শুভদিন অনলাইন রিপোর্টা:
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। এই সফরের উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্র-আসিয়ান সম্পর্ক জোরদার করা হলেও শুল্কযুদ্ধের আশঙ্কা সফরটিকে অনেকটাই ছায়াচ্ছন্ন করে রেখেছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, এশিয়ায় রুবিওর এই প্রথম সফরটি মূলত কুয়ালালামপুরে হবে, যেখানে তিনি আসিয়ান মিত্রদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে অংশ নেবেন। ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখার পর এটি এশিয়ায় তার নতুন কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার একটি সুযোগ।
রুবিওর মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মুক্ত, অবাধ ও নিরাপদ পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করাই এ সফরের মূল উদ্দেশ্য।’ এই বক্তব্যের মাধ্যমে মূলত চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব রোধে ওয়াশিংটনের প্রচেষ্টা বোঝানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনরায় জোরালো করা আমাদের স্বার্থে। সফরের সংখ্যার চেয়ে যোগাযোগ ও কূটনৈতিক তৎপরতা এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
এশিয়া সফরে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধির মতো, চীন ইস্যুটিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে—বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের সম্প্রসারণমূলক আচরণকে কেন্দ্র করে, যেটিকে যুক্তরাষ্ট্র ‘উসকানিমূলক’ বলে মনে করে।
এই সফরের পটভূমিতে রয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্ক হুমকি। এপ্রিল মাসে ঘোষিত শুল্কগুলো আপাতত স্থগিত থাকলেও, আগস্টের ১ তারিখ থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। মালয়েশিয়া ও লাওসের ওপর ২৫ ও ৪০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা ইতিমধ্যে ট্রাম্প দিয়েছেন।
অবশ্য, আসিয়ানভুক্ত রপ্তানিনির্ভর ভিয়েতনাম ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি খসড়া বাণিজ্য চুক্তি করেছে, যার ফলে তারা এই বাড়তি শুল্ক এড়াতে পেরেছে।
মে মাসের শেষদিকে এক সম্মেলনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেতারা ট্রাম্পের এই প্রতিরক্ষামূলক শুল্কনীতির বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
রুবিওর সফরে এই বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা। পররাষ্ট্র দপ্তরের সূত্র জানায়, রুবিও আসিয়ান নেতাদের বোঝাতে চেষ্টা করবেন যে যুক্তরাষ্ট্র কেবল বাণিজ্য সম্পর্ক ‘পুনঃসাম্য’ আনতে চায়।
কুয়ালালামপুরে রুবিওর সফরকালে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-ও সেখানে থাকবেন। রুবিও আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে পাশাপাশি আসিয়ান-ইস্ট এশিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনেও অংশ নেবেন।
এর আগে, রুবিও ওয়াশিংটনে অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের স্বাগত জানান, যেখানে তারা গুরুত্বপূর্ণ খনিজের সরবরাহ নিরাপদ রাখতে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
নতুন প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য এই খনিজসম্পদে চীনের আধিপত্য পশ্চিম ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।