অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে তিতাস গ্যাসের চারটি পৃথক অভিযান: বিপুল পরিমাণ গ্যাস সাশ্রয় ও জরিমানা আদায়

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি সম্প্রতি চারটি পৃথক অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। এই অভিযানগুলোতে অবৈধ কারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং আবাসিক সংযোগ থেকে অবৈধভাবে ব্যবহৃত গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদ করা হয়েছে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্যাস সাশ্রয় হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

অভিযান ০১: মেঘনাঘাটে চুন কারখানার অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ

তিতাস গ্যাসের জোনাল বিক্রয় অফিস-মেঘনাঘাটের আওতাধীন আনারপুরা, গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন রায়ের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় প্রথম অভিযান। এই অভিযানে চারটি ভাট্টি বিশিষ্ট একটি অবৈধ চুন কারখানা এবং আনুমানিক ৩০টি আবাসিক বার্নারের অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। অভিযান চলাকালে, ২০ ফুট ২” ব্যাসের এমএস পাইপ, ১৩০ ফুট ১.৫” ব্যাসের এমএস পাইপ এবং ৪৫০ ফুট হোজ পাইপ ঘটনাস্থলেই টুকরো টুকরো করে নষ্ট করা হয়। পেট্রোবাংলার তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি বিশেষ ভিজিলেন্স টিম অভিযানে উপস্থিত ছিল।

চুন কারখানার মালিককে ঘটনাস্থলে না পাওয়ায় তাৎক্ষণিক জেল বা জরিমানা করা সম্ভব হয়নি। তবে, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ কারখানার জমির মালিক/ভাট্টির মালিকের নামে গজারিয়া থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেছে। এই অভিযানে চুন কারখানার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি এক্সাভেটর মেশিনের মাধ্যমে স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয় এবং ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই অভিযানের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ৮,০০০ ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় হয়েছে, যার দৈনিক আনুমানিক মূল্য ১,৩০,৪৮৪ টাকা।

অভিযান ০২: ফতুল্লায় অবৈধ চুন ফ্যাক্টরি ও বিতরণ লাইন উচ্ছেদ

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি-এর জোবিঅ-ফতুল্লা-কুতুবপুর-এর আওতাধীন ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিজা খাতুনের নেতৃত্বে দ্বিতীয় অভিযানটি পরিচালিত হয়। অভিযানিক দল তালতলা, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ এলাকায় পূর্বে দুইবার বিচ্ছিন্ন করা একটি অবৈধ চুন ফ্যাক্টরি পুনরায় পরিদর্শন করে, তবে এবার সেখানে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে, ইউরোটেক্স গার্মেন্টস সংলগ্ন, লামাপাড়া, ফতুল্লা এলাকায় ২” ব্যাসের অবৈধভাবে স্থাপিত বিতরণ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়ায় উৎস পয়েন্ট থেকে লাইনটি বিচ্ছিন্ন করে অপসারণ করা হয়েছে। এর ফলে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৫০০ বাসাবাড়ির অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ঘটনাস্থলে সংশ্লিষ্ট কাউকে না পাওয়ায় কোনো প্রকার কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড আরোপ করা যায়নি।

অভিযান ০৩: যাত্রাবাড়ীতে আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন

তিতাস গ্যাসের মেট্রো ঢাকা বিক্রয় বিভাগ-১ এর আওতাধীন সুতিখালপাড়, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, ঢাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিমন সরকারের নেতৃত্বে তৃতীয় অভিযানটি পরিচালিত হয়। তিনটি স্পটে পরিচালিত এই অভিযানে একটি আবাসিক এবং দুটি বাণিজ্যিক অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। মক্কা ওয়াশিং কারখানা এবং আয়োজন ওয়াশিং কারখানায় অবৈধভাবে আবাসিক সংযোগ থেকে গ্যাস ব্যবহার করায় সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করা হয়। এর ফলে প্রায় ২৪২৫ সিএফটি গ্যাস সাশ্রয় হবে। অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ ব্যবহারের দায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ গ্যাস আইন, ২০১০ এর আওতায় ১,০০,০০০ টাকা জরিমানা করা হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা আদায় করা হয়।

অভিযান ০৪: সাভারে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ ও জরিমানা

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি-এর অধীন জোবিঅ-সাভার-এর আওতাধীন জিরাবো বাসস্ট্যান্ড, টঙ্গাবাড়ী, পুরাতন গরুর হাট, চাঁনগাও, বড় আশুলিয়া, সাভার এলাকার মোট পাঁচটি স্পটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈকত রায়হানের নেতৃত্বে চতুর্থ অভিযানটি পরিচালিত হয়। অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে পরিচালিত এই অভিযানে বিপুল পরিমাণ অবৈধ বিতরণ লাইন উচ্ছেদ, পাইপ অপসারণ এবং ৪৫০টির অধিক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

এই অভিযানে আনুমানিক ২১০০ ফুট অবৈধ বিতরণ লাইন এবং ১৮৫০ ফুট পাইপ অপসারণ করা হয়। এর ফলে মাসিক ৩৬,২৬,৯৫০ টাকা মূল্যের সমপরিমাণ গ্যাস সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে। অভিযানে একটি অবৈধ শিল্প সংযোগ, দুটি অবৈধ বাণিজ্যিক সংযোগ এবং ৪৫০টি আবাসিক ডাবল বার্নার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এছাড়াও, দুটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে মোট ১,০০,০০০ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *