গাজায় আংশিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা ইসরাইলের

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

গাজায় ক্রমবর্ধমান দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিরাপদ স্থলপথ খুলে দিতে এবং জাতিসংঘ ও ত্রাণ সংস্থাগুলোকে সহায়তা করতে রোববার আংশিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল।
গাজা সিটি থেকে এএফপি জানায়, ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজা উপত্যকায় আকাশপথে খাদ্যপণ্য ফেলতে শুরু করেছে এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী জানায়, তারা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে মানবিক সহায়তা প্রবাহ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গাজায় সক্রিয় জাতিসংঘ বা বেসরকারি ত্রাণ সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বেসরকারিভাবে সংশয় প্রকাশ করে মানবিক ত্রাণ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, তারা মাঠপর্যায়ে বাস্তব অগ্রগতি দেখার অপেক্ষায় রয়েছে।
ইসরাইল জানায়, যুদ্ধবিরতি কেবল সেসব এলাকায় সীমিত থাকবে, যেখানে বর্তমানে ইসরাইলি সেনা মোতায়েন নেই, যেমন আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ ও গাজা শহর।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই বিরতি কার্যকর থাকবে।
তবে বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, গাজার বিভিন্ন অংশজুড়ে ‘নির্ধারিত নিরাপদ পথ’ খুলে দেওয়া হয়েছে, যাতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলো খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছে দিতে পারে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, এই মানবিক তৎপরতা এবং ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের মাধ্যমে গাজায় পরিকল্পিত অনাহারের ‘মিথ্যা অভিযোগ’ খণ্ডন হবে।
উল্লেখ্য, মার্চের ২ তারিখে যুদ্ধবিরতা আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর ইসরাইল গাজায় পূর্ণ অবরোধ জারি করে।
মে মাসের শেষ দিকে সামান্য পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া হয়, যদিও সে সময় দুর্ভিক্ষ হুমকির বিষয়ে বিশ্বজুড়ে সতর্কতা জারি হয়েছিল।
ইসরাইল তার খাদ্য সহায়তার এয়ারড্রপের আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত জানায়, তারা পুনরায় খাদ্য ফেলার কার্যক্রম শুরু করবে। ব্রিটেনও জানিয়েছে, তারা জর্ডানসহ অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে।
এদিকে শনিবার ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানায়, ইসরাইলি বিমান হামলা ও গুলিতে অন্তত ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে—অনেকেই নিহত হন খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে অপেক্ষারত অবস্থায়।
গাজার বাসিন্দা হুসাম সুবহ বলেন, ‘আল্লাহ ও আমাদের আরব ভাইদের কাছে অনুরোধ, এই যুদ্ধবিরতি যেন বাস্তব হয়, না হলে আমরা সবাই মারা যাব।’ তিনি বলেন, একটি আটা ভর্তি বস্তা নেওয়ার সময় ইসরাইলি ট্যাংকের সামনে মৃত্যুভয় অনুভব করেছেন।
শনিবারই, ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’-এর মানবিক সাহায্যবাহী হান্দালা নামের একটি নৌকায় ইসরাইলি সেনারা উঠে পড়ে। নৌকাটি গাজার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় সরাসরি সম্প্রচারের দৃশ্য হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়।
গাজায় যোগাযোগ ও সংবাদ কভারেজের সীমাবদ্ধতার কারণে সিভিল ডিফেন্স বা অন্যান্য পক্ষের দেওয়া তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
গাজায় মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। সম্প্রতি ১০০-এর বেশি এনজিও সতর্ক করেছে যে, ‘গণদুর্ভিক্ষ’ ছড়িয়ে পড়ছে।
টেলিগ্রামে ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা গাজায় ত্রাণ প্রবেশ সহজ করতে মানবিক সহায়তা ফেলা শুরু করেছে।
তবে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, ‘এয়ারড্রপ দিয়ে এই দুর্ভিক্ষ ঠেকানো যাবে না। এটি ব্যয়বহুল, অকার্যকর এবং ক্ষুধার্ত মানুষদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াতে পারে।’
ইসরাইল দাবি করে, তারা গাজায় প্রবেশের ট্রাকের সংখ্যা সীমিত করছে না, বরং জাতিসংঘ ও এনজিওগুলোই পর্যাপ্তভাবে ত্রাণ সংগ্রহ করছে না।
তবে মানবিক সংস্থাগুলোর অভিযোগ, ইসরাইল অত্যধিক বিধিনিষেধ আরোপ করছে এবং গাজার ভেতরে চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।
ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পরিচালিত একটি পৃথক ত্রাণ প্রকল্প ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ নামেও চালু আছে, তবে বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরাইলি হামলায় শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার ঘটনায় এটি আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের হামলায় ১,২১৯ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক বলে এএফপির হিসাব অনুযায়ী সরকারি তথ্য সূত্রে জানা যায়।
জবাবে ইসরাইলের সামরিক অভিযানে হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৫৯,৭৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *