আবারও পাকিস্তানের সরকার গঠনে আশাবাদী ইমরান

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন নিয়ে নাটকীয়তা চলছেই। মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) জোট সরকার গঠনে একমত হলেও এখনও আশা ছাড়েননি কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেছেন, তাঁর দল ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়েছে। এর মধ্যে অনেক আসনে তাদের কারচুপি করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে সেগুলো পুনরুদ্ধার করে সরকার গঠনে সক্ষম হবে তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।

এদিকে পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় ইমরান খান দেশটিতে চুরি করা ভোটে সরকার গঠনের ‘দুঃসাহসের’ বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন।

রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দি ইমরান বলেছেন, পাকিস্তানের জনগণ স্পষ্টভাবে তাদের রায় ঘোষণা করেছেন। আর এ কারণেই নির্বাচনে গণতন্ত্র ও সুবিচারের একান্ত প্রয়োজন। আমি চুরি করা ভোটে সরকার গঠনের দুঃসাহসিকতার বিরুদ্ধে সতর্ক করছি। এই ধরনের প্রকাশ্য দিবালোকে ডাকাতি কেবল নাগরিকদের অসম্মানই করবে না, বরং দেশের অর্থনীতিকে আরও পতনের দিকে ঠেলে দেবে।
তিনি বলেছেন, ‘পিটিআই কখনই জনগণের ইচ্ছার সঙ্গে আপস করবে না এবং আমি পিপিপি, পিএমএল-এন এবং এমকিউএমসহ জনগণের ম্যান্ডেট ছিনতাইকারী যে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিরুদ্ধে আমার দলকে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছি।

পিটিআইর মুখপাত্র রউফ হাসান জানান, ইমরান খানের নির্দেশে কেন্দ্র এবং পাঞ্জাব প্রদেশে সরকার গঠনের জন্য মজলিস-ই-ওয়াহদাত-মুসলিমিন (এমডব্লিউএম) পার্টির সঙ্গে জোট করবেন তারা।

তিনি বলেন, ইমরান খান পিএমএল-এন, পিপিপি এবং মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানের (এমকিউএম-পি) সঙ্গে সরকার গঠনের সব ধরনের আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। পাশাপাশি সংরক্ষিত আসন নিয়ে খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপি) প্রদেশে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে পিটিআইকে জোট করতে বলেছেন তিনি।

দেশটির সংবিধান অনুসারে, রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকার গঠন করতে হবে।

পিএমএল-এন যাকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী করতে চাচ্ছে সেই শাহবাজ শরিফ ২০২২ সালে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হলে কোয়ালিশন সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁকে তাঁর ভাই নওয়াজ শরিফের চেয়ে সামরিক বাহিনীর প্রতি বেশি শ্রদ্ধাশীল হিসেবে দেখা হয়। ফলে শাহবাজ প্রধানমন্ত্রী হলে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে সামরিক বাহিনীর হাতে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ভীষণ অজনপ্রিয় ছিল এবং অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়। এতে মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় ঠেকেছে।

পিটিআই সদস্যরা সংসদে বিরোধী দলে বসলেও সম্ভাব্য জোট সরকারের জন্য তারা গুরুতর চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। এই পিটিআইর কয়েক ডজন প্রার্থী ভোটের গণনা নিয়ে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে এবং ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য আদালতে লড়াইয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। অনেক পাকিস্তানি বলছেন, ভোটে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ নওয়াজ শরিফের জোটের বৈধতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পিটিআই নেতারা ‘চুরি করা ভোট’ নিয়ে সরকার গঠনের অভিযোগ করেছেন।

পিটিআইর সঙ্গে জোট করবে না জামায়াত
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট করে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার প্রাদেশিক সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল পিটিআই। তাদের সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে জামায়াত।

খাইবার পাখতুনখোয়ায় জেআইর আমির মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান গতকাল মঙ্গলবার জানান, পিটিআইর সঙ্গে জোট করবে না তাঁর দল। আর পিটিআই তাদের সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করার যে কথা বলছে, তার কোনো ভিত্তি নেই।

প্রেসিডেন্ট হতে চান জারদারি
পিএমএল-এন সরকার গঠনের সক্ষম হলে পিপিপির কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলি জারদারি দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির জিও নিউজ।

পিএমএল-এন এবং পিপিপি ইতোমধ্যে জোট সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। সেই ঐকমত্যের অংশ হিসেবেই পিপিপির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পিতা আসিফ আলি জারদারিকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জিও নিউজ।

আসিফ আলি জারদারি বিজয়ী হলে এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হবেন। এর আগে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।

জারদাবি ব্যাপকভাবে পরিচিত ‘মিস্টার টেন পার্সেন্ট’ হিসেবে। তিনি পাকিস্তান এবং বিদেশে বিভিন্ন দুর্নীতি, হত্যা এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে মোট ১১ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। তিনি একজন ধনী পলো খেলোয়াড় এবং ‘পলো প্লেয়িং প্লেবয়’ নামেও পরিচিত। তাঁর স্ত্রী বেনজির ভুট্টো পাকিস্তানের দু’বারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৭ সালে তাঁকে হত্যা করা হয়।

Related posts

Leave a Comment