মো: এনামুল হক, কলাপাড়া প্রতিনিধি:
কলাপাড়ায় তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন অতীত ও দূর্বিষহ হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে বৈশাখের এই খরতাপে কৃষকের ফসল পুড়ে হচ্ছে নষ্ট। এর ফলে বাড়তি সেচে বাড়ছে উৎপাদন খরচ। তার পরও ফলন বিপর্যয় নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষক। ফসল উৎপাদন নিয়েও তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। ৬০ শতক জমিতে বোরোর আবাদ করেছেন কৃষক জাকির গাজী। আশা ছিল অন্তত ৫০ মণ ধান পাবেন। কিন্তু এখন ১০ মণ ফলন পাবেন কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ধানের শীষ বের হওয়ার পরে অধিকাংশই চিটা হয়ে গেছে। ধান গাছ গুলো ধূসর, বিবর্ণ হয়ে গেছে। দেখে মনে হয়
আগুনে পুড়ে গেছে। এক-তৃতীয়াংশ আগেই মরে নষ্ট হয়ে গেছে।
সেচ দিয়েও খুব একটা কাজে আসছে না। শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে সেচ দিতে না দিতেই তীব্র খরায় শুকিয়ে যাচ্ছে খেত। এতে বাড়ছে কৃষকের উৎপাদন খরচ। প্রকৃতির বিরূপতায় কৃষিকাজ হচ্ছে চরমভাবে ব্যাহত।
জাকির গাজী জানালেন, দীর্ঘ অনাবৃষ্টিতে ধরাকবলিত হয়ে পড়েছে খেতের ফসল। এর ওপরে তীব্র তাপপ্রবাহে পানিতে-মাটিতে লবণাক্ততা দেখা দিয়েছ। ফলে বোরোর আবাদে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে ওই কৃষকের দাবি।
একই দশায় ওই গ্রামের কৃষক নূর হোসেন গাজী, মজিবর গাজী, শাহজাহান গাজী, সোহেল হাওলাদার। প্রত্যেকেরই বোরোর ফলন মার খেয়েছে। এ ছাড়া সূর্যমুখির ফলনও ভালো হয়নি। গাছগুলো মরে গেছে।
বীজগুলো পুষ্টি হয়নি। অনাবৃষ্টির পাশাপাশি তীব্র তাপ প্রবাহে সব যেন নষ্ট হয়ে গেছে। সবুজ খেত গুলো এখন বিবর্ণ হয়ে গেছে। কৃষকরা জানালেন, তাদের পাখিমারার খালের সেচের পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে। এ খালের পানির ওপরে দুই পাড়ের পাঁচ গ্রামের শত শত কৃষক ধানসহ ১২ মাস সবজির আবাদ করেন। খালের পানি ওঠা-নামার যুগির স্লইসটির গেট অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণেও বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
প্রবীণ কৃষক সুলতান গাজী জানান, বোরোর ফলনে বিপর্যয় হয়েছে। প্রচন্ড গরমের কারণে
গ্রীষ্মকালীন ফসলের আবাদ পর্যন্ত করতে পারছেন না। করলা, ঝিঙে ও লাউয়ের জন্য খেত তৈরি করবেন তাও পারছেন না। তার মতে আবহাওয়া এবার তাদের অনুকূলে নয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.আরাফাত হোসেন জানান, এ বছর কলাপাড়ায় মোট দুই হাজার ১৩৮ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। অনাবৃষ্টি, খরা, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে পানি ও মাটিতে লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে কৃষকের ফলনের ক্ষতি হচ্ছে। ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে, মুগ ডালেরও ক্ষতি হচ্ছে- এমন খবর জেনেছেন তারা।