ট্রাম্পকে ৩ মাস সময় দিলেন মাহাথির মোহাম্মদ

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার কঠোর বৈশ্বিক শুল্ক কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করার তিন মাস সময় দিচ্ছেন। একইসাথে তিনি মার্কিন নেতাকে ‘পুরানো বিশ্বে বাস করছেন’ বলে অভিযোগ করেন।
মাহাথির তার শততম জন্মদিনের দুই মাস আগে এএফপি’কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘ট্রাম্প দেখবেন যে- তার শুল্ক আমেরিকার ক্ষতি করছে এবং আমেরিকার জনগণ তার বিরুদ্ধে যাবে।’
তিনি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের স্টপ-স্টার্ট শুল্ক আরোপের ফলে এশিয়ার দেশগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার মধ্যে মালয়েশিয়াও রয়েছে। যদি দুই দেশ একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে জুলাই মাসে মালয়েশিয়া ২৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের মুখোমুখি হবে।
মাহাথির বলেছেন, ‘এটি আমেরিকার জন্য অনেক সমস্যার সৃষ্টি করবে, তাই আমি ট্রাম্পকে তিন মাস সময় দিচ্ছি।’ মাহাথির প্রায় দুই শতাব্দী ধরে মালয়েশিয়া শাসন করেছেন।
প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় তার অফিস থেকে সপ্তাহে পাঁচ দিনের কাজ করেও, প্রাণবন্ত এই ব্যক্তি আগের মতোই স্পষ্টবাদী।
মাহাথির বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প অযৌক্তিক। আমার মনে হয় না তিনি কী করছেন তা নিয়ে তিনি সাবধানে ভাবেন।’
‘অভিবাসন সংক্রান্ত তার নীতি এবং সরকারের ব্যয় কমানোর চেষ্টা, হাজার হাজার লোককে বরখাস্ত করা- এই সমস্ত জিনিস ভালো নয়।’
ট্রাম্পের মেগা নির্বাচনী স্লোগানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এটা আমেরিকাকে মহান করে তুলবে না’।
ট্রাম্পের কিছু পররাষ্ট্র নীতি- গ্রিনল্যান্ড দখল এবং পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ দখলের প্রস্তাব সম্পর্কে তার মতামত জানতে চাইলে মাহাথির বলেন, মার্কিন নেতা ‘একটি পুরানো পৃথিবীতে বাস করছেন’।

‘চীনকে থামাতে পারব না’
মাহাথির তার দীর্ঘ কর্মজীবন জুড়ে, ‘পূর্ব দিকে তাকান’ নীতির সমর্থক ছিলেন- পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভর না করে মালয়েশিয়ানদের এশিয়ায় সমাধান খুঁজে বের করার জন্য চাপ দিয়েছিলেন।
মার্কিন শুল্ক আরোপের আশঙ্কা থাকলেও, মাহাথির তার মন পরিবর্তন করেননি।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের যুদ্ধাভিযানিক বাণিজ্য নীতির প্রভাবে চীন অনেক পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিন-স্টপ সফরের অংশ হিসেবে মালয়েশিয়া সফর করেছেন, যেখানে চীনা নেতা দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
মাহাথির বলেন, ‘আপনি কেবল চীনকে থামাতে পারবেন না কারণ, এর ক্ষমতা পাশ্চাত্য দেশগুলোর মতোই।’
বিংশ শতাব্দীর শেষ ঔপনিবেশিক-পরবর্তী নেতাদের একজন মাহাথির ১০ জুলাই তার জন্মদিন উদযাপন করবেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যেটি কিছু সময় ধরে নিজেকে বিশ্বের প্রথম শক্তি হিসেবে প্রশংসা করে আসছে, তারা চীনের উন্নয়ন মেনে নিতে চায় না।’
এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ বলেন, মালয়েশিয়া ওয়াশিংটন এবং বেইজিং উভয়ের প্রতিই বন্ধুত্বপূর্ণ থাকার লক্ষ্য রাখে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চীনের সাথে ঝগড়া করতে চাই না, তবে আমেরিকার সাথেও না।’
‘মালয়েশিয়ার নীতি হলো সকল দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়া।’
মাহাথির বলেন, তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাধিকার কে, তা বিচার করার দায়িত্ব ‘অন্যদের’।
প্রবীণ এই নেতা স্বাস্থ্যগত সমস্যার সাথে লড়াই করছেন। সম্প্রতি তাকে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
গত বছর তিনি প্রায় তিন মাস হাসপাতালে কাটিয়েছিলেন।
যদিও মাহাথির আর ক্ষমতায় নেই, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বে তার ভঙ্গুর জোট ২০২০ সালে ভেঙে পড়ে।
মাহাথিরের মতামত এখনো দেশে এবং অঞ্চল জুড়ে যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে।

সূত্র : এএফপি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *