তাদের সকলের প্রকৃত পরিচয় জানার জন্য বিস্তারিত তদন্ত করা হবে।”
জাকারিয়া আরও বলেন, “অভিযানে কর্তৃপক্ষ দেখতে পেয়েছে যে এই বিদেশি নাগরিকরা অস্বাস্থ্যকর ও ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছে। পরিদর্শনে দেখা গেছে, একটি ছোট কক্ষে পাঁচ থেকে ছয় জন লোক থাকে এবং একটি পুরো বাড়ি নিম্ন ভাড়ার জায়গায় রূপান্তরিত করা হয়েছে যেখানে প্রায় ৩০ জন পর্যন্ত ভাড়াটিয়া রয়েছে।”
গত রাতের অভিযানটি চার তলা বিশিষ্ট ছয়টি দোকান-বাড়িতে পরিচালিত হয়েছে, যেগুলোকে বিদেশি নাগরিকদের থাকার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল এবং জানা গেছে যে তারা একটি ছোট কক্ষের জন্য প্রতি মাসে ৬০০ রিঙ্গিত ভাড়া দিত। গতকাল মধ্যরাতে শেষ হওয়া এই অভিযানে পুত্রজায়া ইমিগ্রেশনের ১৮৫ জন কর্মকর্তা ও সদস্য, নেগেরি সেম্বিলান ইমিগ্রেশন এবং অন্যান্য সংস্থা, জেবিপিএম ও জাতীয় নিবন্ধন বিভাগ (জেপিএন) সহায়তা করে।”
এদিকে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রধান জাকারিয়া শাবানের উদ্ধৃতি দিয়ে মালয় ভাষায় প্রকাশিত অনলাইন বিহারিয়ান আরো জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে ৩,৮৭০টি অভিযান চালিয়েছে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন। এ সময়কালে ৫২,৩১৮ জন ব্যক্তিকে পরীক্ষা করা হয়েছে, যেখানে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়োগের জন্য ৪৯১ জন কোম্পানির মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সময়ে, ২২,৪৮৬ জন বিদেশি অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৩,৬৭৭ জনকে সরাসরি ইমিগ্রেশন বিভাগ গ্রেফতার করেছে, এবং ৮,৮০৯ জনকে অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে তাদের স্ব স্ব দেশে হস্তান্তর করেছে।”
তবে এ পর্যন্ত মোট কত জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে তা জানায়নি মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন। এ বিষয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
এছাড়া মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগ দেশের প্রবেশ পথেও আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। যখন তারা বৈধ পাস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ডকুমেন্ট পরীক্ষার সময় তা এড়ানোর চেষ্টা করেছে তখন তাদের আটক করা হয়েছে। জাকারিয়া শাবান আরো বলেন, “অভিযান একটানা চলবে। যারা ইমিগ্রেশন আইন মেনে চলতে ব্যর্থ হবে তাদের সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না। এই দেশে বসবাসকারী সকল বিদেশি নাগরিককে অবশ্যই বৈধভাবে থাকার শর্তাবলী মেনে চলতে হবে এবং দেশের আইনকে সম্মান করতে হবে।”