আমিরুল ইসলাম অল্ডাম, মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি:
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামন্দী ইউনিয়নের অন্তর্গত অলিনগর গ্রামে স্বামী ও ননদের ক্রয়কৃত জমির মাীলকানা নিয়ে হয়রানির শিকার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী নুরুন্নাহার আক্তার ও তার কন্যা হাবিবা নওশীন। দীর্ঘদিন যাবত আদালতে দায়েরকৃত একাধিক মামলায় পরাজিত হয়ে শেষ পর্যন্ত জমিতে মদন মস্তানের দরবার শরীফ চলমান রয়েছে বলে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, অলিনগর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. রবকুল হোসেন ও মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমান তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে কিয়দংশ জমি দরবার শরীফের নামে শর্ত সাপেক্ষে দানপত্র দলিলে ২.৫০ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রী করে দেয়।
যার দলিল নং ৩১৪৩ এবং তাং ০৯/০৪/১৯৮৯ ইং । শর্তে উল্লেখ করা হয় যে, মদন মস্তানের দরবার শরীফ যতদিন সচল থাকবে ততদিন দরবার শরীফের জমি বহাল থাকবে। দরবার শরীফ নানা কারনে ২০০৫ সালে বন্ধ হলে জমি পূর্বের দাতাগণের দখলে বা মালিকানায় ফিরে যাবে। পূর্বের দরবার শরীফের নামে দানপত্র করার সময়ে রেজুলেশন বহি হারিয়ে গেলে পুনরায় ২০০৮ সালে রেজুলেশন করা হয়।
কিন্তু সেই মদন মস্তান দৌলতপুর উপজেলার কাতলামারি গ্রামে আশ্রম করলে তার নামে দরবার শরীফে আইন বিরোধী কাজ,
গাঁজা, মদ খাওয়ার কারনে বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমান ২০/১১/২০১৯ ইং তারিখে মারা যান। সেই শর্তে দরবার শরীফ কার্যত বন্ধ হলে নুরুন্নাহার আক্তার তার স্বামীর অংশ ছাড়াও অন্য দাগে কিছু জমি ক্রয় করেন। যার দলিল নং-৭৫৩৯ তাং ২০/০৯/২০০৬ ইং। জমি ক্রয় করার পর নুরুন্নাহার আগে খারিজ করেন। অনুমোদিত খারিজ কেস নং- ১২৩৮/৯-পি- ১/২০০৭-০৮। হোল্ডিং নং-৪৩২। খতিয়ান নং-১৯১/২. দঠস নং-৩০৭ (পরিমান ৪.৫০শতাংশ) এবং ৯৩৪ দাগে (পরিমান ২৪.২৫ শতাংশ) মোট ২৮.৭৫ শতাংশ। এরপর নুরুন্নাহার আরো একটি জমি ক্রয করেন। যার দলিল নং-৩৮৯২ তাং ১৯/০৪/১৯৯২ ইং। খারিজ অনুযায়ী জানা গেছে, দুইটি দাগেরই মালিক নুরুন্নাহার আক্তার। দরবার শরীফ বন্ধ হলে ৩০৭ নং দাগে মোট জমির পরিমান ৭ শতাংশ। এর মধ্যে নুরুন্নাহার ৪.৫০ শতাংশ। দরবার শরীফের নামে bছিল ২.৫০ শতাংশ। শতানুযায়ী দরবার বন্ধ হলে উক্ত ২.৫০ শতাংশ জমি নুরুন্নাহার ক্রয় করেন। বর্তমানে ঐখানে কোন দরবার শরীফ চলমান নেই।
জানা গেছে, উক্ত অলিনগর গ্রামে নুরুন্নাহার আক্তারের সভাপতিত্বে মা ও সাধনা দুঃ স্থ নারী কল্যাণ সংস্থা নামে একটি নারী সংগঠন চালু ছিল। সম্পাদিকা হিসাবে ছিলেন পারভীনা খাতুন। যার রেজিঃ নং জেমবিককা/মেহের/২০/২০২৪ ইং। তাং- ৩০/০৯/২০০৪ ইং।সমিতিতে সদস্য সংখ্যা ছিল ৫১ জন।
তৎকালীন গাংনী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার সমিতি পরিদর্শন করেন। যার তাং-৩০/০৯/২০০৪ ইং। এই
বাড়ির সামনে অর্থ্যাৎ মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক সড়কের পাশে দীর্ঘদিন যাবত মা ও সাধনা দুঃস্থ নারী কল্যাণ সংস্থা নামে বড় আকারের একটি সাইন বোর্ড দেয়া ছিল। চক্রান্ত করে প্রতিপক্ষরা সেই সাইনবোর্ড মুছে ফেলে দরবার শরীফ নামে স্থাপন করেছে। যা আইনলঙ্ঘন করার সামিল। সরকারি রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্ত কোন সাইনবোর্ড মুছে ফেলা যায়না।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার অলিনগর গ্রামে নানাভাবে নুরুন্নাহারের নামে একাধিক জিআর ও সিআর মামলা করে পরাজিত হয়েছেন। মিথ্যা মামলায় হয়রানি করার জন্য মহিলা সংস্থার সাইন বোর্ড মুছে ‘সৈয়দে সুলতান জিন্দা ওলি সুলতানুর আওলিয়া দরবার শরীফ ’লিখে দরবার চলমান রয়েছে বলে প্রতিপক্ষরা দাবি তুলেছে। কিন্তু এই তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট ।
কাতলামারি মদন মস্তানের দরবারের খাদেম রেজাউল হক জানান, অলিনগরে কোন মদন মস্তানের দরবার শরীফ নেই। কারন পরিবার পরিজন ছেড়ে আলফাজ উদ্দীন মদন মস্তান গৃহত্যাগী হয়ে অনেক আগে পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার
কাতলামারি গ্রামে আস্তানা তৈরী করেন। পরে কাতলামারি বিজ্রের পার্শ্বে দীর্ঘদিন শিষ্য ও আশেকান দের নিয়ে দরবার
চালিয়ে তিনি প্রায় ৩০ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন।
কাতলামারিতেই ‘হযরত শাহ সুফি সুলতান ইমামুল আলহাজ মীর আলফাজ উদ্দীন (মদন মস্তান)’ নামে তার মাজার শরীফ রয়েছে।
সেখানে প্রতিবছর ভক্ত, শিষ্য ও আশেকানদের নিয়ে বার্ষিক ওরশ শরীফ পালিত হয়ে আসছে। খাদেম রেজাউল হক আরও জানান,
অলিনগরের কতিপয় লোক রাতের আঁধারে মদন মস্তানের লাশ চুরি করার জন্য এসেছিল। কাতলামারি গ্রামের লোকজন ঐক্যবদ্ধ ভাবেপ্রতিরোধের কারনে লাশ চুরি করতে পারিনি।
এক্ষণে প্রকৃত জমির মালিক অসহায় সনুরুন্নাহার আক্তারকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা না হয়। সচেতন মহলের দাবি আর যেন
মিথ্যা মামলায় হয়রানি না করা হয় অসহায় পরিবারটিকে। সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে ন্যায্য বিচার
করার দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।