শুভদিন অনলাইন ডেস্ক:
‘আমার বেটা রাস্তায় গুলিবিদ্ধ ছেলেদের পানি খাওয়াতে গিয়েছিল। হেলিকপ্টার থেকে তিনটি গুলি করে তাকে মেরে ফেলল। হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসা পেল না। বেটা আর ফিরে আসল না। গুলিসহ তারে কবর দেওয়া হলো। আমি কার কাছে বিচার চাইব?’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে পড়ে ঢাকার রামপুরায় গুলিবিদ্ধ আলমগীর শেখের মা।
জীবিকার তাগিদে ২০ বছর আগে ঢাকায় যান কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কসবা গ্রামের আলমগীর শেখ। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। বাবা ইজারুল হক, মা আলেয়া খাতুন, স্ত্রী রিমা খাতুন, মেয়ে তুলি খাতুন (১১), ছেলে আব্দুল আওলাদ (৭) ও ছোট ভাই আজাদ হককে নিয়ে তাঁর সংসার। অন্য ভাইয়েরা আলাদা থাকেন।
আট বছর ধরে রামপুরা এলাকায় হেলথকেয়ার ফার্মাসিটিউক্যালের গাড়িচালক হিসেবে কাজ নেন আলমগীর শেখ। স্বল্প আয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দেওয়া তাঁর জন্য কষ্টকর ছিল। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে গাড়ি চালানোর পাশাপাশি পাঠাও অ্যাপসের মোটরসাইকেল চালাতেন। শুক্রবার পাঠাওয়ের মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন। ঢাকার রামপুরা বিটিভি ভবনের সামনে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ চলার সময় গোলাগুলির মধ্যে পড়ে যান। সে সময় হেলিকপ্টার থেকে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে ছোড়া গুলিতে কয়েকজন লুটিয়ে পড়েন। পানির বোতল নিয়ে তাদের পানি পান করাতে যান আলমগীর। সে সময় হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। তাঁকে কাছের হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসক না থাকায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সেখানে মারা যান তিনি। ময়নাতদন্ত ছাড়াই গত শনিবার গভীর রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়িতে তাঁর লাশ নিয়ে আসেন কোম্পানির লোকজন। পরদিন রোববার সকালে গ্রামের কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার কসবা গ্রামে আলমগীরের বাড়িতে দেখা যায় স্বজন-এলাকাবাসীর ভিড়। অঝোরে কাঁদছেন মা আলেয়া খাতুন। পাশেই বাকরুদ্ধ বাবা। স্বজনরা তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন।
আলমগীরের বাবা ইজারুল হক বলেন, ‘আমার ছোট দোকান। বেটার টাকায় ছোট ছেলের পড়াশোনাসহ ছয়জনের সংসার চলত। তারও দুটি সন্তান রয়েছে। এখন কে তাদের দেখবে?
আলমগীরের স্ত্রী রিমা খাতুন বলেন, চাকরির টাকায় সংসার চলত না। অবসরে পাঠাও মোটরবাইক চালাতেন। এখন তো সব শেষ। শ্বশুর-শাশুড়ি, ছেলে-মেয়ে নিয়ে কী খাব?
ছোট ভাই আজাদ হক জানান, বন্ধুরা ভাইকে হাসপাতালে নিলেও ডাক্তার ছিল না। চিকিৎসা পায়নি ভাই। শরীর থেকে গুলিও বের করা হয়নি। গুলিসহ ভাইকে কবর দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম জানান, বিক্ষোভে ক্ষতিগ্রস্ত স্বজনের খোঁজখবর নেওয়াসহ তালিকা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে কোনো নির্দেশনা এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।