তুর্কি সাংবাদিক উজায় বুলুতের প্রবন্ধ প্রোপাগান্ডামূলক ও ভিত্তিহীন : প্রেস উইং

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

তুর্কি ইসলামোফোবিয়া সাংবাদিক উজায় বুলুতের প্রবন্ধের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বলেছে, তার প্রবন্ধে বাংলাদেশ ভুলভাবে চরমপন্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এমন পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রেস উইং শুক্রবার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে উজায় বুলুতের লেখার দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সেখানে প্রেস উইং জানায়, তুর্কি এই সাংবাদিকের লেখাগুলো প্রোপাগান্ডামূলক ও ভিত্তিহীন।
সাম্প্রতিক সময়ে তুর্কি ইসলামোফোবিয়া সাংবাদিক উজায় বুলুত বাংলাদেশকে নিয়ে ধারাবাহিক প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি ভিত্তিহীন দাবি করেন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চরমপন্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
তার প্রবন্ধগুলো— দ্য ইউরোপীয়ান কনজারভেটিভ, দ্য ফ্রন্ট পেজ এবং গেটস্টোন ইন্সটিটিউট-এ প্রকাশিত হয়েছে। প্রেস উইং ফ্যাক্ট জানায়, এসব প্রবন্ধে তিনি যেসব দাবি করেছেন তা কেবল বিভ্রান্তিকর নয়, বরং বাংলাদেশের বাস্তব পরিস্থিতিকে বিপজ্জনকভাবে বিকৃত আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে।
‘দ্য তালেবানাইজেশন অব বাংলাদেশ’ শিরোনামে গত ১৫ জুন দ্য ইউরোপীয়ান কনজারভেটিভ-এ একটি প্রোপাগান্ডামূলক লেখা প্রকাশ করেন তিনি। এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি একই শিরোনামে দ্য ফ্রন্ট পেজে অনুরূপ একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।
উজায় বুলুত দাবি করেন, বাংলাদেশের ২০২৪ সালের গণআন্দোলন একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন নয়, বরং তা ইসলামী চরমপন্থীদের দ্বারা দখলকৃত আন্দোলন ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নেতৃত্বে বসানো হয়।
তার মতে, এর ফলে সংখ্যালঘু ও প্রগতিশীল গোষ্ঠীর উপর ব্যাপক হারে হামলা শুরু হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যু। বিএইচবিসিইউসি এবং আরআরএজি-এর মতো বিতর্কিত সূত্রের বরাতে তিনি জানাচ্ছেন, হাজার হাজার হামলা হয়েছে এবং এর এর মাধ্যমে প্রমাণ হয় ইসলামী উগ্রবাদ ছড়িয়ে পড়ছে।
প্রেস উইং জানায়, এসব দাবি ভিত্তিহীন, সমস্যাসংকুল ও বিভ্রান্তিকর।
উজায় বুলুতের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশে গতবছরের আন্দোলন ‘ইসলামী চরমপন্থীরা’ হাইজ্যাক করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের পেছনে ছিল। কিন্তু এই অভিযোগের পক্ষে কোন যুক্তিযুক্ত প্রমাণ দেখাতে পারননি।
বরং, শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের পতন হয় ছাত্র, শিক্ষক, অ্যাক্টিভিস্ট, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাধারণ নাগরিকসহ দেশের বিভিন্ন পেশার মানুষের বিপুল অংশগ্রহণে তৈরি হওয়া বড় আন্দোলনের মাধ্যমে।
অধ্যাপক ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের কোন ভূমিকা ছিল না— বরং আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ এবং সব বড় রাজনৈতিক দল তাঁকে আমন্ত্রণ জানায়।
ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যুর ঘটনাটিও সাম্প্রদায়িক বা রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত হত্যাকাণ্ড ছিল না বলে বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে।
প্রথমে ডেইলি স্টার পত্রিকা ভবেশ চন্দ্রের মৃত্যুর সংবাদ ভুলভাবে প্রকাশ করে। পরবর্তীতে তারা স্বীকার করে স্বাভাবিক কারণে— মূলত আর্থিক চাপ ও স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভবেশের মৃত্যু হয়। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়, ভবেশ চন্দ্রের পরিবারের কেউ দাবি করেনি, যে তাকে মারধর করে হত্যা করা হয়েছে—যদিও তাঁর স্ত্রী মৃত্যুকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে মনে করেন। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত ঘোষণার আগে তার শারীরিক পরীক্ষা ও হৃদপিণ্ডে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই বলে উল্লেখ করা হয়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল ঘটনাটি ‘পদ্ধতিগত নিপীড়নের প্রমাণ’ বলে উল্লেখ করলেও, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তা আগেভাগেই সরাসরি খণ্ডন করেছে এবং নিশ্চিত করেছে যে, ধর্ম নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তায় তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এসব ব্যখ্যার ভিত্তিতে স্পষ্ট যে উজায় বুলুতের লেখাগুলো প্রোপাগান্ডামূলক, ভিত্তিহীন এবং বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *