পিডিবি’র ৬৫০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ প্রকল্পে বেশুমার লুটপাট

মোঃ আহসানউল্লাহ হাসানঃ

‘অর্ধেক টাকায় প্রকল্প অর্ধেক টাকা চুরি’ আওয়ামীলীগ সরকারের এমন নীতিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে হাতিয়া,কুতুবদিয়া ও নিঝুমদ্বীপে শতভাগ বিদ্যুতায়নে ৬৫০কোটি টাকার বরাদ্দ নিয়ে কাজ শুরু করে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো: ফারুক আহমেদ এবং নির্বাহী প্রকৌশলী রায়হান। কোন কোন ক্ষেত্রে অর্ধেকের অস্তিত্বও খুজে পাওয়া যায় না। আবার কাজ হলেও নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহারের কারনে উদ্ভোধনের আগেই ভেঙ্গে পড়তে দেখা গেছে অনেক প্রকল্পে। প্রকল্পে কর্মরত কর্মকর্তারা নির্দিষ্টহারে কমিশন কেটে রেখে ঠিকাদারকে কাজের বিল পরিশোধ করে। যার একচুল ব্যতিক্রম ঘটেনি প্রকৌশলী মো: ফারুক আহমেদ ক্ষেত্রে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি মোট বরাদ্দের ৯% টাকা কমিশনের মালিক। অর্থ ভাগ-বাটোয়ারার কারনে প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হওয়ার আগেই ভেঙ্গে পড়েছে বিদ্যুতের খুটি। সরেজমিনে তদন্ত করলে এমন চিত্র দেখা যাবে। অফিসের খাতাপত্র নাড়াচাড়া করলে এসব লুটপাটের চিত্র ধরা পড়বে না। চুরি ধরতে হলে সরেজমিনে গিয়ে কাজের বাস্তব চিত্র পর্যবেক্ষন করতে হবে। এতে দেখা যাবে ১ টাকার জিনিস ১২ টাকায় কিনেছে, তারপরেও সেগুলো অকেজো।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের প্রারম্ভিক মেয়াদ ২০২৩ সালে থেকে বাড়িয়ে ২০২৫ সাল এবং নির্মান ব্যয় ৩৮৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৪৭ কোটি ১২ লাখ টাকা করা হয় প্রকল্পের আওতায় ৪টি ৩৩/১১কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ (হাতিয়া দ্বীপে ৩টি ও কুতুবদিয়া দ্বীপে ১টি), মুকতারিয়া-নিঝুমদ্বীপে সংযোগ খালে দেড় কিলোমিটার ১১কেভি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন, কুতুবদিয়া চ্যানেলে ৫ কিলোমিটার ডাবল সার্কিট ৩৩ কেভি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন, ১হাজার ৪৮৬ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ, সুইচিং স্টেশন স্থাপন, ৩৫কিলোমিটার বিতরণ লাইন রেনোভেশন, ৩ হাজার ২৫০টি পোল মাউন্টেড স্থাপন সহ অফিস ভবন, রেস্ট হাউজ, ডরমিটরি, সীমানা দেয়াল ইত্যাদি নির্মানের সুনির্দিষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে ৭০শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবী করা হয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র দেখলে বুঝা লুটপাটের চিত্রটা কতটা ভয়াবহ। হাতিয়া, নিঝুম দ্বীপ ও জাহাজমারা ঘাটের উভয় পাশের সুইচিং স্টেশনের মেশিনগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে। বিদ্যুৎ বিতরনের খুটি ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে গেছে। ১৩০কোটি টাকা ব্যয়ে ৭কিলোমিটারের স্থাপনকৃত সাবমেরিন ক্যাবলস গুলো খুবই নিম্নমানের হওয়া অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ এগুলো ৫গুণ বেশী দামে কেনা হয়েছে।

সরকারী কর্মকর্তারা বিশ্বাস করতো কমিশন রানী হাসিনা তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিবে না। একারনে সরকারী কর্মকর্তারা খাতাপত্র পরিপূর্ন ভাবে লিখে রেখে চুরি করেছে। কিন্তু বাস্তবে গেলে কাজের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায় না। এই প্রকল্পে ১২০কোটি টাকার ইলেকট্রিক পোল বা খুটিগুলো খুবই নিম্নমানের, থিকনেস কম, কোন মতে রং করা। নিজে নিজেই ভেঙ্গে পড়ে। পিডি ফারুক আহমেদ তার নিজের পছন্দের ঠিকাদারের মাধ্যমে এই খুঁটি ক্রয় করেন। প্রতি খুটির দাম দেখানে হয়েছে প্রায় ৩লাখ ৮০ হাজার টাকা। যেখানে ৮০ হাজার টাকায় এমন খুটি হাফ-ডজনের বেশী পাওয়া যেতে পারে। ৩কোটি টাকার বৈদ্যুতিক সার্কিট ব্রেকার রোদবৃষ্টিতে ভিজে ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। ৫/৬শ টাকায় কেনা নিম্নমানের সার্কিট ব্রেকার কোনটাই ব্যবহার করতে পারে নাই, এগুলো হাতিয়া ও কুতুবদিয়ায় এলোপাতাড়ি ভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। নিজের সাজানো ঠিকাদারের মাধ্যমে অন্তত ৩ কোটি টাকার সার্কিট ব্রেকার ক্রয়ের নামে ৮০শতাংশ টাকা ভাগাভাগি করা হয়েছে।

সুত্র জানায়, ১৫০ কোটি টাকায় যেসব বৈদ্যুতিক ক্যাবলস ক্রয় করেছেন সবগুলোতেই শুভংকরের ফাঁকি। তামার পরিবর্তে নিম্নমানের আয়রন মিশ্রিত এ্যালুমেনিয়াম ও কপার ব্যবহার করা হয়েছে। যা কোন ভাবেই সাধারণ মানুষের চেনার উপায় নেই। বিবিএস ক্যাবল কোম্পানির মাধ্যমে এসব বৈদ্যুতিক ক্যাবলসের টাকা ভাগাভাগি করার জন্য পিডি ফারুক আহমেদ বিবিএস কোম্পানির সাথে গোপন ফর্মূলায় কাজগুলো হালাল করে নিয়েছেন। যাহা টেন্ডারের ডকুমেন্টসের মেটালিক স্পেসিফিকিশানের সাথে মিল নাই। কারন তামার তৈরি ক্যাবলসের গুণগতমান দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই এবং দামে এ্যালুমেনিয়ামের চাইতে ৩গুণ বেশী। একারনে টেন্ডারে তামার ক্যাবলস উল্লেখ থাকলেও চুরি করে ব্যবহার করা হয়েছে এ্যালুমেনিয়াম ও কপার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় হাতিয়া-কুতুবদিয়ার ৬০% বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে সিমেন্টের কোন ঢালাই দেওয়া নাই। তাছাড়া ৭০% খুঁটিতে কোন আর্থিং নাই। যা আছে তাও অকেজো, প্রতিনিয় ঘটছে দুর্ঘটনা। কাজ শেষ না হতেই পিডি ফারুক আহমেদ তার বাল্যবন্ধু খ্যাত ২টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজের ১০০% বিল পরিশোধ করে দিয়েছেন।

হাতিয়ার এমপি মোহাম্মদ আলীও এই প্রকল্পে কোটি টাকার টেন্ডার দখলে নিয়ে লুটপাট চালিয়েছে। পুরনো ব্রিজ ভাঙ্গা রড ব্যবহার করে বানিয়েছন নতুন বিল্ডিং। বৃষ্টি এলেই ছাঁদ চুষিয়ে পানি পড়ে। ভবন দুটিতে কোটি টাকার ফার্নিচার ক্রয় করা হয়েছে। যেগুলো কাঠের নয়, একধরনের কাগজের তৈরি, নিম্নমানের সোফা,চেয়ার খাট সবই কাগজের। এভাবে পিডি ফারুক আহমেদ ক্রয় বানিজ্যের মাধ্যমে নিজেই অন্তত শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। হাতিয়া দ্বীপের বিনা ভোটের এমপি জলদস্যু মোহাম্মদ আলী যাতে পিডি ফারুক আহমেদকে কোন কিছু না বলে এজন্য তাকে ২০ কোটি টাকার কাজ দিয়ে তাঁর মুখ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন স্থাপনের জন্য ইন্টু করপোরেশন এবং ইস্ট্রান ইলেকট্রিক দুইটা কোম্পানিকে কাজ প্রদান করে কাজ ৩০% অসম্পূর্ণ থাকা সত্বেও ১০০% বিল প্রদান করেছেন। পিডি ফারুক আহমেদ ইতিপূর্বে টাঙ্গাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মকালীন সময়ে ২ট্রাক সরকারী ইলেকট্রিক ক্যাবলস, ট্রান্সফরমার চুরি করে বিক্রি করার অপরাধে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ইএডিতে মামলা ও শাস্তি হিসেবে তাঁর ইনক্রিমেন্ট ও সিনিয়রিটি বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ পরবর্তীতে সদ্য সাবেক বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ২কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে ইএনডি মামলা থেকে অব্যাহতি নিয়ে নেন সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।

এব্যাপারে পিডি ফারুক আহমেদ বলেন, সমস্যা নেই, নিউজ করে দেন।

Related posts

Leave a Comment