পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্পের বড় পরীক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্যারিয়ারে অন্যতম দিক হলো নাটকীয়তায় ঝোঁক এবং চুক্তি করার ক্ষমতার ওপর তার অগাধ বিশ্বাস।

তবে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানানোর ব্যাপারে নাটকীয়তা থাকলেও এক্ষেত্রে ট্রাম্পের চুক্তিবদ্ধ হওয়ার ক্ষমতার ওপর যে আস্থা, সেটি চূড়ান্ত পরীক্ষায় পড়ছে।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ট্রাম্প আগামী শুক্রবার আলাস্কায় ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলবেন। ২০১৮ সালে হেলসিঙ্কিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর দুই প্রেসিডেন্টের প্রথম স্বতন্ত্র শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে এবার।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, পুতিন নিজেই তাকে এই বৈঠকের পরামর্শ দিয়েছেন। যুদ্ধ বন্ধ করার প্রস্তাব গ্রহণে পুতিনের অস্বীকৃতিতে কতটা হতাশ হয়েছেন, ট্রাম্প তা প্রকাশ্যে বলার পরেও পুতিনকে আমন্ত্রণ জানাতে রাজি হন।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে রুশ প্রেসিডেন্টকে পশ্চিমারা এড়িয়ে চলছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযুক্ত পুতিনকে ট্রাম্প এবার আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে সেই এড়িয়ে চলার অবসান ঘটে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আলাস্কা সফরকে পুতিনের জন্য ‘ব্যক্তিগত বিজয়’ বলেও অভিহিত করেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক রেডিও সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বৈঠকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না এবং ট্রাম্প টেবিলের অন্যপাশের লোকটিকে দেখতে চান এবং বুঝতে চান যে, তিনি আন্তরিক কি না।’

ট্রাম্প বলেন, এটি একটি ‘অনুভূতিশীল বৈঠক’। তিনি আরো বলেন, শীর্ষ সম্মেলনের পরপরই জেলেনস্কি ও অন্যান্য ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলবো, যারা সবাই ‘ইউক্রেনকে তাদের ভাগ্য নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা থেকে বাদ দেওয়া উচিত নয়’ বলে জোর দিয়েছেন।

কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ফেলো লিয়ানা ফিক্স বলেন, ‘ইউরোপীয় নেতাদের অতীত অভিজ্ঞতা এই যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শেষ কথা বলা ব্যক্তি তার ওপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে অত্যন্ত তীব্র এক আকাঙ্ক্ষা রয়েছে যে, তিনিই ইউক্রেনে শান্তি ফেরাবেন। এমনকি ক্ষণিকের জন্য হলেও ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে একমত হওয়ার ছবি প্রকাশ্যে আসে।’

-‘কৌশলের সর্বশেষ পরিবর্তন’
হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি প্রক্রিয়া কঠিন মনে করছেন  এবং তার কৌশলগুলোও ব্যাপক পরিবর্তিত হয়েছে।

এর আগে হোয়াইট হাউসে ক্যামেরার সামনে বৈঠকে জেলেনস্কিকে কঠিন ভাষায় তিরস্কার করতে দেখা গেছে ট্রাম্পকে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও ওই সময় ইউক্রেনকে দেওয়া মার্কিন সহায়তার প্রসঙ্গ টেনে অকৃতজ্ঞতার অভিযোগ করেছিলেন।

এতে করে ইউক্রেন দ্রুত বুঝতে পারে যে, তাদের ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নিতে হবে এবং যুদ্ধবিরতিতে তার প্রস্তাবে স্বাক্ষর করতে হবে।

পুতিন যুদ্ধবিরতি থেকে বিরত থাকায় ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন। তার পরেও পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে রাজি হয়েছেন ট্রাম্প। রাশিয়ার রাজনৈতিক বিশ্লেষক কনস্টান্টিন কালাচেভ বলেন, ‘এ ধরনের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করাটা হবে পুতিনের জন্য বিজয় স্বরূপ। পুতিন ট্রাম্পকে উল্লেখযোগ্য কিছু দেননি এবং ট্রাম্প ইতোমধ্যে তাকে আলাস্কায় আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।’  তিনি ট্রাম্পের নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা না দেওয়াকেও রাশিয়ার জন্য ‘নিঃশর্ত বিজয়’ আখ্যায়িত করেছেন।

তবে, ট্রাম্প রাশিয়ার প্রতি তার নরম মনোভাবের সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন যে, তিনি রাশিয়ার তেলের প্রধান ক্রেতা ভারতের ওপর  শুল্কের পরিমাণ বাড়িয়েছেন।

ট্রাম্প জেলেনস্কির প্রতি কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার জন্যও চাপ দিয়েছেন। তবে,  রাশিয়া জবরদখলে নেওয়া কোনো জমি ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন জেলেনস্কি।

সিআইএ’র সাবেক রাশিয়া বিশ্লেষণ বিষয়ক পরিচালক জর্জ বিবে বলেন, ‘ট্রাম্প যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি চুক্তির রূপরেখা তৈরির সূচনা করতে পারেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পর্যায়ের এ শীর্ষ সম্মেলন এমন প্রত্যাশা জাগিয়ে তুলেছে তা পূরণ নাও হতে পারে।’

বিবে আরো বলেন, ‘ট্রাম্প এমন একটি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন, যেখানে রাজনৈতিক বিপদ রয়েছে এবং  এতে সফল হওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *