গাজীপুরে বিএনপির নতুন কমিটিকে ঘিরে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত অন্তত ১০

মোঃ নূরুল ইসলাম সবুজ গাজীপুর:

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা ও পৌর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা ঘিরে তীব্র বিরোধের জেরে ত্রিমুখী সংঘর্ষে রোববার সকালে অন্তত ১০ জন বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বিক্ষোভ, পাল্টা বিক্ষোভ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ও পটকা নিক্ষেপের মধ্যে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে সেনা সদস্যরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

শনিবার বিকেলে গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক একেএম ফজলুল হক ও সদস্য সচিব ব্যারিস্টার চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকীর স্বাক্ষরে কালিয়াকৈর উপজেলা এবং পৌর বিএনপির দুটি পৃথক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

উপজেলা কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল ইসলাম সিকদারকে এবং সদস্য সচিব করা হয় এম আনোয়ার হোসেনকে। অন্যদিকে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক করা হয় মোঃ মাহমুদ সরকারকে এবং সদস্য সচিব মহসিন উজ্জামানকে।

কমিটি ঘোষণার পর থেকে উপজেলা বিএনপির একটি পক্ষ—সাবেক সভাপতি মোঃ হেলাল উদ্দিন আহমেদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদের নেতৃত্বে—তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। তারা অভিযোগ করেন, নতুন কমিটিতে ত্যাগী ও মাঠের নেতাদের উপেক্ষা করে ‘আওয়ামী লীগপন্থীথ ও অনুগতদের স্থান দেওয়া হয়েছে।

রোববার (১৫ জুন) সকালে কালিয়াকৈর বাইপাস ও সাহেববাজার এলাকায় পদ বঞ্চিত বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবি জানান। একই সময় নতুন কমিটির পক্ষের নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল বের করলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে তৃতীয় পক্ষ হিসেবেও একাংশ মাঠে নামে। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে পড়ে।

এ সময় পুলিশ ও যৌথবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। দুপুরের দিকে পরিস্থিতি শান্ত হলেও এলাকায় এখনও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান বলেন, “সকাল থেকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি থাকলেও বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। কেউ আইন ভঙ্গ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আব্বায়ক কমিটিতে পদ প্রাপ্তরা আনন্দ মিছিল করতেছিল এ সময় পথ বঞ্চিতরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে উভয়ের পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে কিছু পটকা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

বিক্ষুব্ধ নেতা পারভেজ আহমেদ বলেন, “ঘোষিত কমিটিতে অনেকেই এক সময় আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আমরা এ পকেট কমিটি বাতিল করে ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছি।

অন্যদিকে, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ব্যারিস্টার চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, “কমিটিতে যারা আছেন, তারা সবাই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির। একটি পক্ষ পদবঞ্চিত হয়ে বিশৃঙ্খলা করছে। আমরা সবাইকে সংযত থাকতে বলেছি।

এ বিষয়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, আমি ব্যক্তিগত কাজে দেশের বাইরে ছিলাম গতকালের সেই আমি ঘটনা শুনতে পেয়েছি। আমি উভয়পক্ষকে শান্ত থাকতে বলেছি। কমিটিতে ত্যাগী নেতারা বাদ পড়েছেন কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং সেই পর্যন্ত আমি সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছি।

এদিকে নতুন কমিটি বাতিল না করা হলে আন্দোলন আরও কঠোর হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ নেতারা। জেলা বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সংঘর্ষ ও বিরোধের বিষয়টি কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *