শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
× বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দল প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষে প্রতিনিধি চায়
× জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশির ভাগ দল পিআর চায়
× তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে গতকাল কমিশনের সমন্বিত নতুন প্রস্তাব
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানো এবং উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে একমত পোষণ করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলনসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে গতকালও দলগুলোর সাথে বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আলোচনা শেষে দলগুলোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে একটি সমন্বিত প্রস্তাবনা দিয়েছে কমিশন। এ নিয়ে আগামীকালের মধ্যে লিখিত সুপারিশ চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ ইস্যুতে দীর্ঘ আলোচনার পর জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশির ভাগ দলের সুপারিশ হচ্ছে উচ্চকক্ষে ভোটের আনুপাতিক হারে (পিআর) প্রতিনিধি নির্বাচিত হতে হবে। বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল নিম্নকক্ষের আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষে ১০০ জন প্রতিনিধি নির্বাচনের পক্ষে। এ অবস্থায় উচ্চকক্ষে কোন পদ্ধতিতে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন, গত সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে তা নির্ধারণের দায়িত্ব দেয়া হয় ঐকমত্য কমিশনকে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই কমিশনের সিদ্ধান্ত জানানোর কথা। এ অবস্থায় বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংস্কার ইস্যুতে চলতি সপ্তাহে প্রথমবারের মতো কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে সংযুক্ত) মনির হায়দার গত শনিবার জানান, আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা মিটিং চলবে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই কমিশন তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে বলে জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উচ্চ ও নিম্ন দুই কক্ষের নির্বাচনের প্রস্তাব বিএনপি থেকেই আসে। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল উভয়কক্ষেই ভোটের আনুপাতিক হারে (পিআর) নির্বাচন দাবি করে আসছিল। আর বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল বরাবরই প্রচলিত পদ্ধতিতেই নির্বাচন চায়। তবে বেশির ভাগ দল উচ্চকক্ষে পিআর দাবি করে আসছে। তাদের বক্তব্য, নিম্নকক্ষের আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠিত হলে তা শুধু নিম্নকক্ষের এক্সটেনশন হবে।
এর আগে গত ১৫ জুলাই কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৪তম দিনের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ঐকমত্য হয়নি। এ ব্যাপারে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছে, ভোটের সংখ্যানুপাতে যেন উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়। অন্যদিকে আসনের সংখ্যানুপাতেও উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব আছে। তিনি আরো বলেন, যেহেতু রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলো এ বিষয়ে একাধিক আলোচনার পরও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি, সেহেতু দল এবং জোটগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার কমিশনের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট বিষয়ে নিজেদের মধ্যে এবং পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আগামী সপ্তাহে একটি অবস্থানে আসার আশা করছে।
জানা যায়, কোনোভাবেই সংখ্যানুপাতিক আসন বণ্টন বা পিআর পদ্ধতি চায় না বিএনপি। সংসদের নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন চায় দলটি। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশির ভাগ দল পিআর ছাড়া উচ্চকক্ষ মানবে না বলে জানিয়েছে। এ অবস্থায় কমিশনকেই কঠিন সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে সংশোধিত প্রস্তাব কমিশনের : গতকাল রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৫তম বৈঠক শেষে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় নির্বাচন করার ব্যবস্থাটি বাতিল করে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আমরা সেখানে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছি। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়ে একটি সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ইতোমধ্যেই জুলাই সনদ প্রণয়নের লক্ষ্যে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ করছে। আজ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার মধ্যে দিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। আশা করছি, বাকি দিনগুলোর সংলাপে আরো কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে এবং জুলাই মাসের মধ্যেই একটি জাতীয় সনদ প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।’
আলী রীয়াজ বলেন, ‘আজ তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবস্থার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। সব দলই এই ব্যাপারে একমত, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের তিন উপ-অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে এবং সংশোধিত ভাষ্য হবে, ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিধান, যা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েছে। অর্থাৎ সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় নির্বাচন করার ব্যবস্থাটি ছিল সেটা বাতিল করে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আমরা সেখানে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আজ অধিকাংশ সময় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রক্রিয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান অর্থাৎ প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টাই আলোচিত হয়েছে। বিভিন্ন রকম প্রস্তাব ছিল। আমরা সর্বশেষ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব চেয়েছিলাম। সেই অনুযায়ী চারটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে আমরা প্রস্তাব পেয়েছি। তারা হলো- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বিএনপি, এনসিপি এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।’
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘চার দলের প্রস্তাবের ভিত্তিতে কমিশন সকালে একটি সংশোধিত প্রস্তাব হাজির করে। অধিকাংশ দল মনে করেছে, এই সংশোধিত প্রস্তাবের মধ্যে গত কয়েক দিনের আলোচনার বিষয়গুলো প্রতিফলিত হয়েছে। একইসাথে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল সেগুলোকে সমন্বিত করা সম্ভব হয়েছে। তারই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন রকম আলোচনার মধ্য দিয়ে কিছু সংশোধন সংযোজনের প্রশ্নটা উঠে এবং সেই লক্ষ্যেই সেই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতেই কমিশন দিনের মাঝামাঝি সময়ের বৈঠক করেছে। বৈঠক করে আরেকটি সংশোধিত সমন্বিত প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। এ প্রস্তাবটিতে বিস্তারিতভাবে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের পদ্ধতি বলা হয়েছে। এই প্রস্তাবের অধিকাংশ বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই প্রস্তাবের একটি লিখিত ভাষ্য তৈরি করা হয়েছে এবং বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে ওই লিখিত প্রস্তাব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের কাছে দেয়া হয়েছে। তারা ওই খসড়া প্রস্তাবটি নিয়ে দলগতভাবে আলোচনা করে সোমবার (আজ) আমাদের লিখিত মতামত জানাবেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আশা করছি, মঙ্গলবার (আগামীকাল) আমরা এ বিষয়ে আমাদের কমিশনের অবস্থান বা একমত হওয়ার জায়গাটা বলতে পারব।’
আলী রীয়াজ বলেন, ‘উচ্চকক্ষের বিষয়ে একাধিক দিন আলোচনা হয়েছে। উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা বিষয়ে কোনো ভিন্ন মত নেই। তবে কিভাবে হবে সে বিষয়ে দু’টি মত আছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর এই মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে সব দল কমিশনের কাছে এই দায়িত্ব অর্পণ করেছে। কমিশন ইতোমধ্যে এটা নিয়ে আলোচনা করেছে।’
দলের প্রধান হলে প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে না, এটা গণতন্ত্রবিরোধী : ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আজকের আলোচনায় দুটি বিষয় ছিল। একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে, আরেকটা হচ্ছে একজন ব্যক্তি এক সাথে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা (লিডার অব দ্য হাউজ) এবং দলীয় প্রধান হতে পারবেন কি না তা নিয়ে।
সালাহউদ্দিন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হলেও বিষয়টি এখনো আপিল বিভাগের রিভিউ পর্যায়ে বিচারাধীন। আমরা আশা করি, আদালতের রায়ের মাধ্যমেই এ ব্যবস্থা আবার চালু হবে।
তবে আদালতের রায়ে যদি ব্যবস্থা পুনর্বহাল না-ও হয়, সে ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ চাইলে আইন করে নতুনভাবে এ পদ্ধতি চালু করতে পারে বলেও জানান তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিচার বিভাগকে বিতর্কের বাইরে রাখতে হবে- এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মোটামুটি ঐকমত্য রয়েছে। সেই জায়গা থেকেই আজ কমিশন একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে, যা নিয়ে দলীয়ভাবে আলোচনা করে মঙ্গলবার মতামত জানাতে বলা হয়েছে।
একই সাথে এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, লিডার অব দ্য হাউজ এবং দলীয় প্রধান- এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে এক সাথে থাকতে পারবেন কি না এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতার দায়িত্ব এক সাথে পালন নিয়ে খুব একটা মতভেদ নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একই সাথে দলীয় প্রধানও হবেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আমাদের দল লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে এবং আগের আলোচনায়ও একই যুক্তি উপস্থাপন করেছে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের মতো দেশেও দলের প্রধান ব্যক্তিই প্রধানমন্ত্রী হন। তবে এটা নির্বাচন নয়, সংসদীয় দলের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হয়। সে ব্যক্তি যদি কোনো দলের প্রধান হন, তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় না। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় প্রধানের জন্য অপশন খোলা থাকা উচিত। কারণ, এটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার। পার্লামেন্টারি পার্টি যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। আবার তারা চাইলে অন্য কাউকেও মনোনয়ন দিতে পারে। কিন্তু সেই সুযোগটা রাখা জরুরি। তিনি আরো বলেন, শুধু দলীয় প্রধান হওয়ার কারণে কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না- এমন বিধান গণতন্ত্রবিরোধী হবে। এটা সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চার পরিপন্থী।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠনপ্রণালী নিয়ে দলগুলোর প্রস্তাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি ও অন্যান্য দল কয়েকটি বিকল্প পদ্ধতি দিয়েছে। কমিশন সেগুলো বিশ্লেষণ করে একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে। সেই খসড়ায় যদি কারো কোনো সংশোধনী বা পর্যবেক্ষণ থাকে, তারা তা জমা দিতে পারবেন। রাষ্ট্রপতিকে প্রক্রিয়ার নেতৃত্বে রাখার বিষয়ে বিএনপির প্রস্তাব এখন আর নেই বলেও তিনি জানান।
দলের প্রধান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পক্ষে নয় জামায়াত :
প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলের প্রধান- এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ একই ব্যক্তি বহাল রাখলে রাজনৈতিক ভারসাম্য থাকে না বলে মনে করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গতকাল সংলাপ শেষে দলের নায়েবে আমির ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, এতে সংসদ সদস্যরা মুখ খুলতে পারেন না, দলীয় নেতা-কর্মীরাও আতঙ্কে থাকেন। আমরা মনে করি, একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা হতে পারেন, তবে একই সাথে দলের প্রধান থাকা যাবে না। এতে রাজনৈতিক কাঠামোতে ভারসাম্য ফিরে আসবে, নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ তৈরি হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান গঠনে ভোট নয়, রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রক্রিয়াকেই একমাত্র গ্রহণযোগ্য পথ হিসেবে অভিহিত করে তাহের বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান গঠনে ৫ বা ৭ সদস্যের কমিটির (বাছাই) যে দুটি প্রস্তাব এসেছে, আমরা কোনোটিরই বিরোধিতা করছি না। আমাদের মূল কথা একটাই, কমিটির সদস্য মনোনয়ন হোক সর্বসম্মতভাবে, কোনোরকম ভোটাভুটির মাধ্যমে নয়। তিনি বলেন, ‘রাঙ্কড চয়েস ভোটিং বা ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিলে তা নেতিবাচক রাজনীতির পথ খুলে দেবে, যার ফলে অশুভ দরকষাকষি, হর্স ট্রেডিং হতে পারে এটা আমরা অতীতে দেখেছি। বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে তাহের বলেন, যদি কমিটিতে রাজনৈতিক ঐকমত্যে উপনীত হওয়া সম্ভব না হয়, তবে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করা যেতে পারে। তিনি বলেন, পাঁচ সদস্যের কমিটি হলে সরকার ও বিরোধী দল থেকে দু’জন করে এবং তৃতীয় বৃহত্তম দল থেকে একজন সদস্য রাখা যেতে পারে। সাত সদস্যের কমিটির ক্ষেত্রেও সরকার ও বিরোধী পক্ষ থেকে তিনজন করে এবং তৃতীয় দলের একজন সদস্য রাখা যেতে পারে। জামায়াতের এ নেতা বলেন, কমিটির সদস্য সংখ্যা যাই হোক, তা হতে হবে সর্বসম্মতিক্রমে। কাউকে বাদ দিয়ে, ভোটের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠের বলে সিদ্ধ
বিকল্প নেতৃত্ব গঠনে প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকা উচিত নয় : অন্য দিকে, একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান এবং সংসদ নেতা হওয়ায় দেশে বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই প্রথার অবসান চেয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে না ওঠার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, এক ব্যক্তি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ অলঙ্কৃত করে থাকেন। এতে দলীয় আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামোতেও প্রভাব ফেলে এবং দলীয় আনুগত্য বিচার বিভাগসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানেও প্রবেশ করে।
সংলাপ শেষে তিনি বলেন, একই ব্যক্তি যখন দলের প্রধান, সরকারের প্রধান এবং সংসদের নেতা হন, তখন দলে আর কাউকে নেতৃত্বের সুযোগ দেয়া হয় না। এমনকি অনেক নেতাকর্মী এমপি হওয়ার স্বপ্নও দেখতে পারেন না, কারণ দলের মনোনয়নও দেন সেই এক ব্যক্তি। এই প্রবণতা বন্ধ না হলে বিকল্প নেতৃত্ব গঠিত হবে। আমাদের প্রস্তাব, প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান এবং সংসদ নেতা- এই তিনটি পদে আলাদা ব্যক্তি থাকা উচিত। যদি কেউ প্রধানমন্ত্রী হন, তবে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব অন্য কাউকে দিতে হবে। তিনি যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘সেখানে প্রধানমন্ত্রীরা পরিবর্তন হন নিয়মিত, বিকল্প তৈরি হয়। কিন্তু আমাদের দেশে বলা হয়, ‘শেখ হাসিনার বিকল্প নেই’, ‘খালেদা জিয়ার বিকল্প নেই’, কিংবা এখন বলা হয়, ‘তারেক রহমান ছাড়া চলবে না’। এ সংস্কৃতি ভাঙতেই আমাদের এই প্রস্তাব।