শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
বলিউড অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী নোরা ফাতেহির ফ্যান স্বামী। বিশেষত অভিনেত্রীর ফিগার তার সবচেয়ে পছন্দ। তাই প্রিয় অভিনেত্রীর মতো মেদহীন রোগা ছিপছিপে শারীরিক গঠন এবং চেহারা বানাতে নিজের স্ত্রীকে নির্মম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ভারতের উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের মুরাদনগরে এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম শিবম উজ্জ্বল।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৬ বছর বয়সি ভুক্তভোগী ওই নারীর নাম শানু ওরফে শানভি। তিনি জানিয়েছেন, চলতি বছরের ৬ মার্চ পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয় মীরাটের সরকারি স্কুলে কর্মরত ২৮ বছর বয়সী শরীরচর্চার শিক্ষক শিবম উজ্জ্বলের সঙ্গে।
তিনি দাবি করেছেন, বিয়েতে তার পরিবার প্রায় ৭৬ লাখ টাকা খরচ করে- যার মধ্যে ছিল ১৬ লাখ টাকার গহনা, ২৪ লাখ টাকার মাহিন্দ্রা স্করপিও গাড়ি এবং ১০ লাখ টাকা নগদ। তবু বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন নতুন করে আরো নগদ অর্থ, জমি ও দামি পোশাকের জন্য তাকে হয়রানি করতেন বলে জানান ওই নারী।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, বিয়ের পর থেকেই তার জীবন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। শাশুড়ি গৃহকর্মে তাকে ব্যস্ত রাখতেন, স্বামীর সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ দিতেন না। এমনকি দম্পতিকে বাইরে বের হতেও দেওয়া হতো না। একবার মশারি না টাঙানোয় শিবম ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধরও করেন। কোনো বিষয়ে আপত্তি জানালেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে গালাগালি করতেন এবং স্বামী শিবম তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন।
গৃহবধুর অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই স্বামী তাকে নোরা ফাতেহির মতো দেখতে ও শারীরিক গড়ন তৈরি করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। প্রতিদিন জোর করে তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যায়াম করাতেন শিবম। শরীরচর্চা না করলে, সেদিন খাবারও খেতে দিতেন না স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা।
শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি তাকে নিয়মিতভাবে শরীর নিয়ে অপমান করা হতো। গৃহবধুর ভাষ্যে, ‘আমার গড়ন নিয়ে স্বামী আমাকে প্রায়ই মোটা ও কালো বলত। বলত আমার মতো কাউকে বিয়ে করে তার জীবন শেষ হয়ে গেছে।’
নির্যাতনের শিকার ওই নারী আরও অভিযোগ করেন, তার স্বামী শিবম পর্নোগ্রাফি আসক্ত এবং তাকে পর্নোছবি দেখতে বাধ্য করতেন। এতে আপত্তি জানালে তার ওপর নির্যাতন করতেন। তিনি আরো জানান, শিবম অন্য নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন। একবার ‘মাহি’ নামের এক নারীর সঙ্গে তার চ্যাট ধরে ফেললে স্বামী তাকে চড় মারে।
তিনি অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, নিজের গর্ভধারণের খবর শ্বশুরবাড়িকে জানালে তারা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। পরে তার ননদ রুচি একটি ওষুধ খেতে দেন। পরে তিনি অনলাইনে খুঁজে জানতে পারেন, সেটি গর্ভপাতের ওষুধ। এর কিছুদিন পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর জানা যায়, তার গর্ভপাত হয়ে গেছে।
এরপর গত ২৬ জুলাই তিনি শ্বশুরবাড়ি ফিরে গেলে তারা তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি এবং তার গয়না ও কাপড়চোপড় ফেরত দেয়নি। বর্তমানে তিনি বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন।
নারীটি ১৪ আগস্ট গাজিয়াবাদ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে- পণদানের জন্য চাপ সৃষ্টি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, গর্ভপাত ঘটানো, ব্ল্যাকমেইল এবং বিবাহ বিচ্ছেদের হুমকির মতো গুরুতর অভিযোগ।
গাজিয়াবাদের ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ (ডিসিপি) ধবল জয়সওয়াল ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানান, স্বামী শিবম উজ্জ্বল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা (এফআইআর) নেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলছে এবং পুলিশ সব দিক খতিয়ে দেখছে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।