ঐকমত্য না হওয়া বিষয়গুলোও জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে : আলী রীয়াজ

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় যে সব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো জনগণকে জানানোর পাশাপাশি যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়নি, সেগুলোও স্বচ্ছতার স্বার্থে প্রকাশ করা হবে।

আজ রোববার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে জাতীয় ঐকমত্যের বিষয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি তুলে ধরে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দলগতভাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিষয়ে যেমন ঐকমত্য হয়েছে, কিছু মৌলিক বিষয়ে তা সম্ভব হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক আদর্শিক অবস্থানের কারণে মতপার্থক্য থাকবে, সব বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য জাতীয় সনদ তৈরিতে মৌলিক ও সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। যে সকল বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি হবেনা, সেগুলোর বিষয়ে আমরা জনগণকে শিগগিরই অবহিত করব। কারণ স্বচ্ছতা ও জনগণের পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এটি করা খুবই জরুরী। সেই বিবেচনায় আমরা এখন অগ্রসর হচ্ছি।

গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হওয়ার পর ছয় মাস সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সেই ছয় মাসের প্রায় মাঝামাঝি সময়ে আমরা উপস্থিত। এই সময়ে আমরা বিভিন্নভাবেই প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করা ছাড়াও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আমরা তার সারসংক্ষেপ ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে যোগাযোগ করেছি। দলগুলো তাদের মতামত দিয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, আমরা বারবার বলেছি যে, জাতীয় ঐকমত্য গঠনে কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা যথেষ্ট নয়, নাগরিক সমাজের মধ্যেও এ বিষয়ে এক ধরনের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা দরকার। তাই নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ সংস্কার কর্মসূচি থেকে বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও বলেন, আমরা একটা মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। অমিত সম্ভাবনা তৈরি করেছি, কিন্তু যেকোনো সম্ভাবনা যেমন চ্যালেঞ্জ তৈরি করে, এই পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জগুলোও অত্যন্ত কঠিন। কেননা আমাদের চেষ্টা হচ্ছে রাষ্ট্র কাঠামোর কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত পরিবর্তন। সেটা খুব সহজ হবার কথা নয়।

সবাইকে এ ঐতিহাসিক সুযোগ গ্রহণ করার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এই যে ৫৩ বছরের চেষ্টা এবং তার পাশাপাশি ১৬ বছরের যে সংগ্রাম, সর্বোপরি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে রক্তপাত ও প্রাণনাশ হয়েছে, সেগুলোর প্রতি আমাদের দায় আছে। সেই দায় এবং দায়িত্বের জায়গা থেকেই আমরা আশা করি, সকলেই তাদের নিজস্ব জায়গা থেকে এই কাঠামোগত পরিবর্তনগুলো যতটা অর্জন করা সম্ভব, সেজন্য সক্রিয় থাকবেন। আশা করি আপনাদের মতামত আমাদেরকে সহযোগিতা করবে।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ঐকমত্যের পাশাপশি সংস্কার প্রয়োজন। তবে নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ ব্যতীত সংস্কার কর্মসূচির অগ্রসর হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আগেই বলেছি, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা। আমরা চেষ্টা করব, যে জাতীয় সনদ তৈরি হচ্ছে, তার পাশাপাশি যে প্রতিবেদন আমরা তৈরি করতে চাই, সেখানে যেন এই মতামতগুলো প্রতিফলিত হয়।

মতবিনিময় সভায় অধ্যাপক আলী রীয়াজ ছাড়াও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবিরের নেতৃত্বে সুশীল নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন – সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুল মতিন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল এএনএম মুনীরুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন, কেমিক্যাল সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স এর ডিন অধ্যাপক ড. ওয়ারেসুল করিম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মির্জা হাসান, উইমেন উইথ ডিজএবিলিটিস ফাউন্ডেশন (ডাব্লিউডিডিএফ) এর নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর এবং লেখক ও মানবাধিকার কর্মী ইলিরা দেওয়ান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *