শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
আমরা ভারতের মতো কাউকে পুশ-ইন করি না, কূটনৈতিক সমাধানে বিশ্বাসী বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
উপদেষ্টা আজ সকালে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার রায়মঙ্গল নদী ও বয়েসিং খালের সংযোগস্থলে সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে “বয়েসিং ভাসমান বিওপি” এর উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ মন্তব্য করেন কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ভারত কর্তৃক বাংলাদেশী পরিচয়ে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পুশ-ইন সমস্যা প্রতিরোধে বাংলাদেশ কূটনৈতিক সমাধানে বিশ্বাসী। বাংলাদেশ সবসময় আন্তর্জাতিক আইন ও প্রটোকল অনুসরণ করে আসছে। আমরা ইতোমধ্যে এ সমস্যা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতকে চিঠি লিখেছি। আমাদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান এ সমস্যার সমাধানে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা ভারতকে জানিয়েছি বাংলাদেশী কেউ যদি অবৈধভাবে ভারতে থেকে থাকে, তবে তারা যেন যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রেরণ করে। আর বাংলাদেশে যদি অবৈধ ভারতীয় নাগরিক থেকে থাকে, তাদেরকে আমরা যথাযথ চ্যানেলের মাধ্যমে ভারতে ফেরত পাঠাবো। সেজন্য ভারতীয় পক্ষকে বলা হয়েছে, তারাও যেন পুশ-ইন না করে যথাযথ চ্যানেলে ফেরত পাঠায়। তিনি বলেন, গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে ভারত পুশ-ইনের চেষ্টা করেছে যা বিজিবি, আনসার এবং স্থানীয় জনগণের সহায়তায় প্রতিহত করা হয়েছে। তিনি বলেন, সীমান্ত এলাকায় সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকলে ও সহযোগিতা করলে ভারত পুশ ইন করতে পারবে না।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, ভারত গুজরাটে অবস্থিত একটি বাঙালি বস্তি ভেঙে দিয়েছে। সেখানে আমাদের দেশেরও কিছু রোহিঙ্গা গিয়েছিলো। ঐ বস্তি ভেঙে দেয়ার পরই মূলত পুশ-ইন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে পুশ-ইন করা ব্যক্তিদের মধ্যে ইউএনএইচসিআর এর কার্ডধারী কিছু রোহিঙ্গাও রয়েছে। আবার যারা ভারতীয় রোহিঙ্গা তাদেরও পুশ-ইন করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সেজন্য আমরা একটা প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছি।
ভারত যেহেতু ৩৭০ জনকে পুশ-ইন করেছে, বাংলাদেশেরও একইভাবে পুশ-ব্যাক করার ইচ্ছা আছে কিনা- এ সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, তারা যদি আমার দেশের দেশের নাগরিক হয়, তাহলে তো পুশব্যাক করার অধিকার আমাদের নাই। তিনি বলেন, আমাদের দেশে যারা অবৈধ ভারতীয় আছে, তাদের আমরা এভাবে পুশ-ব্যাক করবো না। আমরা তাদেরকে যথাযথ চ্যানেলে ফেরত পাঠাবো। কেননা, পুশ-ইন বা পুশ-ব্যাক কোনো আইনসম্মত পদ্ধতি নয়।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্তৃক পরিচালিত এই ভাসমান বিওপি একটি অপারেশনাল প্লাটফর্ম, যা জলপথে সীমান্ত এলাকায় টহল ও নজরদারি জোরদার করবে। তিনি বলেন, “বয়েসিং ভাসমান বিওপি” শুধুমাত্র একটি স্থাপনা নয় এটি একটি কৌশলগত নিরাপত্তা পদক্ষেপ, যা সীমান্ত এলাকায় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিজিবির অঙ্গীকারের প্রতিফলন। এই উদ্যোগ সীমান্তে নতুন নিরাপত্তা সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এবং কার্যকর বর্ডার ম্যানেজমেন্টে সহায়ক হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্তে কার্যকর জলভিত্তিক নজরদারি নিশ্চিত করতে বিজিবি’র অধীনে একটি বিশেষ “রিভারাইন বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন” গঠনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা ভবিষ্যতে সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। উপদেষ্টা বলেন, সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ জলাভূমি ও নদীঘেরা সীমান্ত এলাকাগুলোতে স্থলপথে নিয়মিত টহল ও নিরাপত্তা বজায় রাখা কঠিন। এই ভাসমান বিওপি চোরাচালান, মানবপাচার, বনজ সম্পদ লুণ্ঠন এবং সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে বিজিবিকে তাৎক্ষণিক এবং কার্যকর প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ভারত ৪,১৫৬ কিঃমিঃ সীমান্তের মধ্যে ১৮০ কিঃমিঃ নদীমাতৃক, যার মধ্যে প্রায় ৭৯ কিঃমিঃ এলাকা সুন্দরবনের অন্তর্গত। পূর্বেও দুইটি ভাসমান বিওপি একটি কাঁচিকাটায় অপর আরেকটি আঠারোবেকিতে স্থাপন করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় বয়েসিং-এ তৃতীয় ভাসমান বিওপি হিসেবে আজ উদ্বোধন করা হলো।
“বয়েসিং ভাসমান বিওপি” এর উদ্বোধনকালে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল মোঃ জিয়াউল হক, বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে উপদেষ্টা সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় অবস্থিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর নীলডুমুর ব্যাটালিয়ন পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি একটি বৃক্ষ রোপণ করেন এবং ব্যাটালিয়নের সদস্যদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন।