আমিরুল ইসলাম অল্ডাম, মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি :
গাংনী উপজেলার ২ নং তেঁতুলবাড়ীয়া ইউপির অপসারণকৃত চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরশাসকের পতনের পর ইউপি চেয়ারম্যান দুর্নীতির আমলনামা
না জানিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। কারচুপির বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক পরিচয়ে ইউনিয়ন বাসীকে জিম্মি করে ইউনিয়ন উন্নয়নের নামে সরকারি বরাদ্দকৃত সমস্ত অর্থ ও মালামাল লুটে পুটে পকেটস্থ করেছেন।
এছাড়াও তিনি পরিষদের সকল ্ধসঢ়;ইউপি সদস্যদের ভয়ভিিত দেখিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাত করেছেন। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের মাধ্যমে ইউনিয়নের নানাবিধ উন্নয়ন সাধিত হয়ে থাকে। এডিপির বরাদ্দ, এলজিএসপি, উন্নয়ন সহায়তা, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, কর্মসৃজন প্রকল্পসহ নানা প্রকল্পে লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে। এসব টাকা নামমাত্র কাজ করে তার পছন্দের দুই একজনকে সামান্য দিয়ে পুরো টাকা আত্মসাত করেছেন এই দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান।উক্ত দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কর্মসৃজন কর্মসূচীর অর্থ আত্মসাত থেকে শুরু করে নানা দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার
দুর্নীতি নিয়ে তার পরিষদের একজন মহিলা মেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দিয়েছিলেন।
২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সরকারি বরাদ্দকৃত রাজস্বখাতের ১% এর টাকার পরিমান কত এবং কোন
কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে, উন্নয়ন সহায়তার তহবিলের পরিমান কত এবং কোন কোন খাতে খরচ করা হয়েছে , কর্মসৃজন কর্মসূচীর আওতায় (২৮৫ জন) কতজন লেবারের হাজিরা কর্তন করা হয়েছে, কতজনকে বাদ দেয়া হয়েছে, সাবেক এমপির বরাদদ্দকৃত ২ টি প্রকল্পের ১৬ মেট্রিক টন চাল দিয়ে কি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে , টিসিবির কার্ড সংখ্যা -৩ হাজারের কাছাকাছি কিন্তু ২০০ কার্ডধারীদের মাঝে কোন টিসিবি পণ্য দেয়া হয়নি। পরিষদের সচিব আব্দুল মতিনের নিকট এসব বিষয় নিয়ে আলাপকালে তিনি জানান, আমার নিকট পরিষদের কোন ফাইল পত্র নাই। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে চেয়ারম্যান সব ফাইল পত্র বাড়িতে নিয়ে গেছে।
পরিষদে এমন কোন প্রমানক নেয়। তারপরেও সচিব আব্দুল মতিন মৌখিকভাবে সাংবাদিকদের জানান, রাজস্ব খাতের ১% এর
টাকা ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা, ২০২৩ -২৪ অর্থ বছওে প্রথম পর্যায়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ২য় পর্যায়ে
৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা । উন্নয়ন তহবিলের বরাদ্দ (২০২৩ ও ২০২৪ অর্থ বছরে) ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বিগত অর্থ বছরের বাজেট
কত ছিল ! এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। এছাড়াও সরকার পতনের কিছুদিন আগে স্থানীয় এমপির বরাদ্দকৃত দুটি
প্রকল্প এর জন্য (৮+৮ মোট ১৬ মেট্রিকটন চাল দিয়ে) বরাদ্দকৃত মালামাল দিয়ে পুরো টাকা আত্মসাত করেছিলেন। কিন্তু
পরবর্তীতে দায় এড়াতে তড়িঘড়ি করে মহিলা মেম্বরকে পিআইসি করে কোনরকম জোড়াতালি দিয়ে নিজেই ড্রেজার ভিড়িয়ে চেয়ারম্যানের বাড়ির অদূরে হাট পাড়ায় স্লুইস খাল খনন করে। ৮ মেটিকট্রনের কাজ মাত্র ৫ হাজার টাকায় দায়সারা ভাবে খনন করে। একইভাবে ইউনিয়নের কল্যানপুর গ্রামের উত্তরপাড়ায় একটি রাস্তায় মাটি ভরাটের নামে ৮ মেট্রিকটনের অর্থ আত্মসাত করেছে। এসব তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সচিব আব্দুল মতিন বলেন, আপনারা চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করে তারপর নিউজ করবেন। আগেই কোন পত্রিকায় নিউজ না করার জন্য সচিব অনুরোধ জানান।
এমনিভাবে কাথুলী, রায়পুর, ষোলটাকা, মটমুড়া , বামন্দী , সাহারবাটি ইউনিয়নে তথ্য চাইলে গেলে কর্মরত সচিব গন জানান, আমরা আপাতত কোন তথ্য দিতে পারছি না। কারন এই পরিষদে যেসব সচিববৃন্দ কাজ করেছেন তারা আমাদেও কোন
ফাইল পত্র দিয়ে যাননি। অপসারনকৃত চেয়ারম্যানদের কথায় তারা ফাউল বাড়িতে নিয়ে রেখেছেন। এসব অভিযোগ স্বীকার করে
রায়পুর ও মটমুড়া ইউপি সচিব যথাক্রমে মতিয়ার রহমান ও মনিরুল ইসলাম জানান, আপাতত ফাইল আমাদের কাছে রয়েছে।
তবে বামন্দী ইউপি সচিব( সদ্য যোগদানকৃত)আব্দুর রহমান জানান, আমি ২ মাস হলো যোগদান করেছি। আমি পরিষদে
এসে কোন ফাউল পত্র পাই নাই। আগের সচিবের সাথে যোগাযোগ করেও কোন ফাইল সংগ্রহ করতে পারি নাই। পরিষদে
এত কক্ষ এবং আলমারী থাকতেও ফাইল রাখার জায়গা হবে না কেন। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিষয়টা আমার জানা নাই। এসব
নিয়ে মটমুড়া ইউপি সচিব মনিরুল ইসলাম জানান, ফাইল পত্র আমার কাছে রেখেছি। কারন পরিষদে অডিট হলে আমি ফাইল
শো করবো।
এব্যাপারে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনক্রমেই পরিষদের ফাইল পত্র
সচিব বা চেয়ারম্যান তাদের কাছে রাখতে পারেন না। পরিষদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরিষদেই রাখতে হবে।তিনি বলেন, আমি
সচিব ও চেয়ারম্যানদের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।