শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
কোটা সংস্কার আন্দোলনে হতাহতের প্রতিবাদে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে রাজধানীতে আটটি এলাকায় বিক্ষোভের চেষ্টা করেছেন বিক্ষোভকারীরা। তবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাঁদের দাঁড়াতে দেয়নি। এ সময় পুলিশ অন্তত ২৬ জনকে আটক করেছে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিক্ষোভকারীরা আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুরের ইসিবি চত্বর, সায়েন্স ল্যাব, পল্টন, ধানমন্ডি স্টার কাবাব, নিউমার্কেট, বাড্ডার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, মিরপুর ১০ নম্বর এবং সেগুনবাগিচায় জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের ধাওয়া দিলে তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ সময় ওইসব এলাকার কিছু সড়ক বন্ধ করে ডাইভারশন করে দেয় পুলিশ।
এর আগে গতকাল রোববার রাতে সারা দেশে ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেন তিন সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ, মাহিন সরকার ও সহসমন্বয়ক রিফাত রশীদ।
ঢাকায় যেসব এলাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণার কথা ছিল, সকাল থেকে সেসব এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং কোথাও সেনা টহলও দেখা গেছে। পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হেলিকপ্টারের টহলও দেখা গেছে।
বিক্ষোভ কর্মসূচির সময় মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁরা আদৌ বিক্ষোভকারী ছিলেন কি না তা নিশ্চিত করেনি পুলিশ। তবে পুলিশ দাবি করেছে, তাঁরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সি সাব্বির বলেন, সকাল থেকেই মিরপুর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ মোতায়েন ছিল। এ সময় সন্দেহভাজন ১০ জনকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশের ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বিক্ষোভকারীরা। ছবি: জাহিদুল ইসলামপুলিশের ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বিক্ষোভকারীরা। ছবি: জাহিদুল ইসলাম
অপরদিকে, ১২টার দিকে মিরপুরের ইসিবি চত্বরে শিক্ষার্থীদের ৫০-৬০ জনের একটি দল জড়ো হয়ে বিক্ষোভের চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ ছিল সেখানে দুই শতাধিকের বেশি। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভের চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের ধাওয়া দেয়, লাঠিপেটা করে। শিক্ষার্থীরা গলিতে ঢুকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন, ওই এলাকা থেকে অন্তত পাঁচজনকে আটক করে।
ধানমন্ডির স্টার কাবাবের সামনেও বিক্ষোভ করার চেষ্টা করেছেন আন্দোলনকারীরা। তবে বিক্ষোভ করার আগেই পুলিশ আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। এ সময় ধানমন্ডি ১, ২-সহ বিভিন্ন সড়কে পুলিশ তল্লাশি শুরু করে। পরে ধাওয়া করে আন্দোলনকারীদের ১০ জনকে আটক করে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার মো. রেফাতুল ইসলাম বলেন, ধানমন্ডি এলাকা থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে।
বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী লাঠিপেটার শিকার হন। ছবি: জাহিদুল ইসলামবেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী লাঠিপেটার শিকার হন। ছবি: জাহিদুল ইসলাম
সায়েন্স ল্যাবে শিক্ষার্থীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে দুপুরে পুলিশ তাঁদের ধাওয়া দেয়। এ সময় চারজনকে সেখান থেকে আটক করা হয়। মিরপুর সড়ক পুলিশ বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া কাঁটাবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুযায়ী বাড্ডার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে দুপুরে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে দুজনকে গাড়িতে তোলে। তবে তাঁদের আটক বা গ্রেপ্তারের বিষয়ে কিছু জানায়নি পুলিশ।
বাড্ডা এলাকায় দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ কমিশনার রাজন কুমার সাহা বলেন, কোটা আন্দোলনকারীরা তাঁদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন। এখন যাঁরা মাঠে নামার চেষ্টা করছেন, তাঁরা নাশকতার চেষ্টা করছেন। জনগণের নিরাপত্তার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সায়েন্স ল্যাব থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। ছবি: জাহিদুল ইসলামসায়েন্স ল্যাব থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। ছবি: জাহিদুল ইসলাম
বাড্ডা ছাড়াও পল্টন এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বিক্ষোভ শুরুর আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে আটক করে শাহবাগ থানা-পুলিশ।
এর আগে গতকাল রোববার রাতে ডিবি হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামসহ ছয়জন সমন্বয়ক ভিডিওবার্তায় কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তবে কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ এসএমএসে বলেন, ‘ডিবি কার্যালয়ে সমন্বয়কদের জিম্মি করে ব্ল্যাকমেল করে এই লিখিত বক্তব্য পাঠ করানো হয়েছে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিবৃতি আদায় ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না।’