ভারতীয় সফটওয়্যারে তথ্য ঝুঁকি, সার্ভিস চার্জে ব্যয় হাজার কোটি টাকা

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাত দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নিজস্ব কোর ব্যাংকিং সিস্টেম (সিবিএস) সফটওয়্যার তৈরি না করে ২০০৮ সাল থেকে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস (টিসিএস)-এর সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে, যার ফলে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির স্পর্শকাতর তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই সাথে এই সফটওয়্যারের রক্ষণাবেক্ষণ ও সার্ভিস চার্জের নামে গত ১৪ বছরে হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

তথ্য পাচার ও নিরাপত্তা ঝুঁকি :-
২০১১ সালে সিবিএস বাস্তবায়ন শুরুর পর থেকে টিসিএস-এর ভারতীয় কর্মীরা দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান করেন এবং সরাসরি সার্ভারে কাজ করার অনুমতি পান। এমনকি তাদের রিমোট এক্সেস এখনো চালু রয়েছে বলে জানা গেছে, যা তথ্য পাচারের আশঙ্কা তৈরি করেছে।

সিন্ডিকেটের ভূমিকা ও অভিযোগ :-
বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, সিবিএস প্রকল্পসহ আইটি খাতের প্রধান নীতিনির্ধারণে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বছরের পর বছর প্রভাব বিস্তার করে আসছে। এই সিন্ডিকেটের শীর্ষে আছেন বর্তমান নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রায়, আগে তার সাথে ছিলেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী এবং সাবেক নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা। আরো রয়েছেন মেজবাউল হক, মসিউজ্জামান খান ও রাহাত উদ্দিন। তাদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় দরপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে টিসিএস-এর সফটওয়্যার কেনা হয়, যদিও এটি কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এর আগে ব্যবহার করা হয়নি।

থেমে আছে নিজস্ব সফটওয়্যার উন্নয়ন :-
২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড নিজস্ব সিবিএস সফটওয়্যার তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। বরং সময়ক্ষেপণ ও নানা অজুহাতে এই পরিকল্পনা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ ব্যাংকের অভ্যন্তরে সফটওয়্যার উন্নয়নে দক্ষ জনবল ও সফল অভিজ্ঞতা রয়েছে, যারা শতাধিক সফটওয়্যার সফলভাবে তৈরি করেছে।

অর্থ অপচয় ও তুলনামূলক চিত্র :-
টিসিএস-এর সিবিএস সফটওয়্যারের বিপরীতে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা সার্ভিস চার্জ বাবদ ব্যয় হয়েছে। অথচ একই প্রকল্পের আওতায় ইউরোপিয়ান প্রতিষ্ঠানের তৈরি ইআরডি ও ইডিডব্লিউ সফটওয়্যারগুলোর পেছনে অতিরিক্ত জনবল বা এত বিপুল সার্ভিস খরচ প্রয়োজন হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি নিরপেক্ষ অডিটেই এই অর্থনৈতিক ব্যয়বহুলতার প্রকৃতি স্পষ্ট হবে।

আইটি অবকাঠামোর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ :-
২০২৩ সালে আইসিটির দু’টি বিভাগ একীভূত করার পর সিন্ডিকেট আরো সুসংগঠিতভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। নেটওয়ার্ক ও সাইবার নিরাপত্তা বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন দেবদুলাল রায়, পঙ্কজ কুমার মল্লিক, বিষ্ণু পদ বিশ্বাস, দীপঙ্কর কুমার চৌধুরী ও পুলক হাজরা হাজারা যারা সবাই একই গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন :-
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো আর্থিক নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ ও উচ্চপর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সাথে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে নিজস্ব সিবিএস উন্নয়নের কাজ দ্রুত শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *