কেফায়েত উল্লাহ কায়সার,সন্দীপ:
চট্টগ্রামের উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে নতুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন ৩৬তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা মংচিংনু মারমা।
শুক্রবার (৪ জুলাই) সকালে বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে কাদা মাড়িয়ে তিনি সন্দ্বীপে পৌঁছান। এর মধ্য দিয়ে ইউএনও হিসেবে তাঁর প্রথম মাঠ প্রশাসনে পদায়ন হলো। এর আগে তিনি ঢাকায় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
যোগদানের পর মংচিংনু মারমা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আজ বৈরি আবহাওয়া। সাগর খুবই উত্তাল। এই অবস্থায় জীবনে প্রথম সন্দ্বীপে আসলাম। আজ আমার জন্য স্মরণীয় দিন। কাদা মাড়িয়ে সন্দ্বীপে পৌঁছালাম। এটি আমার প্রথম অভিজ্ঞতা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি চেষ্টা করব সন্দ্বীপের মানুষের জন্য কাজ করতে। জনসেবার এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাই।’
মংচিংনু মারমার জন্ম বান্দরবান জেলার এক পাহাড়ি পরিবারে। তাঁর প্রশাসনিক জীবনের শুরু হয় ৩৬তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগদানের মাধ্যমে।
নতুন ইউএনও সন্দ্বীপে আসার খবরে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাঁকে স্বাগত জানান। তাঁরা আশা করছেন, নতুন ইউএনওর নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসনের কার্যক্রমে নতুন গতি আসবে।
সন্দ্বীপ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন দ্বীপ উপজেলা। চট্টগ্রাম জেলা সদর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার আর সীতাকুণ্ড থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপে যাতায়াত এখনো এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে বর্ষাকালে সাগর উত্তাল থাকায় যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয়দের।
বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও নতুন ইউএনওর আগমনকে স্থানীয় অনেকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। সন্দ্বীপের বাসিন্দা ও সমাজকর্মী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন ইউএনও যেভাবে কষ্ট করে এখানে এলেন, তাতে মনে হয় তিনি কাজেও আন্তরিক হবেন। আমরা এমন ইউএনও চাই, যিনি মানুষের কাছে থাকবেন।’
মিলাদ মোদাচ্ছির নামে একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, সদ্য সাবেক ইউএনও রিগ্যান চাকমা কিছু মানুষকে মাটি কাটার অনুমোদন দিয়ে সমালোচিত ছিলেন। অনেকে সাবেক ইউএনও কে মাটি ব্যবসায়ী হিসেবেও অভিহিত করেছেন।
জাহাজের কমিশন এজেন্ট নিয়োগ নিয়ে তো তুলকালাম কান্ড ঘটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বলেন, সন্দ্বীপ অফিসার’স ক্লাবের সভাপতি ইউএনও আর সাধারণ সম্পাদক হয়ে থাকে উপজেলা প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। এটা সব সময় হয়ে আসছে। অথচ রিগ্যান চাকমা সাধারণ সম্পাদক করেছিলেন একজন ব্যাংক কর্মকর্তাকে।
যা অনিয়ম বলা চলে। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে অসন্তোষও ছিল। আবার এই সাধারণ সম্পাদক নিজের অফিস রেখে অফিস সময়ে সব সময় সাবেক ইউএনও এর গাড়িতে করে চলাচল করতেন। সরকারি সকল অনুষ্ঠানে ইউএনও’র পাশের চেয়ারে বসতে দেখা যায় তাঁকে। প্রকাশ না করলেও এ নিয়ে সরকারি অফিসারদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ক্ষোভ ছিল রাজনীতিবিদদের মধ্যেও এ-বিষয়গুলো নতুন ইউএনও আশাকরি মাথায় রাখবেন।
সন্দ্বীপে সাধারণত ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, অবকাঠামোগত সংকটসহ নানা উন্নয়ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এসব বিষয়ের সমন্বয় ও সমাধানে উপজেলা প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নতুন ইউএনওর কাছে সুশাসন, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনরোধ, উন্নয়ন প্রকল্পে স্বচ্ছতা এবং জনগণের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ বজায় রাখার প্রত্যাশা করেছেন।