হাসিনার বিরুদ্ধে ২০তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে ২০তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ।
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।
এদিন ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজের শুরুতেই ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদকে জেরা করবেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো: আমির হোসেন। এরপর নেয়া হবে নতুন সাক্ষীর সাক্ষ্য। এ মামলায় আরো তিনজনের জবানবন্দির জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানিয়েছে প্রসিকিউশন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ নতুন সাক্ষী জবানবন্দি দেয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে, গতকাল রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে জুনায়েদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৩টায় শেষ হয়। এরপর তাকে জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী। তবে জেরা শেষ না হওয়ায় আজ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
শেখ হাসিনার এ মামলায় ৪৮ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন জুনায়েদ। তিনি ২০১৩ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ণনা দিয়েছেন। একই দিন বেলা ১১টার পর দ্বিতীয় দিনের মতো ট্রাইব্যুনালে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক  নাহিদ ইসলামকে অবশিষ্ট জেরা করেন আমির হোসেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় তার জেরা শেষ হয়।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। সাথে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান, তারেক আবদুল্লাহসহ অন্যরা।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর বেলা সোয়া ১১টা থেকে ট্রাইব্যুনালে ৪৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক। দুপুরে তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিরতি দেয়া হয়। বিরতি শেষে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাকে জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী। ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত প্রথম দিনের মতো জবানবন্দি দেন নাহিদ। একই দিন বেলা পৌনে ১১টা থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে জেরা করেন আমির হোসেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন শেখ হাসিনার মামলার অন্যতম আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তার জেরা শেষ হয় ৪ সেপ্টেম্বর। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে জুলাই-আগস্টে গণহত্যা চালানো হয়েছে জানিয়ে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। একই সাথে অজানা অনেক তথ্য ট্রাইব্যুনালের সামনে এনেছেন। ১ সেপ্টেম্বর দশম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। এদিন জবানবন্দি দিয়েছেন ছয়জন। এর মধ্যে চিকিৎসক-সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছেন।
সাক্ষীদের জবানবন্দিতে গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর বীভৎস বর্ণনা উঠে এসেছে। আর এসবের জন্য দায়ী করে শেখ হাসিনা, কামালসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা।
উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা রয়েছে। সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন ৮১ জন। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *