-কফিলউদ্দিন ভূইয়া
এখন কবিরা বর্ষার ছবি আঁকে
বর্ষার আদি-আসল রূপ না দেখে
তাদের শখের হিজল কদম ও গ্রামের বাঁকে
আজ পড়ে না কোথাও তেমন একটা চোখে।
শহুরে কবিদের ছবিতে সেই আগের ধরা বাঁধা বর্ণনা
এসব দৃশ্য আজ একালের বর্ষার সাথে মেলে না
তারা দেখেনা আজ চারিদিকে বর্ষার টইটুম্বুর পানি,
তলিয়ে যেতে দেখেনা বিধাব শুকুরির মার জীর্ণ বাচারিখানি।
উঠোনে কোমর জল বাঁশের মাঁচায় তার কষ্টের রাত্রিযাপন।
ওদিকে ঘরের চালা ভেদ করে সারারাত বৃষ্টির অঝোর বর্ষণ
ক্ষুধার কষ্টে ভিঁজে ভিঁজে সারাবাত তার কাটত ক্যামন!
এখন কবিরা দেখেনা দরিদ্র মানুষের কষ্টের ধারণ
এ বড়ি থেকে ও বাড়ি যেতে নৌকা হতো বাহন
যার নৌকা নাই, কলাগাছের একটি বেলাও নাই
তার দুর্দশা কেমন!
অনেকেই জানেনা এখন, বর্ষার সেই নির্মম কঠিন দিনে
অভাবী মানুষেরা ভাত মাগত ছোট বড় গেরস্তের অঙ্গনে।
কেউ কেউ কিছু খুদ-খেসারী তুলে দিত তাদের হাতে,
তাই খেয়ে গরীবেরা রাত কাটাত দিন বদলের প্রার্থনাতে।
সেকালে বাংলার মধ্যাঞ্চল ঢাকা জেলা ও
তার আশপাশ এলাকায়
আষাঢ়ে এসে আশ্বিনেও সরতে চাইতোনা
এই এলাকার দোঁআশ মাটির মায়ায়।
এখন দেখেনা কেউ বাড়ির পাশে ধুরন্দর
ডাহুকির ডুব-সাতারু চতুরছানা,
সাঁতার জলে ডুবিয়ে ধরতে না পারায়
গ্রাম্য দুষ্ট বালকের মনোযন্ত্রণা।
এখন জানে না কেউ দুরন্ত কিশোর কলাগাছের ভেলায়
বিলের অগাধ জলে
কেমনে কুড়াত শাপলা শালুক
থৈ থৈ পানির সেই বর্ষাকালে।
এখন মিশুরাও জানেনা সেই বর্ষাকালে
ভাড়া করা কেরায়া নৌকায়
মামাবাড়ি যাবার কালে দুষ্টুমি আর
দুরন্তপণার কি যে ছিল মওকা।
বর্ষার সেই অতীত স্মৃতি আজ অনেকের কাছে অজানা,
তার ভুবন বিজয়ী রূপ দেখে আজ কোন কবিরও মন জাগে না।