শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
কাতারের সরকার বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করার জন্য সে দেশ থেকে একদল বিদেশি শ্রমিককে বিতাড়িত করেছে।
আর এই ঘটনা ঘটেছে যখন দেশটি নভেম্বর মাসে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন করছে।
গত ১৪ই অগাস্ট আল বান্দারি ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের দোহা অফিসের বাইরে অন্তত ৬০ জন অভিবাসী শ্রমিক সমাবেশ করেছিল।
জানা গেছে, এদের মধ্যে কাউকে কাউকে সাত মাস ধরে বেতন দেয়া হয়নি।
সে সময় বেশ ক’জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয় এবং ক’জনকে বহিষ্কার করা হয়। তবে তাদের সংখ্যা কত তা জানা যায়নি।
কিন্তু যেসব শ্রমিক প্রতিবাদ করেছিল তারা বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিশর এবং ফিলিপাইনের নাগরিক বলে জানা গেছে।
কাতারি সরকার বলছে, যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তারা সে দেশের “নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন” করেছে।
বিদেশি শ্রমিকদের বিক্ষোভের ছবি, যার ভিডিও অনলাইনে শেয়ার করা হয়েছে।
দু’হাজার দশ সালে কাতার চলতি বছরের বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে সারা দেশে স্টেডিয়াম এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। কিন্তু তখন থেকেই এসব নির্মাণের সাথে জড়িত অভিবাসী শ্রমিকদের সাথে কর্তৃপক্ষের আচরণ নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
আল বান্দারি ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ মূলত একটি নির্মাণ এবং প্রকৌশল কোম্পানি।
তবে বিক্ষোভরত এসব শ্রমিক বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে জড়িত ছিলেন কিনা তা জানা যায়নি এবং বিশ্বকাপ আয়োজক কমিটিও এনিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
বিবিসিকে দেয়া এক বিবৃতিতে কাতার সরকার নিশ্চিত করেছে যে দোহায় বিরল বিক্ষোভে অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন কর্মীকে জননিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের জন্য আটক করা হয়েছে।
তবে এটা বোঝা যাচ্ছে যে “যারা শান্তি বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে” তাদের মধ্য থেকে একটি ছোট দল বহিষ্কারের সম্মুখীন হয়েছে, এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো জানাচ্ছে যে এদের মধ্যে কাউকে কাউকে ইতোমধ্যে কাতার থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
কাতারে বিশ্বকাপের বিজ্ঞাপনে ফুটবলার লুইস সুয়ারেজ।
তবে কাতারি সরকার বলেছে যে ক্ষতিগ্রস্ত সব শ্রমিকের বকেয়া বেতন ও অন্যান্য পাওনা মিটিয়ে দেয়া হবে।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা না দেয়ার জন্য আল বান্দারি গ্রুপের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই তদন্ত চলছিল। এবং দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি করার সময়সীমা মানতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য এই কোম্পানির বিরুদ্ধে আরও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
শ্রমিকদের প্রতি এই আচরণের বিষয়টি তুলে ধরেছে শ্রম অধিকার বিষয়ক মানবাধিকার সংস্থা ইকুইডেম।
এর প্রধান মোস্তফা কাদরি বিবিসির কাছে প্রশ্ন তুলেছেন, “আমরা সবাই কি কাতার এবং ফিফা দ্বারা প্রতারিত হয়েছি?”
তিনি বেশ ক’জন শ্রমিকের সাথে যোগাযোগ করেছেন বলে জানান, এবং বলেন যে কিছু পুলিশ কর্মকর্তা বিক্ষোভকারীদের বলেছেন তারা যদি গরমের মধ্যে ধর্মঘট করতে পারে, তাহলে তারা এয়ারকন্ডিশন ছাড়াই ঘুমাতে পারে।
“আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে কতটা মরিয়া হলে এসব শ্রমিক ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে প্রতিবাদ করতে পারেন? তারা রাজনীতি করছেন না, তারা কেবল তাদের শ্রমের ন্যায্য মজুরি চাইছেন,” বলছেন মি. কাদরি।
চলতি বছরের শুরুর দিকে বিবিসির আরবি বিভাগ একটি অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাতে অভিযোগ করা হয়েছিল যে প্রচণ্ড গরমে (হিট স্ট্রোকে) মারা যাওয়া অভিবাসী শ্রমিকদের সংখ্যা কাতারি কর্তৃপক্ষ কমিয়ে দেখাচ্ছে।
কাতারে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কাজ করতে হয় বিদেশি শ্রমিকদের।
এবছরের আগের দিকে, বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা “মানবাধিকার লঙ্ঘনের” শিকার অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য কমপক্ষে ৪৪০ মিলিয়ন ডলারের একটি ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছে।
কাতার বিশ্বকাপ আয়োজক কমিটির একজন মুখপাত্র আল বান্দারি গ্রুপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। এনিয়ে আল বান্দারি গ্রুপকে মন্তব্য করতে বলা হলে তারাও সাড়া দেয়নি। তবে কাতার সরকার বলেছে, যে কাতারের ৯৬% কর্মী একটি মজুরি সুরক্ষা ব্যবস্থার আওতাধীন। এতে নিয়োগকর্তারা তাদের নির্ধারিত তারিখের সাত দিনের মধ্যে কাতারি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সমস্ত মজুরি পরিশোধ করতে বাধ্য। এবং এই ব্যবস্থার ফাঁক-ফোকরগুলো এখন চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
কাতারে প্রচণ্ড গরমে যেভাবে মারা যাচ্ছে অভিবাসী শ্রমিকরা
-বিবিসি বাংলা