গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষ খাদ্য গুদামে হামলা চালিয়েছে, গুলি, নিহত ২

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজার কেন্দ্রীয় অঞ্চলের একটি খাদ্য গুদামে ‘ক্ষুধার্ত মানুষের ঢল’ হামলা চালিয়েছে এবং খাদ্য সরবরাহ লুট করেছে। এই ঘটনায় দু’জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বার বার জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবিক সংগঠন, মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন, বিভিন্ন দেশ হুঁশিয়ার করছে এ বিষয়ে। তারা বলছে, গাজায় খাদ্য শেষ। মানুষ বাঁচিয়ে রাখা যাচ্ছে না। সেই মানুষ যখন সামান্য খাদ্যের খবর পাচ্ছে, তখন তারা আইনের বেড়াজালকে ছিন্ন করে হামলে পড়ছে।
ইসরাইলের নৃশংসতায় গাজায় একটি জাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তারা যখন গাজায় ত্রাণ সরবরাহ পৌঁছানোর অনুমতি দিয়েছে, তখন যে পরিমাণ ত্রাণ সেখানে পৌঁছাচ্ছে তাকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এক চামচ বলে উল্লেখ করেছেন। বার বার বলা হচ্ছে, গাজা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। আসলে দ্বারপ্রান্তে না বলে এটাকে এখন দুর্ভিক্ষ বলাই উচিত। কারণ, সেখানে মানুষের খাবার নেই। কোনো জিনিসপত্র নেই। সামান্য যা আছে, তার দাম আকাশছোঁয়া।
বার্তা সংস্থা এএফপির ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, দেইর আল-বালাহ এলাকার আল-গাফারি গুদামে প্রচণ্ড ভিড় থেকে মানুষ ঢুকে পড়ে। গুলির শব্দের মধ্যে ময়দার বস্তা ও খাদ্যের প্যাকেট নিয়ে যায়। গুলির উৎস কোথা থেকে তা তখনই পরিষ্কার ছিল না। এক বিবৃতিতে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানায়, প্রায় তিন মাস ধরে চলা ইসরাইলি অবরোধ, যা গত সপ্তাহে কিছুটা শিথিল হয়েছে, তার ফলে গাজার মানবিক পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে’। সংস্থাটি জানিয়েছে, ওই গুদামে আগেভাগেই খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়েছিল বিতরণের জন্য। তারা আরও জানায়- গাজায় জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য সহায়তা বৃদ্ধি করা দরকার। এটাই একমাত্র উপায় যাতে মানুষ নিশ্চিত হতে পারে, তারা না খেয়ে মরবে না।
ডব্লিউএফপি বলেছে, আমরা বারবার সতর্ক করে দিয়েছিলাম পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ও ক্রমাবনতিশীল। ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা সীমিত করার ফলে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। ওদিকে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বুধবার জানিয়েছে, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ১২১টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, যেগুলোর মধ্যে ময়দা ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী ছিল। গত সপ্তাহে ইসরাইল সীমিত পরিমাণে সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দিতে শুরু করে।
একটি বিতর্কিত মার্কিন ও ইসরাইল-সমর্থিত সংস্থা ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (ডিএইচএফ) একটি বেসরকারি ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা হিসেবে গঠন করা হয়েছে। এটি মার্কিন নিরাপত্তা চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ব্যবহার করে এবং জাতিসংঘকে উপেক্ষা করে। একে জাতিসংঘ ‘অকার্যকর ও অনৈতিক’ বলেছে। মার্কিন ও ইসরাইলি সরকার বলেছে, দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় স্থাপন করা জিএইচএফের চারটি বিতরণ কেন্দ্র হামাসের কাছ থেকে ত্রাণ লুট হওয়া ঠেকাচ্ছে, যদিও যোদ্ধা গোষ্ঠী হামাস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে জিএইচএফের একটি বিতরণ কেন্দ্রে হামলার পর ৪৭ জন আহত হয়।
আরেকজন জাতিসংঘ কর্মকর্তা বুধবার সাংবাদিকদের জানান, হতাশাগ্রস্ত জনতা জাতিসংঘের ত্রাণবাহী ট্রাক থেকে সরাসরি পণ্য লুট করছে। দখল করে নেয়া ফিলিস্তিনি অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের মানবিক দপ্তরের প্রধান জোনাথন হুইটল জানান, বিশ্বস্ত মানবিক চ্যানেলের মাধ্যমে সমন্বিত ত্রাণ লুটপাট করছে- এমন কোনো প্রমাণ হামাসের বিরুদ্ধে পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রকৃত লুটপাট সংঘটিত করেছে অপরাধী চক্র, যাদের ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজার কারেম শালোম সীমান্ত এলাকায় কাজ করতে দিয়েছে।
জাতিসংঘ বলেছে, ইসরাইল ও হামাসের সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির সময় যেভাবে ব্যাপক পরিমাণে ত্রাণ ঢুকেছিল, সেরকম ব্যবস্থা নিলে খাদ্য লুটপাটের ঝুঁকি কমবে এবং গাজাজুড়ে তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত বিতরণ নেটওয়ার্ককে পুরোপুরি কাজে লাগানো যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *