‘বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি’

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার সেনা তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে ‘ ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের গণহত্যার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনার বিচার ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে’ এক সমাবেশ ও আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি জানান।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে শুক্রবার শপথ নিয়েছেন লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর, তার নেতৃত্বে একটা ইনকোয়ারি হয়েছিল বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে। তিনি সঠিকভাবে কারণ এবং সমাধান বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে নাই। আমরা চাই, তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত যে সত্য অনুসন্ধান রিপোর্ট তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক।
তিনি বলেন, বিডিআর এ মেধাবী চৌকস সেনা অফিসারদের পোস্টিং দেয়া হয়েছিলো। এদেরকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের কারণে তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দেখছি, এই হত্যাকাণ্ডের যে বিচার হচ্ছে দীর্ঘসূত্রিতা, ভেরি স্লো। এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত এর বিচার শেষ হবে না। অতি দ্রুত প্রয়োজন লাগলে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করে যাদের যাদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে প্রত্যেককে ঝুলিয়ে দেন। তাহলে নিহতদের আত্মা শান্তি পাবে।
মেজর হাফিজ বলেন, ভারতকে বলতে চাই, আপনারা আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন, সেজন্য আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। লড়াই করেছেন, আমাদের পাশাপাশি যুদ্ধে করেছেন।
কিন্তু এদেশের প্রভু হওয়ার চেষ্টা করবেন না, জনগণের বিপক্ষ হওয়ার চেষ্টা করবেন না। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকবে, কিন্তু কোনো রকমভাবে আমাদের দেশকে, সাধারণ মানুষকে সম্পর্কে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করবেন না। আমরা চাই, বন্ধুত্ব হবে জনগণের সাথে, সুতরাং বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে বলছি, বাংলাদেশকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করবেন না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ইতিহাসের সবচাইতে বড় ঘাতক, এহেন ঘটনা নাই করে নাই, কত মায়ের বুক যে খালি করেছেন, আমরা আজকে মুক্তিযোদ্ধাদের এই সভা থেকে দাবি করব, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে। ভারতকে বলব, যদি বন্ধুত্ব করতে চান, তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠান।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সেনাবাহিনী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কি করে অপেক্ষায় ছিলাম। ২রা আগস্টে বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধানকে আমি একটা এসএমএস পাঠিয়েছিলাম, জনগণের সঙ্গে থাকতে এবং বিপ্লবে যোগ দিতে। আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু মাহেন্দ্রক্ষনে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে সরানোর ব্যাপারে সঠিক ভূমিকা রেখেছে, সেজন্য আমি তাদেরকে অভিবাদন জানাই। আমাদের যে দাবি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নামে যে কেন্টনমেন্ট করা হয়েছে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে স্থান পাওয়া হাফিজ উদ্দিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, শুক্রবার আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য পুত্র তারেক রহমান আমাকে টেলিফোন করেছিলেন। তাকে একটা কথা বলেছি, যেদিন নির্বাচন হবে, ইনআশাল্লাহ বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে। কিন্তু আমরা যেন আওয়ামী লীগ না হই। আমরা জিয়াউর রহমানের বিএনপি থাকবো, কোনো চাঁদাবাজি, কোনো দখলবাজি, কোনো দুর্নীতি আমাদের দলে কেউ করতে পারবে না। এখনো কেউ এসব করতে পারবে না। বিএনপি এসবের বিরুদ্ধে।
সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা দলের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। এগুলো হচ্ছে, শেখ হাসিনার দেশে ফিরিয়ে এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার, সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার সাথে জড়িত পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিচার, ভুয়া ৫০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল, জামুকা (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) বাতিল, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সকল শহীদের জাতীয় বীর ঘোষণা এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন এবং অসচ্ছল পরিবারকে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা প্রদান।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, ফজলুর রহমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুর প্রমুখ বক্তব্যে রাখেন।

Related posts

Leave a Comment