বারভিডা’র প্রেসিডেন্ট ফ্যাসিষ্ট হাসিনার পোষ্যপুত্র হাবিবুল্লাহ ডনের রাজত্ব

মোঃ আহসানউল্লাহ হাসানঃ
পৃথিবীর সবচেয়ে বিলাশবহুল দামী গাড়ী আমাদের দেশে কিনে আনার একমাত্র প্রতিষ্ঠান অটো মিউজিয়াম লিঃ। আর এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক ফ্যাসিষ্ট হাসিনার পোষ্যপুত্র বলে পরিচিত হাবিবুল্লাহ ডন। হাসিনার বোন কমিশন রানী শেখ রেহেনা ও হাসিনার পুত্র জয় সহ বেশীরভাগ মন্ত্রী এমপির টাকা বিদেশে পাচারের নিরাপদ রুট অটো মিউজিয়াম লিমিটেডের গাড়ী আমদানিকারী এই প্রতিষ্ঠানটি। গাড়ী আমদানির এলসির অন্তরালে দেশে থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে দিয়েই রাস্তার ছেলে হাবিবুল্লাহ হয়েছেন হাবিবুল্লাহ ডন। হাসিনা পরিবারের টাকা নিরাপদে দেশের বাইরে পৌছে দিয়েই হয়ে গেছেন মুলত হাসিনার পোষ্যপুত্র। জোড়পূর্বক দখলে করে নিয়েছেন গাড়ি আমদানীকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেইকলস ইম্পোর্টাস এন্ড ডিলার্স এসোসিয়েশন-বারভিডা’র প্রেসিডেন্টের পদ। অটো মিউজিয়াম লিমিটেডের নামে গাড়ী আমদানির উদেশ্যে ব্যাংক থেকে বড় বড় অংকের টাকা এলসি বা ঋণপত্র খোলা হয়েছে। কিন্তু গাড়ি বাংলাদেশে আসে নাই। আবার আসলেও পরিমান খুবই নগন্য। অটো মিউজিয়াম লিমিটেড বা হাবিবুল্লাহ ডনের ব্যাংক স্টেটমেন্টস, কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে সংরক্ষিত গাড়ী আমদানীর নথিরেকর্ডপত্র ও তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার গুলোর কললিষ্ট পরীক্ষা নিরিক্ষা করলেই টাকা পাচারের সত্যতা বেরিয়ে আসবে বলে নিশ্চিত করেন বারভিডা’র সদস্য এক ব্যবসায়ী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যবসায়ী জানান, হাবিবুল্লাহ ডন শেখ হাসিনাকে মা ডেকে বারভিডা’র প্রেসিডেন্টের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। মন্ত্রী এমপিদের দামী ব্র্র্যান্ডের গাড়ী অল্প দামে, আবার কখনো গিফট দিয়ে আস্থাভাজন হয়েছেন। বাংলাদেশে আমদানী নিষিদ্ধ হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের ছেলে জ্যোতির জন্য ফেরারি ব্রান্ডের এফ-৪৩০ সিরিয়ালের ৬ হাজার সিসির দৃষ্টিনন্দণ চোখ ধাঁধানো একটি গাড়ি আমদানী করে আনেন হাবিবুল্লাহ ডন। গাড়িটি গুলশানের অটো মিউজিয়াম শো-রুম থেকে রাস্তায় বের হলে ট্র্যাফিকের হাতে আটকা পড়ে। বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসলেও ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে হাবিবুল্লার ডনের আধা ঘন্টা সময় লাগে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কামালের এক ফোনেই খেল খতম। ওই ব্যবসায়ী আরো অভিযোগ করেন, ‘হাইব্রিড গাড়ি’ তেলের গাড়ির চেয়েও শুল্ক সুবিধা বেশি, আর এই সুবিধা পেয়ে বিগত ৪বছরে অবাধে আমদানী হয়েছে বিলাসবহুল হাইব্রিড গাড়ি। এর মধ্যে অটো মিউজিয়ামের দুটি বিলাসবহুল হাইব্রিড গাড়িকে মিথ্যা ঘোষনা দিয়ে আনার জন্য হাবিবুল্লাহ ডনকে ১৩ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করে কাস্টমস বিভাগ। কিন্তু সেসব নিয়ে কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি হাবিবুল্লাহ ডনকে। হাসিনার নির্দেশে সব কিছুই সামলে দিয়েছেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান।

২০২২ নভেম্বর মাসে জাপান থেকে ৮৫৬টি গাড়ির চালনা আসে। ওই চালানে ঋণপত্র বা এলসি ছাড়া হাবিবুল্লাহ ডনের ১০০টিরও বেশি গাড়ি আসে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও স্বরাষ্টমন্ত্রী কামালের নির্দেশে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গাড়ি গুলো নিরাপদে অটো মিউজিয়ামে পৌছে দিতে বাধ্য হয়। এবিষয়ে কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাটের সাবেক কমিশনার মো. আবদুল কাফী ওই সময় গনমাধ্যমকে বলেন, কাস্টমস যদি এলসি না পায়, তাহলে তারা সে পণ্যটির রাজস্বও নেবে না, আবার ছাড়ও দেবে না। বরং তা নিলামে উঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু আইনের চোখ বন্ধ করে গাড়ী গুলো ছাড় দেয়া হয়েছে। (হাবিবুল্লাহ ডনের এমন অসংখ্য অপকের্মর তথ্য প্রমান এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে)।

সুত্র জানায়, হাসিনার ইশারায় এস আলমের স্টাইলে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অটো মিউজিয়ামের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার উপরে এলসি/ঋণ নেয়া আছে। যেখানে অন্তত ৮০% টাকা গাড়ী আমদানীর নামে বিদেশের বিভিন্ন গাড়ী কোম্পানীর ভুয়া কাজগপত্র তৈরি করে এলসি/ঋন পাঠানো হয়েছে। আর বাকী ২০% টাকা টাকা পরিবর্তে অটো মিউজিয়ামের নামে গুটিকয়েক গাড়ি এসেছে। যেমন ধরুন জাপানের কোন একটা কোম্পানীর কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকার গাড়ি অর্ডার দিয়ে এলসির মাধ্যমে সমস্ত টাকা পাঠিয়ে দিলেন। পরবর্তীতে অর্ডার বাতিল করে ২০কোটি টাকা গাড়ী আনলেন আর বাকী ৮০কোটি টাকা ক্যাশ করে নিরাপদ গন্তব্যে মায়ের ভোগে পাঠিয়ে দিলেন। এখন এই বিষয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কেউ কোন প্রশ্নই করলো না। এবার বলুন টাকা পাচারের রাস্তাটা কত সহজ। একমাত্র হুন্ডি আর এয়ারপোর্টের ভিআইপি গেইট দিয়ে বস্তাভর্তি ডলার মাধ্যম ছাড়া বাংলাদেশে থেকে একটি কানাকড়ি পাচারের কোন সুযোগ নাই। আবার হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করতে হলে হাবিবুল্লাদের মতো বড় ব্যবসায়ী ডনদের লাগবেই। হাসান মাহামুদের টাকা বেলজিয়ামে পাচার হয়েছে বাংলাদেশে গ্লাস আমদানীকারক কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। হাসিনা পালিয়ে গেছে তো কি হয়েছে, প্রতিটি সেক্টরেই হাসিনার পোষ্যপুত্ররা রয়ে গেছে। এদের নির্মূল করা না গেলে এদেশ কখনোই ঠিক হবে না।

৫আগষ্ট-২০২৪ ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার পরিবারের সদসদ্যরা দীর্ঘ ১৭ বছরের লুটপাটের রাজত্ব ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তার সহযোগি দোসররা আটকা পড়ে আছে। কেউ কেউ ইতিমধ্যে দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন, আবার পালানোর সময় বর্ডারে গ্রেপ্তার হয়েছেন, আবার কেউ কেউ গণরোষে পড়ে মারাও গেছেন। কারন দীর্ঘ ১৭ বছরের ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফ্যাসিজমকে সর্মথন দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা মালিক বনে গেছেন এই দেশদ্রোহী বা গণদুশমুনেরা। এরা নিজেরা হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়ার নেশায় দেশের বারোটা বাজিয়ে লক্ষ লক্ষ কোটি পাচারের কাজে হাসিনাকে অন্ধভাবে সহযোগিতা করেছেন। দেশের কথা চিন্তা করে হাবিবুল্লাহ ডনেরা একবারের জন্যও প্রতিবাদ বা প্রতিবাদের নুন্যতম চেষ্টা পর্যন্ত করেনি। ফ্যাসিস্ট হাসিনার রেখে যাওয়া হাজার হাজার এমন দেশদ্রোহীরা বিচারের আওতায় আসবে নাকি জামাই আদরে আবারো দেশদ্রোহীতা চালিয়ে যাবে তা দেখার দায়িত্ব নেবে দেশের জনগণ। তবে শোনা যাচ্ছে, আবার দেখাও যাচ্ছে, হাবিবুল্লাহ ডনের মতো ডনেরা বিপদ কাটিয়ে উঠতে বিএনপি-জামায়াতের লেজুর টেনে ধরছে। কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে সেই লেজ ধরা কাজে অনেকেই সফল হয়েছেন। কিন্তু এদেশের জনগণ তা মেনে নেয়নি। সময়ের ব্যবধানে জনগণ সেই লেজ কেটে দেবে এমনটাই জোড়ালোভাবে শোনা যাচ্ছে। এদিকে বিএনপির সিনিয়র নেতা আমীর খসরু মাহামুদ চৌধুরী জনসম্মূখে ঘোষনা দিয়েছেন কাউকে লেজ ধরার সুযোগ দিবেন না। জামাতিরা তো সাধারন ক্ষমার ঘোষনা দিয়ে বসুন্ধরার মতো মাফিয়াদের বুকে টেনে নিয়েছেন। তবে দুই দলের এই নাটকের বাস্তবচিত্র এদেশের মানুষ সামান্য কয়েকদিনের মধ্যেই হাড়েহাড়ে টের পেয়েছে। জামাতিরা বিএনপি ঠেকানোর জন্য ভোটব্যাংক বাড়াতে আওয়ামীলীগকে পুর্নবাসনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে হাসিনার ছাও-পোনা হাবিবুল্লাহ ডনেরা।

