স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তা ও ৩য়-৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের স্বীকার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তা ও ৩য়-৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন বলে জানান।
এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর আবেদন জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
তাদের দাবিগুলো হচ্ছে -স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অনেক কর্মকর্তা/কর্মচারী দীর্ঘ সময় ধরে একই শাখায় দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের অনেকে একই শাখায় কেউ দীর্ঘ ১৯ বছর, কেউ দীর্ঘ ১০ বছর, কেউ দীর্ঘ ৮ বছর আবার অনেকেই চাকুরীর শুরু থেকেই একই শাখা/দপ্তরে কাজ করছেন। কোন অজানা কারণে তাদের বদলি করা যায় না বা বদলি আদেশ হলেও সেটা কর্যকর হয় না। আমাদের দাবি এ বিভাগের কোন কর্মকর্তা/কর্মচারী যেন কোন নির্দিষ্ট শাখায় ৩ বছরের অধিক দায়িত্বে থাকতে পারবে না বলে বিধান আছে।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মাননীয় উপদেষ্টার দপ্তর, সিনিয়র সচিবের দপ্তর এবং প্রশাসন অনুবিভাগের শাখাগুলোতে দীর্ঘদিন যাবৎ একই ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তা ও ৩য়-৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীবৃন্দ বহাল থাকায় ইন্টার্নাল ট্রেনিং, অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রশিক্ষন এবং বৈদেশিক প্রশিক্ষণে তাদের নাম বার বার মনোনয়ন পাচ্ছে। এছাড়া পবিত্র হজ্ব টীমেও তারা একাধিকবার যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। ফলে বৈশ্যমের শীকার হচ্ছে এ বিভাগের অন্যান্য শাখায় কর্মরত কর্মচারীরা। এছাড়াও মাননীয় উপদেষ্টার দপ্তর, সিনিয়র সচিবের দপ্তর এবং প্রশাসন অনুবিভাগের শাখাগুলোতে অতিরিক্ত সময় ডিউটি করার ফলে তারা অতিরিক্ত ভাতাও নিয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনের নিরীখে অতিরিক্ত ডিউটি করেও কোন ধরণের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি না। এছাড়া বদলী পদায়নের ক্ষেত্রে সিনিয়র/জুনিয়র দেখে পদায়ন করা হচ্ছেনা। ফলে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রশাসনে এক ধরণের বৈশম্য তৈরী হয়েছে।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থা ও হাসপাতাল থেকে প্রেষন আদেশ বলে প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মচারী সংযুক্তিতে কর্মরত। যাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ শ্রোনা গেলেও অদের প্রেষনাদেশ বাতিল করা হয় না। তারা বিভিন্ন রকমের তদবির/সুপারিশ করে গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলোতে কাজ করে বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নথি ফাস করে এসেছে। মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয় আপনার দপ্তরে ৬ (ছয়) জন কর্মচারী প্রেষনাদেশে বর্তমানে কর্মরত আছে। এ বিভাগের স্থায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারীরা পদায়ন না পেয়ে বঞ্চিত হয়ে আসছে। অনেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা/ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হয়েও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিকের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ প্রেষনাদেশের কর্মচারীরা নিম্ন-পদধারী হয়েও উচ্চ পদে কাজ করেছে। এমতাবস্থায়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের নিয়োগকৃত কর্মকর্তা/কর্মচারীরা বৈষম্যের শিকার হওয়ার তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

সচিবালয়ের কর্মবন্টন অনুযায়ী প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের পদায়ন করার নিয়ম থাকলেও কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নিয়মের ব্যতয় ঘটিয়ে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা প্রশাসনিক কর্মকর্তার চেয়ার দখল করে রেখেছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা শাখা শূন্য না থাকায় পদায়ন না পেয়ে আগের পদেই কাজ করে যেতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা সচিবালয় কর্মবন্টন অনুযায়ী এ বৈষম্য দূর করার জন্য আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

