প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার, সুরক্ষা ও উন্নয়নে আমাদের সকলকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে –উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিজয়ের এ মাসে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মসর্গকারী এবং সকল শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান , একই সাথে জুলাই- আগস্ট ২০২৪ বিপ্লবে নিহত সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আমাদেরই আপনজন, সমাজ ও রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদেরকে সঠিক মর্যাদা, সেবা ও পরিচর্যা, শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদে পরিণত করা সম্ভব। বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মূলধারায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ইকো সিস্টেমের মাধ্যমে সম্পৃক্তকরণ এখন সময়ের দাবি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার, সুরক্ষা ও উন্নয়নে আমাদের সকলকে একসাথে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি আজ ঢাকায় মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন চত্বরে ৩৪ তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২৭ তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ধীন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আয়োজিত আলোচনা সভা, সম্মাননা প্রদান ও সংস্কৃতি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ সাইদুর রহমান খান, আইনজীবী মোশাররফ হোসেন মজুমদার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর থেকে আগত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, উন্নয়ন সহযোগী ও সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ , বিশেষ
চাহিদাসম্পন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদের অভিভাবকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ৩৪ তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২৭ তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নেতৃত্ব ও সম অংশগ্রহণে এবং
গণসচেতনতা সৃষ্টিল লক্ষ্যে সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবন্ধী দিবসে- এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ; ‘প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ি, সামাজিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করি'(Fostering disability- inclusive societies for advancing social progress).
অনুষ্ঠান এবারে প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারের আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপিত হচ্ছে। আজকের এই দিনে বিশ্বজুড়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার মর্যাদা এবং কল্যাণের কথা স্মরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন আমি মনে করি এ প্রতিপাদ্য টি বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সময়োপযোগী ও তাৎপর্যপূর্ণ। একটি দেশের টেকসই উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতি তখনই সম্ভব, যখন আমরা সমাজের সকল স্তরের মানুষকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে পারবো। কাউকে পেছনে ফেলে বা বাদ দিয়ে প্রকৃত উন্নয়ন অসম্ভব।
তিনি বলেন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি বৃহৎ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিবন্ধিত কোনো অভিশাপ নয়, বরং সঠিক পরিচর্যা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং সুযোগ পেলে তারাও হয়ে উঠতে পারে দক্ষ মানবসম্পদে।
উপদেষ্টা বলেন, আপনারা যেনে আনন্দিত হবেন যে, অন্তবর্তী কালীন সরকারে এসে এই মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পাওয়ার পর দুর্বল কাঠামোগত পরিবর্তন করেছি। অসচ্ছল, অসহায় মানুষের দোরগোড়ায় আমাদের সেবা পৌঁছে দিতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে সারাদেশে প্রতিবন্ধিতা সনাক্তকরণ জরিপ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এ পর্যন্ত আমরা ৩৮ লক্ষ ৩৫ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ১২টি ক্যাটাগরিতে চিহ্নিত করে আমাদের কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ বা সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করেছি এবং তাদের মাঝে ‘ সুবর্ণ নাগরিক’ কার্ড বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ডাটাবেজের ভিত্তিতেই আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। চলতি অর্থবছরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে আমরা ৩৪ লক্ষ ৫১ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ভাতা প্রদান করছি। এছাড়া প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে এবং ঝরে পড়া রোধে আমরা চলতি অর্থবছরে ৮১ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করছি।
তিনা আরো বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কেবল আর্থিক সহায়তা নয়, তাদের স্বাবলম্বী ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সমাজসেবা অধিদপ্তর সারাদেশে বিস্তৃত পরিসরে বিশেষায়িত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আজকের এই দিনে আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে যারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের থেরাপি, সেবা সহায়ক উপকরণ বিতরণ এবং বিশেষ করে আজকের এই তিন দিনব্যাপী ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন মেলা’র আয়োজন করেছে। এই মেলার মাধ্যমে তাদের তৈরি পণ্য ও প্রতিভা সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাই কেবল সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়। ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ’ গড়তে হলে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। রাস্তাঘাট, গণপরিবহন, অফিস- আদালত এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিবন্ধী-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে । কর্মক্ষেত্রে তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বেসরকারি সংস্থা, বিত্তবান ব্যক্তি এবং সমাজের সকলকে এ মানবিক কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
পরে তিনি বিভিন্ন কাজের অবদানে ২০ জন পুরস্কার প্রাপ্ত সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রতিবন্ধিতা উত্তোরণে কাজ করেন এমন ব্যক্তি, প্রতিবন্ধিতা উত্তোরণে কাজ করেন এমন প্রতিষ্ঠান, প্রতিবন্ধীদের সফল পিতা-মাতা, সফল
কেয়ারগিভারকে নগদ ১০ হাজার টাকা, একটি ক্রেস্ট ও একটি সনদ প্রদান করেন। এরপর তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
আজকের এই আয়োজনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং তাদের কল্যাণ ও সেবায় নিয়োজিত সংগঠনসমূহ সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে এবং প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ক্যাম্পাসে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও প্রতিবন্ধীদের হাতে তৈরি ৩২ স্টল মেলায় অংশ নিয়েছে। ৩- ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী এ মেলা সকলের জন্য সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *