আমিরুল ইসলাম অল্ডাম, মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি:
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের যে অংশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো পূর্ণ সংস্কার করা হবে।
ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার বিষয়ে ইতিমধ্যেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। যারা যুদ্ধ না করেও মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়ে সুবিধা নিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে একাধিক মামলা আদালতে চলমান রয়েছে, সেগুলোর নিষ্পত্তি শেষে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক বৃহস্পতিবার মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, মুজিবনগরের ইতিহাস জাতির গর্ব, যা চিরকাল অম্লান থাকবে। ইতিহাস যেন কোনোভাবে বিকৃত না হয়, সেজন্য সকলকে সম্মিলিতভাবে এই দিবস উদযাপন করতে হবে। তিনি বলেন, সরকারই সাংবিধানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা জানান, মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে এবং মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের যে অংশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো পূর্ণ সংস্কার করা হবে।
এর আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক জাতীয় সংগীতের সুরে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পরের স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক সর্বপ্রথম পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।
এরপরে পর্যায়ক্রমে জামুকা, খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ হোসাইন শওকত, জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ, পুলিশ সুপার মাকসুদা আক্তার খানম, মেহেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা আনসার কমান্ড্যান্ডট, মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসন পৃথক পৃথকভাবে পুষ্প মাল্য অর্পণ করেন।
এ সময় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত জাহান চৌধুরী, খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হোসাইন শওকত, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক সিফাত মেহেনাজ, পুলিশ সুপার মাকসুদা আক্তার খানম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তরিকুল ইসলাম তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম, মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ মন্ডল প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। পরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক মুজিবনগর কমপ্লেক্স
পরিদর্শন করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে। মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয় এম এ জি ওসমানীকে। সেই সরকারের শপথ গ্রহণের স্থান বৈদ্যনাথতলাকে মুজিবনগর নামকরণ করা হয়। মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন ১২ জন আনসার সদস্য। এদের মধে বর্তমানে দুজন জীবিত রয়েছেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৫ আগস্ট শতাধিক তরুণ-যুবক মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে ঢুকে মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেন।
‘১৭ এপ্রিলের গার্ড অব অনার’ নামে ভাস্কর্যটিসহ অন্য ভাস্কর্যগুলোতেও ভাঙচুর চালানো হয়। মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ গতকাল বুধবার বলেন, এবার বড় পরিসরে মুজিবনগর দিবস পালন করা হচ্ছে না। মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সের ভাস্কর্যগুলো আবার নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।