সাধারণ বীমা গিলে খাচ্ছে এমডি হারুন-জিএম শাহ আলম-ডিজিএম বারেক চক্র

বিশেষ প্রতিনিধি:

বিমান বাংলাদেশের পূর্ন:বীমার ৪শ কোটি টাকার একটি টেন্ডার কাজ নিজের পছন্দের একটি অখ্যাত ঠিকাদার কোম্পানীকে পাইয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকার কমিশন হাতিয়ে নেন সাধারন বীমা কর্পোরেশনের মুজিবসেনা তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান। এমন আরো অনেক ভয়াবহ দুর্নীতিতে সিন্ডিকেটবদ্ধ হয়ে প্রতিষ্ঠানটির অর্থ হরিলুটে সক্রিয় ভুমিকা রাখেন অর্থমন্ত্রনালয়ের তৎকালীন উপ-সচিব সাধারন বীমার পরিচালক হারুন-অর-রশীদ পাশা, সাধারন বীমা কর্পোরেশনের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার এস এম শাহ আলম, ডিজিএম আব্দুল বারেক সহ ২০ জনের একটি দুর্নীতিবাজ চক্র। ১৬ লাখ ৯৫ হাজার ৪০৭ টাকা তসরুফের দায়ে এই চক্রের ২০ জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রনালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান ২৮ মার্চ-২০১৭ তারিখ সাধারণ বীমার এমডি শাহরিয়ার আহসানকে চিঠি দিলেও কারো বিরুদ্ধেই কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ডিজিএম আব্দুল বারেক,তার স্ত্রী ডিজিএম শাহা গনি, এজিএম নাজিম উদ্দিন আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ একাধিকবার তদন্তে সত্য প্রমানিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা না নিয়ে এমডি শাহরিয়ার আহসান উল্টো তাদেরকে গুরুত্বপূর্ন টেবিলে পদায়ন দিয়েছেন। এসব বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় অসংখ্য সংবাদ প্রকাশিত হলেও হাসিনার সৈনিকেরা জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে রয়ে গেছে বহাল তবিয়তে। এমন সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলোতে জয়বাংলা শ্লোগান ছিলো তাদের কাছে দুর্নীতি করার লাইসেন্স। শাহরিয়ার আহসান বীরদর্পে দূর্ণীতি করে চাকুরীর মেয়াদ শেষে অবসরে চলে গেলে তার আসনে যোগদান করেন আরেক মুজিবসেনা সৈয়দ বেলাল হোসেন। ছাত্রলীগ থেকে উঠে আসা এই লোক জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে চেয়ারে বসেই বিনা অপরাধে একাধিক ছোট পদের কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে নিজের ক্ষমতার জানান দেন। অথচ তদন্তে প্রমানিত অপরাধী ডিজিএম বারেক চক্রের বিরুদ্ধে দুদকের আদেশে পূর্ন:তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করে রাখেন এবং বারেকের হাত দিয়ে সাধারন বীমায় দুর্নীতির জাল বিস্তার করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বারেকের গডফাদার সাধারন বীমার তৎকালীন পরিচালক হারুন-অর-রশীদ পাশা ও এমডি বেলাল হোসেন সিন্ডিকেট গড়ে ২০ কোটি টাকা কমিশনের বিনিময়ে লুটের রানী হাসিনার ক্যাশিয়ার মেয়র তাপসের নির্দেশে ইউনিয়ন ব্যাংককে নিয়মবর্হিভুতভাবে সাধারন বীমার ফান্ড থেকে ২শ কোটি টাকা এফডিআর প্রদান করেন। এমডি বেলাল হোসেন জানতেন এই টাকা আর কখনো সাধারন বীমার ফান্ডে ফেরত আসবে না। তাকেও কোন ঝামেলা পড়তে হবে না। আবার পুরষ্কার হিসেবে রয়েছে পদোন্নতি। ঘটেছেও তাই, বেলাল হোসেনকে এমডি পদ থেকে সরিয়ে পদোন্নতি দিয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে বসিয়ে দেন মেয়র তাপস। আবার বেলালের পদে টুস করে বসে পড়েছেন জয়বাংলার শ্লোগানধারী আরেক মুজিবসেনা হারুর-অর-রশীদ। আর পরিচালক হারুন পাশার চেয়ারে বসেছেন বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের যুগ্ন-সচিব আবদুছ সামাদ আল আজাদ। এরাও হেঁটেছিলেন উত্তরসুরি শাহরিয়ার ও বেলালের পথ ধরেই। দুদক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরের আদেশে ২বছরের নাটকীয় তদন্তের মাধ্যমে ডিজিএম বারেক চক্রের বিরুদ্ধে আরো গুরুত্বপূর্ন অপরাধ প্রমান করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে সাধারন বীমার একটি তদন্ত কমিটি। অথচ স্বেচ্ছাচারী জেনারেল ম্যানেজার এস এম শাহ আলম ওই প্রতিবেদনটি বোর্ড সভায় এনে আবারো একক তদন্তের দায়িত্ব দেন পরিচালক আবদুছ সামাদ আল আজাদের কাছে। তবে স্বল্প সময়ে আজাদের তদন্তে ঘটে আশ্চর্যজনক ঘটনা। পরিচালক আজাদ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ডিজিএম বারেক চক্রকে সকল অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। এখন প্রশ্ন হলো পূর্বে যারা তদন্ত করেছেন তারা কি ভুল করেছেন। যদি ভুল করে থাকেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না। তবে এবিষয়ে কথা বলতেই নারাজ নতুন এমডি হারুন-অর-রশীদ। এমডি হারুন-অর-রশীদ, পরিচালক আবদুছ সামাদ আল আজাদ ও ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার এস এম শাহ আলম সিন্ডিকেটের ধারাবাহিক দূর্নীতি অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় মৃতপ্রায় সাধারন বীমা কর্পোরেশন। তবে এদের শেষ রক্ষা হয়নি। ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দুর্নীতির সাম্রাজ্য রেখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে কাঠালরানী হাসিনা। প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেই এসব চোর-বাটপার-লুটেরাদের মাধ্যমে ধ্বংস করে রেখে গেছেন হাসিনা। আর এই ধ্বংস স্তুপের উপরে দাড়িয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন বৈষম্যে শিকার সৎকর্মকর্তারা।
২০আগষ্ট-২০২৪ তারিখে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুন-অর-রশীদ ও চেয়ারম্যান দুলাল কুষ্ণ শাহার অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন পদোন্নতিসহ নানা দাবি-দাওয়া বঞ্চিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, বছরের পর বছর ধরে তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। কর্পোরেশনে দীর্ঘদিন ধরে জিএম পদ খালি থাকা সত্ত্বেও কাউকে পদোন্নতি না দেয়ায় নিচের পদ থেকেও কেউ পদোন্নতি পাচ্ছেন না। বরং ভারপ্রাপ্ত জেনারেল এস এম শাহ আলমকে আরো ৩টি পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে। এতে তার দ্বারা সঠিক সময়ে সঠিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না এবং তিনি চরম স্বেচ্ছাচারিভাবে কার্যক্রম পরিচালিত করে আসছেন। ফলে বিক্ষোভকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসবিসি’র চেয়ারম্যান দুলাল কৃষ্ণ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুন-অর-রশীদ সহ দুর্নীতিবাজদের চাকুরী থেকে ইস্তফা দেওয়ার দাবি জানান। তারা আরো বলেন, যদি যথাসময়ে পদোন্নতি না দিলে এবং এসবিসিতে সংগঠিত অনিয়ম দুর্নীতির সঠিক তদন্ত করা না হয় তাহলে তারা কর্মবিরতিতে যাবেন।
এসব বিষয়ে জানতে একাধিকবার জেনারেল ম্যানেজার এসএম শাহ আলমের অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি এবং এমডি হারুন-অর-রশীদ এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি।

Related posts

Leave a Comment