Blog

জরুরি বৈঠক শেষে রাজনৈতিক দলগুলো যা জানালেন

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে আগামী শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) হতে যাচ্ছে জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। এ লক্ষ্যে দলগুলোর সঙ্গে এ সংক্রান্ত জরুরি বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশন প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসও উপস্থিত ছিলেন।বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। অনেকে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। আবার অনেকে স্বাক্ষর করবেন বলে সাফ জানিয়েছেন।

শেষ মুহূর্তে শঙ্কা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে উল্লেখ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হয়নি। নোট অব ডিসেন্ট বাস্তবায়ন কীভাবে তা খোলাসা করা হয়নি। আদেশটা কেমন হবে তাও খোলাসা নয়। গণভোটের প্রশ্নও অস্পষ্ট।’

বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া খোলাসা না করে সনদ টেকসই করা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘অস্পষ্ট থাকলে অর্জন অনিশ্চিত থেকে যাবে। স্বাক্ষর করব কি না, বিবেচনাধীন রেখেছি। সরকার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া খোলাসা করবে কি না তার ওপর নির্ভর করছে।’

স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন জানিয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির ড. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘একদিন বাকি রয়েছে, ওইদিনই দেখা যাবে স্বাক্ষর করবো কি না। তবে স্বাক্ষর নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখি না।’

নভেম্বরে গণভোটের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণভোট একইদিন হলে বিএনপি মরিয়া হয়ে চাইবে ভোট বাড়ানোর জন্য। নির্বাচনের দিনে পার্থী এবং ভোটারদের মাথা ঠিক থাকে না। সে সময় গণভোটে ভোট কম পড়বে। তাই গণভোট নভেম্বরে হতে হবে। আড়াই মাস সময় থাকবে নির্বাচনের।’

সনদের সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘যারাই ক্ষমতায় আসবে তারা বাস্তবায়ন করবে। গণভোট করার কথা আমরা বলেছি। ভোটে একটাই প্রশ্ন থাকতে হবে। নোট অব ডিসেন্ট কীভাবে রয়েছে দফাওয়ারি উল্লেখ থাকতে হবে।’

নোট অব ডিসেন্টসহ সনদ স্বাক্ষরিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণ সংসদকে এখতিয়ার দেবে। যাতে জুডিশিয়ারি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারবে না। বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে কমিশন সুপারিশ দেবে। বিএনপি সেক্ষেত্রে নির্বাচনের দিনই গণভোট চায়।’

যেসব দল নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, তা ইশতেহারে উল্লেখ করে জনগণের কাছে যেতে পারবে বলেও মত দেন বিএনপির এই নেতা।

গণভোট কখন হবে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানাই। সেইসঙ্গে নোট অব ডিসেন্টও কমিয়ে আনতে হবে।’

জুলাই সনদে সবাই স্বাক্ষর করবেন বলেও প্রত্যাশা এবি পার্টির চেয়ারম্যানের।

এদিকে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, হঠাৎ এমন বৈঠকে ভেবেছিলাম, সংকট তৈরি হয়েছে। কিন্তু সবাই আন্তরিক ছিলেন।’

দল সনদে স্বাক্ষর করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে সংকট কেটে গেছে। গণভোট ও নির্বাচন একই দিন হতে হবে।’

কয়েকটি দল পরিবেশ ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে অভিযোগ তুলে গণঅধিকারের এই নেতা বলেন, ‘তবে সবাই ঐক্যবদ্ধ রয়েছে, সেটি দেখানোর জন্য সভা ডেকেছিল। কেউ সংকট তৈরি করতে চাইলে ইতিহাসের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।’

সনদে স্বাক্ষর করবেন কি না আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে জানাবেন বলে উল্লেখ করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ। তিনি বলেন, ‘সনদে কোনো নোট অব ডিসেন্ট থাকতে পারবে না। নভেম্ভরের মধ্যে গণভোট হতে হবে।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘স্বাক্ষরের পর সরকারের দায়িত্ব থাকবে, কীভাবে বাস্তবায়ন করবে সে বিষয়টি খোলাসা করা। যেসব প্রশ্নে দ্বিমত রয়েছে, তা ইশতেহারে উল্লেখ করে পরবর্তী সংসদে তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।’

বাম গণতান্ত্রিক জোটের পাঁচ দল সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে জানান বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। তিনি বলেন, ‘সনদের পটভূমিতে সঠিক ইতিহাস উল্লেখ হয়নি। নোট অব ডিসেন্ট ঠিকভাবে আসেনি।’

বৈঠকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কাউকে আলোচনা করতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘উনারা কী গোপন করতে চেয়েছিলেন, কে জানে। স্বাক্ষর করার অবস্থায় আমরা নেই।’

মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র সংবিধানের তফসিল থেকে বাদ দিলে গণফোরাম জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।

নির্বাচনের দিন গণভোট হওয়া শ্রেয় উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘গণভোটের মাধ্যমে আগামী আইনসভাকে জনগণ কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার দেবে। সনদের অনুমোদন এবং সংসদকে দ্বৈত ক্ষমতা দেবে তারা।’

বহুমাত্রিক সংকট এড়াতে নির্বাচনের দিন গণভোটের দাবি জানিয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি। তিনি বলেন, ‘মতভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও আমরা একজায়গায় এসে পৌঁছেছি। নোট অব ডিসেন্টসহ সনদ স্বাক্ষর হতে হবে।’