বুক ফুলিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপন করুন: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপদেষ্টা

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

বাংলাদেশ বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রোল মডেল উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ‘আপনারা যারা পূজার্থী, তারা সাহসের সঙ্গে বুক ফুলিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপন করবেন। আপনারা যাতে নির্বিঘ্নে পূজা পালন করতে পারেন, সেজন্য প্রশাসন সার্বক্ষণিক নিরপত্তার বিষয়ে খেয়াল রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবার সারা দেশে একটি হটলাইন চালু করা হচ্ছে, যেটির মাধ্যমে কোনো ধরনের অপরাধ উদ্বেগের সৃষ্টি হলে- তা হটলাইনে অবহিত করলে যেন সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন উপস্থিত হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যাতে সুন্দর ও শান্তিতে দুর্গাপূজা উদযাপন করতে পারেন, সেটিই সরকারের মূল এজেন্ডা। সেজন্য আগামীকাল (২১ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সারা দেশে দুর্গাপূজার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে একটি সভা আয়োজন করা হয়েছে।’
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগরীর নালাপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব উদযাপন পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত শ্রী শ্রী শারদীয় দুর্গোৎসব ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্ম উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
খালিদ হোসেন বলেন, ‘এই দেশ ছাড়া আমাদের দ্বিতীয় কোনো দেশ নেই, যাদের আছে তাদের এই দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। এই দেশ আমাদের সবার, এখানে সব ধর্মের মানুষ সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য নিয়ে চলব। এটিই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নমুনা। অন্তর্বর্তী সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে।’
আগে পূজার বরাদ্দ ছিল ২ কোটি টাকা, এবারে সেটি বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মন্দির এবং একটি পুকুরঘাট নির্মাণ করছে। ঢাকার খিলক্ষেতে মন্দিরের জন্য রেলওয়ের জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনকালে মন্দির কমপ্লেক্সের পাশে আরও একটি কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।’
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমান সরকার হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীসহ সবার পাশে থাকতে চায়। যারা সাম্প্রদায়িক, তারা কখনো মানবিক হতে পারে না। যারা ছোট মন-মানসিকতার মানুষ, তারা কখনো কারো বন্ধু হতে পারে না। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। আমাদের সবাইকে মিলেমিশে একসঙ্গে থেকে হিংসা-বিদ্বেষ এবং সব ধরনের পরশ্রীকাতরতা পরিহার করে এদেশকে সত্যিকার সোনার বাংলায় পরিণত করতে কাজ করতে হবে। কারণ, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এদেশে সব ধর্মের মানুষের অবদান অনস্বীকার্য।’
পূজায় যারা অপরাধ সৃষ্টি করতে চায়, তাদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘পূজার সময় আপনারা স্থানীয় সব মানুষকে সম্পৃক্ত করবেন, যাতে কেউ কোনো অপরাধ করতে চাইলে তাদের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিহত করা যায়। পূজায় সাধারণত জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং স্থানীয় বিরোধ থেকে কিছু অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। যারা পূজামণ্ডপ, মাজার-মন্দির, উপাসনালয়ে হামলা করে সরকারকে কলঙ্কিত করতে চায়; তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। যারা এই সমস্ত অপরাধ করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, আমরা সবাই মিলে তাদের পরাজিত করব।’
দক্ষিণ নালাপাড়া সমন্বয় পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়ন অসীত বরণ সেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সান্তু, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি শ্রী দীপক কুমার পালিত, মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রিংকু কুমার শর্মা ও দক্ষিণ নালাপাড়া মন্দির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অনিল পাল প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *