মুশরিকের পরিচয় এবং তাদের জন্য আল্লাহ পাকের ফয়সালা এবং মোমেনগণের প্রতি নির্দেশ।
– ডাঃ মৌলভী কাজী আবদুর রহমান
আমরা জানি, মহান আল্লাহতায়ালার সাথে কাউকে শরীক করা বা কাউকে তাঁর সমগুণ স¤পন্ন মনে করাকেই শিরক বলে। আর যে ব্যক্তি শিরক করে তাকে বলে মুশরিক। এ ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন-
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরিক করে আল্লাহ তার জন্য বেহেশত্ হারাম করেছেন এবং তার স্থান দোজখে।” (সুরা মায়েদা)
মাসআলা:-
১। মুশরিক মাত্রই জাহান্নামী। তাদের জন্য দোয়া করা হারাম (আল্লাহ পাকের নিষেধ) যদিও সে তার নিকটতম আÍীয় হয়ে থাকে। হযরত নুহ (আঃ) নিজ সন্তানের জন্য দোয়া করেছিলেন বলে আল্লাহর তরফ হতে তাঁর উপর ধমকি এসেছিলো (দোয়া করতে নিষেধ আসে)। একজন মুসলমান আল্লাহ পাকের সঙ্গে কাউকে শরীক করার সঙ্গে সঙ্গে বেঈমান হয়ে যায়। তখন তার মধ্যে ঈমানের অংশ বিশেষও থাকে না। শুধু তাই নয়, তার সকল আমল (নেক কাজ) বাতিল হয়ে যায়।
হযরত ইমাম আবু হানিফা (রাঃ)- এর মতে মুশরিকগণ তওবা করে পুনরায় ঈমান আনয়ন করলেও তার অতীতের সকল ফরজ, ওয়াজিব ইবাদতগুলি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে তাকে ঐ এবাদতগুলো দোহরাতে হবে। এমনকি তার স্ত্রীকে ও দোহরাতে হবে। কারণ, শিরককারী শেরেক করার সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী হরাম হয়ে যায়। (আকায়েদে নছবী ও যাওয়াহের)
তাই প্রতিটি মুসলিম নর-নারীকেই এই ঈমান নষ্টকারী শিরক ও কুফরী কাজগুলি স¤পর্কে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। ভাল করে সব জেনে শুনে ঈমানকে রক্ষা করতে হবে।
আল্লাহর দেয়া হায়াত, আল্লাহর দেয়া বাকশক্তি ও আল্লাহর দেয়া কর্মক্ষমতা লাভ করে আমরা দুনিয়াতে চিন্তা ভাবনা, কথা বার্তা, কাজ কর্ম ইত্যাদি করে থাকি। কিন্তু এই চিন্তা ভাবনা বা কাজ কর্ম কোন্ আকীদায় করতে হবে সে সম্বন্ধে আমাদের ¯পষ্ট কান ধরণা নেই- যা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। কোন কাজের ফল কি হবে, কোন ধরনের কথায় ঈমান নষ্ট হবে, কি কাজ করলে মানুষ কাফির বা বেঈমান হয়ে মৃত্যু বরণ করবে এবং মৃত্যুর পর আখিরাতের অনন্তকাল জাহান্নামের আযাবে পতিত হবে, এমনকি তওবার নসীব পর্যন্ত হবে না, সে সম্বন্ধে অবশ্যই পবিত্র কোরআন ও রাসুলের হাদিস থেকে জেনে নেয়া জরুরী দরকার।
আর হায়াত থাকতে জাহান্নাম হতে মুক্তির আশায় প্রতিটি মুসলমানের উচিত কাল বিলম্ব না করে আল্লাহর দরবারে খাঁটি তওবা করা এবং এ সকল সর্বনাশা ঈমান নষ্টকারী কাজ সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করে খালেছ অন্তরে আল্লাহ পাকের অসন্তুষ্টি ও জাহান্নামের কঠিন আযাব হতে নিজকে বাঁচানোর চেষ্টা করা।
অন্তরে আল্লাহর কঠিন আযাবের ভয় জাগ্রত করতঃ ইখলাসের সাথে ভয়ার্ত হৃদয়ে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে চোখের পানিতে বক্ষ প্লাবিত করে এবং ভবিষ্যতে আর অন্যায় না করার ওয়াদা করতঃ (তওবাতুন নাসুহা) খাঁটি তওবা করতে হবে। একমাত্র এখলাস পূর্ণ খাঁটি তওবাই আল্লাহর কাছে বান্দার ক্ষমা ও মুক্তিলাভের প্রধান উপায়। আল্লাহর হাবীব বলেন-
