শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
মিটফোর্ড হাসপাতালে ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো এজাহারনামীয় ১০ আসামি অধরা। এসব আসামির হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকলেও এখনো তাদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই এসব আসামি দেশের বিভিন্ন স্থানে গা-ঢাকা দিয়ে আছে।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকা কিছু আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র্যাব। এ সব আসামিকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে পুলিশ। রাজনৈতিক কারণে সোহাগ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে বেশ কিছুদিন ধরে নানা আলোচনা চলছিল। পুলিশ এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। এছাড়া ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ ছিল- পুলিশ এজাহার থেকে তিনজন আসামির নাম বাদ দিয়েছে। কিন্তু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এসএন মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, এই হত্যকাণ্ডে রাজনৈতিক কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মূলত ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
সোহাগ বিগত সরকারের সময় সাবেক এমপি হাজী সেলিমের ভাগ্নে পিলু কমিশনারের ছত্রছায়ায় বিদ্যুতের চোরাই তার কেনা-বেচা করতো। ৫ই আগস্টের পর সোহাগের এই ব্যবসায় ভাগ বসাতে চায় তারই পরিচিতজনরা। এ নিয়েই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। যা থেকেই তারা মব সৃষ্টি করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
গতকাল সোহাগ হত্যা মামলার অগ্রগতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা জানিয়ে বলেন, নিহত সোহাগ একসময় সাবেক এমপি হাজী সেলিমের ভাগ্নে পিল্লু কমিশনারের ছত্রছায়ায় মিটফোর্ড এলাকায় চোরাই বিদ্যুৎ তারের ব্যবসা করতেন। তবে ৫ই আগস্টের পর ওই ব্যবসায় ভাগ বসাতে চায় তারই পরিচিত কয়েকজন। এই নিয়েই দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, যা শেষ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে গড়ায়। এতে নির্বাচনী কোনো বিষয় জড়িত নয়।
এদিন সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, গত ৯ই জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে লাল চাঁন ওরফে সোহাগকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর ৯৯৯-এ কল পেয়ে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফাঁড়িতে খবর দেন। তখন ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সরোয়ার ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং দু’জন সন্দেহভাজন মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে গ্রেপ্তার করেন। পরে সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে আরও কয়েকজনকে শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভিডিও ফুটেজে পাথর নিক্ষেপকারীকে শনাক্ত করা গেলেও পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। তবে পুলিশের বিশেষ টিমের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ১৫ই জুলাই পটুয়াখালী থেকে মো. রেজওয়ান উদ্দিন অভি নামের যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাবার নাম মনোরঞ্জন বস ও মায়ের নাম বিউটি দেব মিলা। তিনি একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।
এজাহার নিয়ে বিভ্রান্তির বিষয়ে কমিশনার বলেন, প্রথমে নিহতের সাবেক স্ত্রী থানায় গিয়ে মামলা করতে চেয়েছিলেন। পরে তার সৎ ভাই রনি ও বড় বোন মঞ্জু আরা বেগম থানায় যান। তারা ২৩ জনকে আসামি করে একটি খসড়া এজাহার প্রস্তুত করেন। পরে মূল বাদিনী মঞ্জু আরা ৫ জনের নাম বাদ দিয়ে ও ১ জনের নাম যোগ করে মোট ১৯ জনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত এজাহার দায়ের করেন। খসড়া এজাহারের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা বিভ্রান্তির জন্ম দেয়। কমিশনার বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্তের স্বার্থে গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সেজন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।