বিগত সরকারের শাসন আমলে যারা নানা সুবিধা ভোগ করে এসেছে তারাই এখন রং বদল করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে নানা ধরণের উসকানিমূলক মন্তব্য করছে এবং কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মাঝে ভীতি সৃষ্টি করছে। বস্তুত, এদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ শাখায় বসে অনিয়ম ও দুর্নীতি মাধ্যেম নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য সরকারি আবাসন ব্যবস্থা থাকলে তা পর্যাপ্ত নয়, এ বিভাগের স্থায়ীদের জন্য বাসা পাওয়া যেন সোনার হরিণ পাওয়ার মত। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর- সংস্থার কর্মকর্তা/কর্মচারী বিশেষ করে নার্সরা কিভাবে যেন বাসা পেয়ে যায়।স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের চাকুরী অবদলিযোগ্য, স্থায়ীভাবে ঢাকাতে চাকুরীকাল শেষ করতে হবে। এত স্বল্প বেতনে (বিশেষ করে ৩য়-৪র্থ শ্রেনি কর্মচারীরা) ঢাকা শহরে একটা ভাড়াকৃত বাসায় পরিবার নিয়ে জীবনযাপন করতে যেখানে নাভিশ্বাস উঠে যায়। সেখানে আমরা সরকারি আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছি। অথচ যাদের চাকরী বদলিযোগ্য তারা কোন অদৃশ্য কারণে সরকারি বাসা পেয়ে যাচ্ছে।
উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য যুগোপযোগী ও মান সম্পন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
চাকরিতে বৈষম্যের মধ্যে দিয়ে যারা বহাল তবিয়তে আছেন তারা হলেন- ১। সায়মা আক্তার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রশাসন-১ (চাকুরীকাল থেকে অদ্যবধি প্রায় ২০ বছর)।

২। আব্দুর রহমান, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (প্রেষণ)
মন্ত্রীর দপ্তর (দীর্ঘ ১৯ বছর কর্মরত) মন্ত্রীর দপ্তর (বিগত সরকারের আমলে ঠিকাদার মিঠু ও আফজাল এর ছত্রছায়ায় থেকে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে যুক্ত হয়, সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক তাকে তার দপ্তর থেকে বের করে দেন)।

৩। হারুন অর রশিদ, উচ্চমান সহকারী (প্রেষণ)
মাকসুদুর রহমান, অফিস সহকারী (প্রেষণ)
মন্ত্রীর দপ্তর (১৪ বছর কর্মরত)

৪। রফিকুল ইসলাম, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা
প্রশাসন অনুবিভাগ (দীর্ঘদিন সচিবের দপ্তর ও বর্তমানে অতি: সচিব প্রশাসন অনুবিভাগে কর্মরত)

৫। মিরাজুল ইসলাম, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা
প্রশাসন-১ (চাকুরীকাল থেকে অদ্যবধি প্রায় ৬ বছর)

৬। রমযানুল হক, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা
ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে বাজেট শাখায় কর্মরত (প্রায় ১৬ বছর)।

৭। মঞ্জু হোসেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা
বাজেট শাখায় কর্মরত (প্রায় ১৫ বছর)

৮।রফিকুল ইসলাম, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা প্রশাসন অনুবিভাগ (দীর্ঘদিন সচিবের দপ্তর ও বর্তমানে অতি: সচিব প্রশাসন অনুবিভাগে কর্মরত)

৯। আমানুল্লাহ সরকার, ক্যাটালগার
পদায়ন হওয়ার নিয়ম নাই। বিভিন্ন সময় তাকে লাইব্রেরীতে ফেরত পাঠানোর রেজুলেশন হলেও সেটা অজ্ঞাত কারণে লাইব্রেরীতে ফেরত বাস্তবায়িত হয় নাই।

১০। বিধান কৃষ্ণ দাস, প্রশাসনিক কর্মকর্তা
সচিবের দপ্তর (দীর্ঘদিন যাবৎ সচিবের দপ্তরে কাজ করছে। এছাড়া একটি দপ্তরে ৩ জন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা/ প্রশাসনিক কর্মকর্তা কোন প্রয়োজন আছে কিনা যাচাই করা প্রয়োজন।

১১। মাকসুদুর রহমান, অফিস সহকারী (প্রেষণ)ম ন্ত্রীর দপ্তর (১৪ বছর কর্মরত)।সহ আরো অনেকে ৫ বছরের অধিক বহাল তবিয়তে আছেন।

এব্যাপারে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে গেলে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ভুক্তভোগী স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তা ও ৩য়-৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা এর সুষ্ঠু বিচার ও তদন্ত সাপেক্ষে পদায়ন দাবি করেছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নিকট।

Related posts

Leave a Comment