জুলাই-আগস্টের ত্যাগের পরও কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ পাইনি: মির্জা ফখরুল

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

জুলাই-আগস্টের ত্যাগের পরও কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ পাইনি এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা কিন্তু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এখনো কোনো নির্বাচিত সরকার বা পার্লামেন্ট পাইনি। সেজন্য আমাদের দৃঢ়তা ও সচেতনতার সাথে কাজ করতে হবে। আমাদের সবসময় সজাগ থাকতে হবে। আমাদের সংগঠনকে আরো বেশি শক্তিশালী করতে হবে।
রোববার (২০ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ আল নোমান -এর স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকের এই সময়টা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আজকে কতগুলো নির্ধারিত বিষয়কে আমরা অনির্ধারিত করে ফেলেছি। নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়ে সকল দলের উচিত হবে বিষয়গুলো নিয়ে ধৈর্যের সাথে গ্রহণযোগ্য সমাধান করা। আমাদের আশা, আমরা খুবই অল্প সময়ের মধ্যে একটি কাঙ্ক্ষিত আশা পূরণ করতে পারব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আবদুল্লাহ আল নোমান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন এই পরিচয় আমি দিতে চাই না। তিনি এর থেকেও অনেক বড় মানের নেতা ছিলেন। এই মহান মানুষটির প্রতি আমি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তিনি চলে গেছেন তবে আমাদের জন্য রেখে গেছেন তার কাজগুলো। এই কাজগুলো যদি আমরা অনুসরণ করি তাহলে অনেক উপকার হবে।
তিনি বলেন, আজকের এই সময় জাতির জন্য নোমান ভাইয়ের প্রয়োজনটা অনেক বেশি ছিল। এই ফ্যাসিবাদ পতনের পর জনগণকে সঠিক পথে নেয়া সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এই কাজটা নোমান ভাই সব থেকে ভালো পারতেন। তিনি সহজেই জনমতকে এক করে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারতেন।
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দুঃখের বিষয় হচ্ছে আজকে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ত্যাগী শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা কখনোই এই দেশের মঙ্গলের সাথে থাকতে পারে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলন বাদেও ১৫ বছরের যত আন্দোলনে শ্রমিকরা আত্মহুতি দিয়েছেন, তাদের তালিকা শ্রমিক দলের থাকা উচিত। আমি আশা করব আমাদের শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এই বিষয়টাকে গুরুত্ব দেবেন এবং এই তালিকা তৈরি করবেন।
সরকার পরিবর্তন হলে শ্রমিকদের নেতৃত্বও পরিবর্তন হয়ে যায় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, যতই আন্দোলন করেন লাভ হবে না। শ্রমিকদের কথা শ্রমিকদেরই বলতে হবে। এজন্য শ্রমিকদেরই নিজেদের ঐক্য বদ্ধ হতে হবে। যাতে করে কোনো সুবিধাভোগী এসে যেন সুবিধা নিতে না পারেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে একটি পক্ষ বলছে আমাদের কোনো অবদান নেই, তাদের সব অবদান। তাই আজকে আমি বলতে চাই আসুন না আমরা সবাই একজোট হই, ঐক্যবদ্ধ হই। নিজেদেরকে আরো দৃঢ়ভাবে তৈরি করি। যাতে করে তাদের সেই বোধ থেকে সরিয়ে দিতে পারি এবং আমাদের অধিকারকে যেন আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। নোমান ভাইয়ের রুহ সেদিনই শান্তি পাবে যেদিন তিনি ওপার থেকে দেখতে পারবেন এদেশে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, চট্রগ্রামের বিএনপির রাজনীতির ইতিহাসে নোমান ভাই ছিলেন নেতাদের নেতা। চট্রগ্রামের বহু নেতা নোমান ভাইয়ের আন্ডারে রাজনীতি করেছেন। এমনকি যেদিন তিনি মারা যাবেন সেদিনও তিনি চট্রগ্রামের এক জনসভায় যেতে চেয়েছিলেন। নোমান ভাইয়ের মতো আপাদমস্তক রাজনীতি করা লোক সহজে দেখা যায় না। নোমান ভাই মারা গেছেন, এখন এসব কথা বলে তার কোনো উপকার হবে না। তবে আমরা যদি তার আদর্শ ধারণ করে চলতে পারি তাহলে তার রাজনীতি সার্থক হবে।
বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সব থেকে শান্তির বিষয় হচ্ছে নোমান ভাই জীবিত থাকা অবস্থায় ফ্যাসিবাদের পতন দেখে গেছেন। তবে দুঃক্ষের বিষয় হচ্ছে নোমান ভাই জীবিত থাকা অবস্থায় নির্বাচন দেখে যেতে পারলেন না।
বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী এক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন আবদুল্লাহ আল নোমান। তিনি তার রাজনীতি শুরু করেন শ্রমিক নেতা হবার মাধ্যমে। ১৯৭৮ সালে তিনি যখন শ্রমিক দলের দায়িত্বে ছিলেন তখন তার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়। নোমান ভাইয়ের সাথে আমি বহুবছর কাজ করেছি। দীর্ঘ দিন তিনি সভাপতি ছিলেন আমি সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। তার সাথে আমার কখনো কোনো দ্বন্দ্ব হয় নাই।
অনুষ্ঠানে সাবেক বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাইদ আল নোমান দুর্জয় বলেন, আমার বাবা জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত কোনো শর্ত দিয়ে রাজনীতি করেননি। আমার বাবা মনে করতেন রাজনীতিতে নেবার কিছু নেই, রাজনীতিতে দেবার অনেক কিছু আছে। আমার বাবা দলকে কখনো বলেনি আমাকে কিছু না দিলে আমি কিছু করব না। আমার বাবা চট্রগ্রামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করে দিয়েছে। এ কাজের মাধ্যমে তিনি আমাদের মাঝে সারাজীবন বেঁচে থাকবেন।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী, বিআইডব্লিউটিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও দৈনিক দিনকাল পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, এবারের সংগ্রামে শ্রমিক দলের ১০০ জনের বেশি জীবন দিয়েছে। এই শ্রমিকরা বারবার দেশের দুঃসময়ে তাদের জীবন দিয়ে দেশকে রক্ষা করেছে। হাসিনার দুশাসনের পতন ঘটানোতে অন্যতম ভূমিকা রাখা শ্রমিকদের দ্বারাই আগামীর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণ হবে। আগামীর কাঙ্ক্ষিত বংলাদেশকে পেতে হলে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং আগামী দিনের বিএনপির আন্দোলন লড়াইয়ে শ্রমিকদের গুরুত্ব ও প্রয়োজন সব থেকে বেশি থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *