ঐতিহ্যের কফিনে শেষ পেরেক! দখলদারদের থাবায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের পেতার বাড়ি ব্রিজ ও সরকারি খাল

আনিসুর রহমান, সোনারগাঁ প্রতিনিধি:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ  ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পবিত্র মাটি। এই মাটির বুক চিরে শতাব্দীর সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল প্রাচীন গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড এবং তার অংশ পেতার বাড়ি (মেন্দি ভিটা) ব্রিজ। আজ সেই ইতিহাস শুধু নামেই আছে; বাস্তবে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে এক টুকরো কংক্রিটের ‘কালবাট’ যেন উন্নয়নের নামে ইতিহাস মুছে ফেলার অশুভ প্রতীক!

ব্রিজটির নিচ দিয়ে একসময় প্রবাহিত হতো শত বছরের পুরোনো সরকারি খাল — যা ছিল স্থানীয় কৃষি, পরিবেশ ও জনজীবনের রক্তনালীস্বরূপ। এখন সেই খালও নেই। ভূমিদস্যুরা একের পর এক ভরাট করে গিলে ফেলেছে সরকারি জলাধার। দখলের এই নোংরা খেলায় প্রশাসনের নীরবতা এখন সাধারণ মানুষের ক্ষোভে পরিণত হয়েছে।

একজন ক্ষুব্ধ স্থানীয় প্রবীণ বললেন,“এটা শুধু খাল দখল নয়, এটা ইতিহাস হত্যার শামিল! প্রশাসনের চোখে যেন বালু ঢেলে দিয়েছে দখলদাররা।”

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী এক চক্র প্রশাসনের আশ্রয়ে খাল দখল ও ভরাট করে আসছে। সরকারি খালের জায়গায় এখন গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা, বাণিজ্যিক ভবন ও ব্যক্তিগত বাড়ি। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব দর্শক হয়ে বসে আছে।

পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন খাল ভরাটের এই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয় ডেকে আনবে। আগামী বর্ষা মৌসুমেই আশপাশের গ্রামগুলোতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা, ফসলের ক্ষতি ও দুর্গন্ধে বসবাস অযোগ্য পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,যেখানে সরকারি খাল ছিল, সেখানে দখল করে স্থাপনা তৈরি মানে একেবারে জলপ্রবাহের গলা টিপে ধরা। প্রশাসনের উদাসীনতা এই অপরাধকে আরও উৎসাহিত করছে।”

সোনারগাঁয়ের মানুষ আজ প্রশ্ন করছে “সরকারি সম্পদ কি এখন ব্যক্তিগত ব্যবসার মাল?”

যেখানে একসময় পথচারীরা ব্রিজের নিচ দিয়ে নৌকায় চলাচল করত, কৃষকরা খালের জল ব্যবহার করে চাষাবাদ করত, আজ সেখানে শুধুই বালু, মাটি আর কংক্রিটের স্তূপ। ইতিহাস হারাচ্ছে, ঐতিহ্য মরছে, অথচ প্রশাসন নির্বিকার!

যদি এখনই দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে একদিন গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের ঐতিহ্য, পেতার বাড়ি ব্রিজ ও খালের স্মৃতি শুধুই ইতিহাসের বইয়ে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *