দালালের খপ্পরে পড়ে রাশিয়ায় যুদ্ধে গিয়ে ‘প্রাণ হারালেন’ আশুগঞ্জের যুবক

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

রাশিয়ায় গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে চাকরির নামে রুশ বাহিনীর হয়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে অংশ নিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের মোহাম্মদ আকরাম হোসেন (২৫) নামের এক যুবক। বৃহস্পতিবার তার এক সহযোদ্ধার ফোনের মাধ্যমে পরিবারের কাছে আকরামের নিহত হওয়ার খবর পৌঁছায়। এতে তার বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে।
জানা যায়, ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শিখে সংসারে সচ্ছলতার আশায় রাশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন উপজেলার লালপুর হোসেনপুর গ্রামের মোরশেদ মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আকরাম। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আকরাম ছিল সবার বড়। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী দিনমজুর পিতা মোরশেদ মিয়া। স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোনোরকমে দিনাতিপাত করছিলেন তিনি। এরই মধ্যে মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন বাবা মোরশেদ। এ অবস্থায় ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শিখিয়ে আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা খরচ করে এগারো মাস আগে আকরামকে রাশিয়া পাঠানো হয়।
রাশিয়ায় যাওয়ার পর সেখানকার একটি চায়না কোম্পানিতে ওয়েল্ডার হিসেবে চাকরি করেন আকরাম। বেতন খুব বেশি না পেলেও তার উপার্জনে পরিবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে। ফলে মোরশেদ মিয়ার অসচ্ছল পরিবারটি সচ্ছলতার স্বপ্ন বুনতে থাকে। কিন্তু বিগত আড়াই মাস আগে আকরাম দালালের প্রলোভনে পড়ে রুশ সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে যুক্ত হন। রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। সেই ছবিও নিজের ফেসবুকে আপলোড করেছিলেন তিনি। কিন্তু ইউক্রেনের মিসাইল হামলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তার স্বপ্নের যাত্রা।
আকরামের বাবা মোরশেদ মিয়া বলেন, ‘দালাল বলেছিল তাকে পোল্যান্ড পাঠাবে। এই কথা বলে আমার কাছ থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা নিয়ে যায়। কিছু দিন পর বলে পোল্যান্ড না পাঠিয়ে রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। যাওয়ার কিছু দিন পর ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শুরু করে। কয়েকমাস পর থেকে আমার ছেলেকে খাবার দেয়া বন্ধ করে দেয়। কোম্পানির লোকজন প্রচুর মারধর করে। দালালরা বিগত আড়াই মাস আগে চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে আকরামকে যোগদান করান রুশ সেনাবাহিনীতে। শর্ত ছিল, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সম্মুখসারিতে থাকার। এতে পরিবারের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হলে আকরাম জানিয়েছিল তার আর ফিরে আসার কোনো উপায় নেই। এরই মধ্যে আকরাম আমাকে জানিয়েছিল তার রাশিয়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৪ লাখ টাকা জমা হয়েছে। আমি আমার ছেলেটার মরদেহ দেশে আনতে চাই। এজন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।’
আকরামের মা মোবিনা বেগম বলেন, ‘যুদ্ধ চলাকালে ছেলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হলেও গত ১৩ এপ্রিল থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাশিয়ায় অবস্থানরত পরিচিতজনরাও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল রাতে তার এক সহযোদ্ধা ফোন করে জানান, যুদ্ধে গিয়ে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর মিসাইল হামলায় আকরাম নিহত হয়েছে। আকরামের ইউনিটের কয়েকজন যোদ্ধাও ইউক্রেন বাহিনীর মিসাইল হামলায় মারা গেছেন। এরপর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।’ আকরামের পরিণতিও একই হয়েছে বলে তাদের ধারণা।
নিহতের লাশ দেশে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করছেন পরিবারের সদস্যরা।
আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফে মোহাম্মদ ছড়া বলেন, ‘স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। সেখান থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, মরদেহটি কোথায় আছে পরিবারের মাধ্যমে প্রথমে সেটি শনাক্ত করতে হয়। সেই অনুযায়ী কাগজপত্র সংগ্রহ করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদনের পর উনারা ব্যবস্থা নেবেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *