সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসবে সরকার

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

ছয় সংস্কার কমিশন পুরোদমে কাজ শুরুর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। দ্রুতই এ আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানান তিনি।
শফিকুল আলম বলেন, কমিশনের কাজ আগামীকাল থেকে শুরু করার কথা। কিন্তু একটি সিদ্ধান্ত এসেছে তার আগে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদ আরেক দফা আলোচনা করতে চাচ্ছে। তবে টেকনিক্যালি সংস্কার কমিশনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। তিনি বলেন, কমিটির প্রধানদের যখন নাম ঘোষণা হয়েছে, তখন কমিশনের কাজ কিছুটা হলেও শুরু হয়েছে। যেহেতু এখানে রাজনৈতিক দলগুলো একটি অংশীজন। তাই তাদের সঙ্গে আলাপ করে মতামত চাওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম আরো বলেন, এটুকু বলতে পারি, এই আলোচনাটি খুব তাড়াতাড়ি হবে। আলোচনা হওয়ার পরই দেখবেন কমিশনের কাজগুলো শুরু হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ অনেক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক এবং ঋণপ্রাপ্তির বিষয়গুলোও তুলে ধরেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার এই সফর খুবই সফল ও ঐতিহাসিক। এ জন্য সফল যে গত ২০-৪০ বছরের বাংলাদেশের লিডারদের ইউএনজিএ সফর দেখেন তাহলে দেখবেন দুই তিনজন হয়তো আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন তারা। বা দুই তিনজন ইউএনএ’র সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু এবার প্রফেসর ইউনূস ২৩ তারিখ সেখানে পৌঁছানোর পর ২৭ তারিখ পর্যন্ত ওনার ব্যস্ততম একটা সিডিউল ছিল। প্রায় ১৫টা মিটিংয়ের মধ্যে ১২টা ছিল জো বাইডেন, ইতালির প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘের মহাসচিবসহ বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে। তাকে সেখানে রাজকীয় অভ্যর্থনা দেয়া হয়েছে। সবাই বলেছেন, এ সরকারকে তারা সমর্থন করেন এবং এর সঙ্গে কাজ করতে তারা ইচ্ছুক।
আরেক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে, ১৬ না ১৮ মাস পরে, এটা ঠিক করবেন দেশের জনগণ। বিশ্বনেতারা রাষ্ট্র মেরামতের বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছে। এ অবস্থায় রাষ্ট্র সংস্কারে ৬টা কমিশনের কাজ শুরু হয়েছে। তবে পুরোদমে সংস্কার শুরুর আগে উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরেক দফা আলোচনা করবেন। এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা হবে কি না সে বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ১৬ মাস না ১৮ মাস পরে হবে এটা আসলে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ।
কমিশনের রিপোর্ট, কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে পলিটিক্যাল কনসালটেশন এবং এই কনসালটেশনের পরে বাংলাদেশের জনগণ বাংলাদেশের সোসাইটি, বাংলাদেশের সমস্ত স্টেকহোল্ডার যখন ডিসাইড করবেন, আমরা এ বিষয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছেছি- তখন নির্বাচনের একটি সমাধান হবে। এটা কবে হবে তা এখনই নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। আর আমার মনে হয়, সেনাপ্রধান এখানে মতামত দিয়েছিলেন। আলোচনাটা খুব দ্রুত হবে এটুকু আমি বলতে পারি, আলোচনাটা হওয়ার পরেই দেখবেন কমিশনের কাজ শুরু হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্ব নেতারা টাইম ফ্রেম জানতে চাননি। কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং জনগণসহ সব স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা ও মতামত নিয়েই নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা হবে। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্বাচনে অংশগ্রহণসংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, তিনি এক কথার মানুষ।
তিনি সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। তিনি রাষ্ট্র মেরামতের এ সুযোগকে মহৎ একটি কাজ হিসেবে বিবেচনা করছেন এবং এটিকে তিনি সফল জায়গায় নিয়ে যেতে চান। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক সমর্থনের বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কার কমিশনগুলোকে বিশ্বনেতারা সমর্থন জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর।

Related posts

Leave a Comment