শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মবিরতি পালন করছেন চিকিৎসকেরা। অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ তুলে এক চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় হাসপাতালটির জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগসহ সব ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা। এ সময় হাসপাতালে শত শত রোগীর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ দিকে বিষয়টি সমাধানের জন্য বেলা সোয়া ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক সব বিভাগের প্রধানসহ চিকিৎসকদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসেছেন।
আজ রোববার সকালে চিকিৎসকেরা কজে যোগ দিলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান তারা। সবশেষ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জরুরি বিভাগের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তাদের কক্ষ বন্ধ করে দেন। সেই সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয় জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টার।
এরপর থেকেই ঢাকা মেডিকেলের সামনে ভিড় বাড়তে থাকে রোগীদের। চিকিৎসক না পেয়ে হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে চলে গেছে দেখা গেছে অধিকাংশকে।
নরসিংদী থেকে সুমন নামে এক রোগীকে নিয়ে এসেছেন স্বজনরা। তবে হাসপাতাল আসার পর চিকিৎসক না পেয়ে তাঁরা অ্যাম্বুলেন্স করে অন্য হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
সুমনের ভাই মো. কবির হোসেন বলেন, ‘সকালেই নরসিংদী হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল পাঠানো হয় রোগীকে। এখানে আসার পর দেখি জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টার বন্ধ। ডাক্তারদের রুমও সব বন্ধ করে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি করছেন এটি শুনে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। সেখানেও চিকিৎসক আছেন কিনা জানি না।’
সিয়াম নামে দুই বছরের শিশুকে নিয়ে আসেন তার বাবা-মা। জরুরি বিভাগের সামনে তাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা যায়। শিশুটির মা বলেন, প্রচণ্ড জ্বর হচ্ছে শিশুটির। এ জন্য সকালে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। তবে এখনো চিকিৎসক দেখাতে পারিনি। কখন দেখাতে পারব তাও জানি না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, আজ সকাল ৮টার পর থেকে সব বিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়েছে চিকিৎসকেরা। এতে জরুরি বিভাগে রোগীরা ভোগান্তিতে পরে।
এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে গতকাল শনিবার এক চিকিৎসককে মারধর করা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেডিকেল শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকেরা অভিযুক্তকে ধরে শাস্তি নিশ্চিত করতে ২৪ ঘণ্টা আলটিমেটাম দেন। তা না হলে হাসপাতালে শাটডাউনের ঘোষণা দেন। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘোষণা দেন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা।
বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টার।
শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকেরা বলেন, মাঝে মধ্যেই হেনস্তা ও মারধরের শিকার হন চিকিৎসকেরা। রোগী মারা গেলে অবহেলা, ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে এমন অভিযোগ শোনা যায়। এমনই ঘটনা ঘটেছে হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে। অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ এনে ইমরান নামে এক চিকিৎসককে মারধর করে কিছু শিক্ষার্থী। কিন্তু ওই রোগীর বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। কয়েক দিন আগেও জরুরি বিভাগে এক চিকিৎসক হেনস্তার শিকার হোন।
তারা শনিবার রাতে জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত করে শাস্তি নিশ্চিত না করলে সব চিকিৎসক মিলে হাসপাতালে স্ট্রাইক করবেন। রাত ১০টা থেকে ঢাকা মেডিকেলসহ দেশের সকল হাসপাতালে চিকিৎসকদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান তাঁরা।
এ সময় কলেজর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. কামরুল আলম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, ‘তারা দুইভাবে অপরাধ করেছে, একটা ফিজিক্যাল অ্যাসাল্ট, আরেকটা সরকারি কাজে বাধা দান। আমাদের একটু সময় দিলে দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’
এর আগে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহসানুল ইসলাম দীপ্ত (২৪) নামে এক শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এই ঘটনায় চিকিৎসার অবহেলা মৃত্যুর অভিযোগ এনে এক চিকিৎসককে মারধর করে কিছু শিক্ষার্থী।
নিহত শিক্ষার্থীর বড় বোন সানজিদা আফরিন জানান, তাদের বাড়ি গাইবান্ধা সদরে। বাবার নাম শহিদুল ইসলাম। বর্তমানে মোহাম্মদপুর এলাকায় ভাড়া থাকেন। দীপ্ত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি) নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। শুক্রবার রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে কুর্মিটোলা যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ন। পরে পথচারীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। আজ দুপুরের দিকে খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে এসে জানতে পারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে দীপ্ত মারা গেছে।
ক্যান্টনমেন্ট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আগস্টিন মিলটন ডি কস্তা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ওই শিক্ষার্থী। স্বজনদের কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ বিনা ময়নাতদন্তে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।