“যার অন্তঃকরণের মধ্যে এক সরিষা পরিমাণ অহংকার (আÍগর্ভ) থাকবে, সে বেহেশতে যেতে পারবে না।”
তিনি আরো বলেন-
“তিনটি দোষে মানুষ ধ্বংস হয়ে যায়। যথা-১) নিজ মনে যা চায় তাই করা ২) শুধু নিজের স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রাখা ৩) শুধু নিজের কাজ ও নিজের কথাকে ভাল মনে করা।”
আসলে এগুলো সবচাইতে নিকৃষ্ট কাজ। অহংকারের একটি শাখাই হলো আÍ গর্ব। আর রিয়া ও একটি মারাÍক পাপ। একে শিরকে আজগর বা ছোট শিরক বলে।
অন্যের তুলনায় নিজকে ভাল মনে করা, অন্যের সামনে নিজের কাজগুলি, নিজের ইবাদতকে এমন ভাবে ফলাও করা বা দেখানো, যা দেখে লোকে ভাববে- লোকটি বড় আবেদ, বড় আল্লাহওয়ালা, বড় পরহেজগার, বড় মুসল্লি ও মুত্তাকিন, লোকের প্রশংসা পাওয়ার ইচছায় অথবা লোক দেখানো, এ ধরণের ইবাদত মানুষকে জাহান্নামের জ্বালানীতে পরিণত করে। তাই প্রত্যেককেই ভাবতে হবে আমি আল্লাহর গোলাম, যার নিজস্ব কোন সত্ত্বা নেই, নেই কোন স্বাধীনতা। শুধু আল্লাহ পাকের ফর্মাবদ্দারী করাই যার জীবনের ধর্ম ও কর্ম। সুতরাং তার মধ্যে আÍ-গর্ব বা অহংকার কিসের?
আল্লাহ পাক বলেন-
“তোমরা যদি প্রকৃত মুমিন হও তবে আল্লাহ পাকের উপর নির্ভশীল হয়, তাওয়াক্কুল পুরা রাখ।”
এ বিষয়ে আল্লাহর হাবীব বলেন- “যখন তুমি কিছু চাও তবে আল্লাহর কাছে চাও, আর যদি সাহায্য প্রার্থনা কর তবে আল্লাহর দরবারেই কর।”
মানুষ মাত্রই অভাবগ্রস্থ এবং অক্ষম। সর্বদা সে অন্যের মুখাপেক্ষী। কিন্তু সে যদি কোন মানুষ বা আর কারো মুখাপেক্ষী না হয়ে স¤পর্ণভাবে এক আল্লাহরই মুখাপেক্ষী হয় এবং আল্লাহ পাক তাকে যখন যে অবস্থায় রাখেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকেন তকে তাকে মুতাওয়াক্কিল বা নির্ভশীল বলে।
আল্লাহর হাবীব আরো বলেন-
“বান্দা যদি স¤পূর্ণ ভাবে আল্লাহর প্রতি নির্ভশীল হয় তবে এমন ভাবে তার রুজি মিলবে (এবং সকল কাজের ফয়সালা হবে) যেমনি ভাবে পাখিদের রুজি মিলে থাকে।”
একমাত্র আল্লাহর প্রতি ভরসা কারীর যাবতীয় অভাব-অভিযোগ প্রয়োজনীয় সব চাওয়া-পাওয়া স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজ দায়িত্বে পূর্ণ করে থাকেন। ইখলাস (বিশুদ্ধ নিয়্যত) ও তাকওয়া মানুষের অন্তঃকরণের নেক আমলের শক্তি পয়দা করে, অন্তঃকরণকে পবিত্র করে, নেক আমলের উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।
আল্লাহর হাবীব (সাঃ) বলেছেন-
“নিশ্চয়ই সমস্ত ভাল কর্মের (পারলৌকিক) ফলাফল নিয়্যতের বিশুদ্ধতার উপরই নির্ধারিত হয়ে থাকে বা নির্ভরশীল।”
কোন কাজ করার আগে প্রথমেই দেখতে হবে কাজটি করার জন্য আল্লাহ পাক নির্দেশ দিয়েছেন কিনা? নির্দেশ দিয়ে থাকলে নবী করিম (সাঃ) কি পদ্ধতিতে করতে বলেছেন বা নিজে করেছেন- সে বিষয়টি আগে ভাল ভাবে জেনে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বান্দা যা করবে তার সকল কাজ একমাত্র তার মনিব রাব্বুল আলামীনকে রাজি করার উদ্দেশ্যে। এরূপ নিয়্যতকেই এখলাস বলে। এখলাস পয়দা হয় খাঁটি নিয়্যত ও তাকওয়া হতে (আল্লাহর পরিচয় ও ভয় হতে)। এখলাসের সাথে ইবাদত কারীকে মুখলিস বলে। মুখলিসগণই সুফি ও সত্যবাদী। আল্লাহর প্রিয় বান্দা। নবী করিম (সাঃ) এর খাঁটি উম্মত।
(চলবে……….)