আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই শুরু হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত পর্ব। নির্বাচনে ভোটারেরা কোন পদ্ধতিতে রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প বা ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মধ্যে ‘পছন্দ’ নির্ধারণ করেন, তা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক
‘ইলেক্টোরাল কলেজে’র ভূমিকা
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, ট্রাম্প ও কমলার মধ্যে কে জয়ী হবেন, তা ভোটারদের সরাসরি ভোটে নির্ধারিত হবে না। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে (ফেডারেল) নির্বাচনী লড়াইয়ের বদলে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে একেকটি প্রদেশের নির্বাচনী লড়াইয়ের মাধ্যমে।
আমেরিকার ৫০টি প্রদেশের কোনো একটিতে জয়ী হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী সেই প্রদেশের সব ক’টি ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ ভোট পেয়ে যাবেন। যেমন, টেক্সাসে ৪০ জন ইলেক্টর রয়েছেন। কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি এই প্রদেশে বেশি ভোট পাবেন, তিনিই প্রদেশের ৪০ জন ইলেক্টরকে জিতে নেবেন। ইলেক্টোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮।
মাইনে এবং নেব্রাস্কা এই দু’টি প্রদেশ বাদে বাকি সব রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট যোগ করলে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ভোট পাবেন তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। সেই প্রার্থীর রানিং মেট হয়ে যাবেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট।
আগামী ১৩ ডিসেম্বর ইলেক্টরেরা সংশ্লিষ্ট প্রাদেশিক রাজধানীতে জড়ো হয়ে তাঁদের দলের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্ব শেষ করবেন।
ভোটদানের পদ্ধতি কী কী?
আমেরিকায় প্রতিটি প্রদেশে ভোটের পদ্ধতির নির্দিষ্ট বিধি রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই তা পরস্পরের থেকে আলাদা। মোটের ওপর ভোটারেরা তিনটি প্রাথমিক পদ্ধতির মাধ্যমে ভোট দেন—
১. হ্যান্ডমার্ক করা কাগজের ব্যালট:
প্রেসিডেন্ট ভোটে সবচেয়ে প্রচলিত এবং সহজ পদ্ধতি, প্রায় ৭০ শতাংশ কাগজের ব্যালট ব্যবহার করে এই পদ্ধতিতে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেন।
২. ব্যালট মার্কিং ডিভাইস (বিএমডি):
২৫ শতাংশেরও বেশি ভোটার এই কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ভোটদান পদ্ধতি ব্যবহার করেন ভোটারদের একটি স্ক্রিনে বিকল্প নির্বাচন করতে দেয় এবং তার পর তাঁদের পছন্দ নিশ্চিত করতে একটি কাগজের ব্যালট প্রিন্ট করা হয় এ ব্যবস্থায়। ‘হেল্প আমেরিকা ভোট অ্যাক্ট’ (হাভা) মেনে চালু করা এ পদ্ধতিতে বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ পদ্ধতিও রয়েছে।
৩. ডাইরেক্ট রেকর্ডিং ইলেক্ট্রনিক (ডিআরই):
এ বৈদ্যুতিন যন্ত্রনির্ভর পদ্ধতি অনেকটা ইভিএমের মতোই। কোনো কাগজ ছাড়া ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় জনতার রায় ‘মেমোরি’-বন্দি করা হয়। লুইজ়িয়ানা ও নেভাদায় চালু এ পদ্ধতিতে মোটের ওপর ৫ শতাংশ ভোটার আস্থাবান। কিন্তু গত ভোটে নেভাদায় এ পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে। তাই এ বার ভোটদানের হার কম হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভোটগণনা হয় কীভাবে?
হাতে-চিহ্নিত কাগজের ব্যালট এবং বিএমডি-তে দেওয়া ভোটগুলো সাধারণত ‘অপটিক্যাল স্ক্যানার’ ব্যবহার করে স্ক্যান করা হয়। এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফলাফল নথিভুক্ত করা যায়। এ প্রক্রিয়াটি একটি প্রাদেশিক-স্তরের নির্বাচন কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করেন। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে গণনার পাশাপাশি প্রয়োজনে হাতে ভোটগণনারও ব্যবস্থা রয়েছে।
এ ছাড়া আগাম ভোটের ক্ষেত্রে চালু ‘মেইল ইন ব্যালট’ ব্যবস্থায় দেওয়া ভোটের বৈধতা যাচাই এবং গণনার প্রক্রিয়াও রয়েছে কয়েকটি প্রদেশে।
প্রাদেশিক নির্বাচন কর্তৃপক্ষকে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে ফলাফল ফেডেরাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে হয়।
ইলেক্টোরাল ভোট সিনেটর, হাউস অফ রিপ্রেজ়েনটেটিস সদস্য গভর্নর বা এমন কেউ হন না। এ জন্য একেবারে আলাদা একটি ভোটার দলকে নির্বাচন করা হয়। এ’টি দুই ধাপে ঠিক হয়। প্রথম ধাপটি রজনৈতিক দলগুলির নিয়ন্ত্রণে। সাধারণ নির্বাচনের আগে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের পক্ষ থেকে তাদের মনোনীত ইলেকটোরাল ভোটারের তালিকা জমা দেওয়া হয়। যা ‘স্লেট’ নামে পরিচিত।
সাধারণ ভোটাররা এই স্লেট নির্বাচন করেন। অধিকাংশ প্রদেশের যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জয়ী হন, তাঁর দলের ‘স্লেট’টিই ইলেক্টোরাল ভোটার হিসেবে নির্বাচিত হয়।
কোন অঙ্গরাজ্যে কত ইলেক্টোরাল ভোট থাকবে, তা নির্ধারিত হয় সেখানে কতগুলি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট রয়েছে। প্রতিটি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের জন্য একটি করে ভোট এবং দু’জন সিনেটরের জন্য দু’টি ভোট বরাদ্দ থাকে।
এ বার ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫২টি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট রয়েছে। অন্যান্য সবগুলো প্রদেশের মতোই সেখানে রয়েছে ২টি সিনেট আসন। ফলে মোট ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৪।