৫আগস্টের পটপরিবর্তনের পর বৃহত্তর ব্যবসায়িক সেক্টরে ক্ষমতার হাত বদল হয়েছে, আর সরকার পতনের দেড় মাস পূর্ণ হলেও বিতর্কিত সেই ব্যবসায়ীরা এখনো আছেন বহাল তবিয়তে। ব্যবসায়ী মহলকে অশান্ত করে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার চক্রান্তের অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। হাবিবুল্লাহ ডনেরা হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন এই সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে হলে যেকোন ষড়যন্ত্রের লিপ্ত হবেন এটাই স্বাভাবিক। হাসিনা সরকার পতনের পর আওয়ামীলীগ নেতা হাবিবুল্লাহ ডন বিএনপি’র পাওয়াফুল এক নেতার শিবিরে যোগ দিয়েছেন বলে গুণজন শোনা যাচ্ছে। আর ঐ নেতার মদদেই এখনো বারভিডা’র প্রেসিডেন্ট পদে বহাল তবিয়তে আছেন ।

হাসিনা সরকারের সবচেয়ে সুবিধাভোগী গাড়ি ব্যবসায়ী এই হাবিবুল্লাহ ডনের এক সময় নূণ আনতে পান্তা ফুরাতো। কিন্তু হাসিনাকে মা ডেকে বনে গেছেন হাজার কোটি টাকার মালিক। রাজস্ব ফাঁকি দেয়া গাড়ি বিক্রির হটস্পট হলো অটো মিউজিয়াম লিমিটেডের গুলশান শো-রুম।
এছাড়া সুত্র জানায়, আলোচিত পিয়াসা কান্ডেও হাবিবুল্লাহ ডন জড়িত ছিলেন। ২০১৭ সালের মে মাসে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষনের মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী ছিলেন আলোচিত মডেল তারকা ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা। ওই মামলা বিপুল পরিমান বিদেশী মদ, ইয়াবা, সিসা তৈরি কাঁচামাল, ই-সিগারেট, সেক্সচুয়াল ট্যাবলেট ও হাফ-ডজন স্মার্ট ফোন সহ রাজধানীর বারিধারার একটি বাসা থেকে তাকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি’র প্রধান হারুন অর রশিদ ওরফে হাওন আঙ্কেল। অথচ ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগিতায় হাবিবুল্লাহ ডন তার নাইটপার্টনার পিয়াসাকে ওই মামলা থেকে ঝামেলা মুক্ত রাখেন।
ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিশ্বস্ত সহযোগি হাবিবুল্লাহ ডনের নামে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা থাকা সত্ত্বের তার বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। এতো কিছুর পরেও আওয়ামীলীগের খোলস পাল্টিয়ে এখনো স্ব-পদেই বহাল রয়েছেন এই নেতা। তার রাহুগ্রাস থেকে বারভিডাকে অবিলম্বে মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংগঠনের একাধিক সদস্য।
এব্যাপারে হাবিবুল্লাহ ডন বলেন, এগুলো মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন। এতা দিন হাসিনা সরকারের সাথে মিলে ব্যবসা করেছি, এখন ড. ইউনুস সরকারের সাথে মিলে ব্যবসা করবো, সামনে বিএনপি বা অন্য সরকারের সাথে মিলেমিশে ব্যবসা করবো, তাতে কি সমস্যা।

Related posts

Leave a Comment